ময়না একজন অল্প শিক্ষিত মহিলা, দুটি কন্যা সন্তানের জননী। নিজের ভাগ্য ফেরাতে ঢাকায় এসেছিল ১৯৯৫ সালে। প্রথমে কিছুদিন গার্মেন্টসে কাজ করে, কিন্তু এত পরিশ্রম করে সামান্য রোজগার ময়নার মনঃপুত হতো না। একদিন ময়নার পরিচয় হয় রহিমা খালার সাথে। রহিমা খালা ময়নাকে মোটা ইনকামের লোভ দেখিয়ে তার সাথে কাজ করার আহবান জানায়। উচ্চাভিলাষী ময়নাও রাজী হয়ে যায় রহিমা খালার কথায়।
রহিমা খালার বাসায়ই থাকতো সে, প্রতিদিন প্রচুর লোকের আগমন ঘটতো তার বাসায়। এদের মধ্য থেকে বেছে বেছে টাকাওয়ালা ক্লাইন্টদেরই ময়নার কাছে পাঠাতো রহিমা খালা। দিনে দিনে বেশ ভাল টাকার মালিক হয়ে যায় । গাজিপুরে একটা জমিও কিনে ফেলে। একসময় রহিমা খালা মারা যায়। ময়না রহিমা খালার অবৈধ ব্যবসা হাল ধরে।
ফরিদ গাজী ময়নার নিয়মিত ক্লাইন্ট ছিল , আদম ব্যাপারীর দালালী করে ফরিদ ভালই রোজগার করতো একসময়। একদিন ফরিদ ময়নাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, ময়নাও রাজী হয়ে যায়।
অবৈধ ব্যবসার কারনে ময়নার এলাকার পাতি মাস্তান, ছোটখাটো রাজনৈতিক নেতাদের সাথে খুবই সখ্যতা। এরা মাঝেমাঝেই ময়নার বাসায় অতিথি হয়ে আসে। নিশিদ্ধ ব্যবসার জগতে ময়নাভাবী নামে পরিচিত সে। তার মোবাইলে প্রচুর মেয়েদের নম্বর আছে, যখন যাকে প্রয়োজন তাকে ফোন করে ডেকে নেন। স্বামী ফরিদ অপদার্থ টাইপের মানুষ সেটা বিয়ের পরই বুঝতে পারে সে। একসময় এক আদম ব্যাপারীর দালালি করে ভালই পয়সা রোজকার করলেও এখন আয় রোজগার খুব বেশি নেই। কয়েক বছর ধরে আদম ব্যবসা হাল হকিকত ভাল নয়। তাই ফরিদের নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য ময়নাই একমাত্র ভরসা।
বাড়ির অন্য ফ্লাটের বাসিন্দাদের সাথে খুব বেশি একটা মেশে না ময়না ভাবী। তার বেশ কয়েকজন দালাল আছে এরাই ক্লাইট ধরে এনে দেয়। এরা কাকলী ব্রিজ, মহাখালী ফ্লাইওভারের নীচে দাঁড়িয়ে ক্লাইন্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। সবকিছু মিলে গেলে ময়নাভাবীকে ফোন দেয়। এছাড়া কয়েকটি ফেসবুক আইডি আছে সেখানেও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছে, অনেক ক্লাইন্ট সেই আইডি থেকেও নম্বর নিয়ে সরাসরি ফোন করে। তাছাড়া ময়না মাঝেমাঝে পুরানো ক্লাইন্টদের ফোন করে বাসায় নিমন্ত্রণ জানায়। এভাবেই রাজধানীর ভদ্র এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দিনের পর দিন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
ময়নাভাবীর দুটি মেয়ে, মুন্নি ও পূর্ণিমা। মুন্নি ক্লাশ সিক্স এ পড়ে, পূর্ণিমা থ্রিতে। জন্মের পর থেকেই এরা বাসার মধ্যে অসামাজিক ক্রিয়াকালাপ দেখতে দেখেতে বড় হচ্ছে। ফরিদ ইদানীং বাসায় খুব কমই আসে, মাসে এক দুইবার আসে টাকা নেওয়ার জন্য। টাকা না দিলে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করে,গায়ে হাত তোলে। ময়নাও কম যায় না গালিগালাজ এবং হাত তোলার দিক দিয়ে।দুজনেই এই ঝগড়া হাতাহাতি থেকে মারামারিতে পৌছায়। মেয়ে দুটো বুঝে গেছে তাদেরকে বেচে থাকতে হলে মায়ের পক্ষেই থাকতে হবে।
এভাবেই অসুস্থ পরিবেশেই বেড়ে উঠছে ময়নার দুটি মেয়ে। ওরাও একদিন হয়তো মায়ের দেখানো পথেই পা বাড়াবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৯