somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

ছাত্রদের সস্তা খাবারের গল্প

২৬ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানীং ছাত্রদের ৩৮ টাকার খাবার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আসলেইতো চাউলের কেজি যেখানে ৬৫/৭০ টাকা সেখানে ৩৮ টাকায় ভরপেট খাবার, ভাবা যায়? কিছুদিন আগে রাবির এক ছাত্রকে ক্যাম্পাসের গাছ থেকে আম চুরি করার অপরাধে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল। পরে জানা গেল ছেলেটি আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে বাধ্য হয়ে ক্ষুধার তাড়নায় ক্যাম্পাসের গাছের আম চুরি করে খেতো।

এমনি একটা ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটেছিল ২০০২-২০০৩ সালের দিকে । আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হলে সিট না পাওয়ায় ভার্সিটির পাশেই একটা সস্তা মেসে থাকতাম। মেসের বড়ভাইয়েরা খুবই আন্তরিক তাই মানিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। মেসের খাওয়া দাওয়ার সুবিধার্থে বারো জন সদস্য মিলে একজনকে ম্যানেজার নির্বাচন করতাম, তার কাছেই সবাই খাবারের টাকা জমা দিতো। ম্যানেজার প্রতিদিনের বাজারের লিস্ট করে পর্যায়ক্রমে সবার হাতে দিতো, সবাইকে এক একদিন করে বাজার করতে হতো। মাসিক মিটিংয়ে ম্যানেজার খরচের হিসাব দিতো, তাতে দেখা যেতো সকাল দুপুর এবং রাতের তিন বেলার খাবারের খরচ পড়তো ২৮-৩০ টাকা।

একসময় খেয়াল করলাম মেসের বারোজন মেম্বারের মধ্যে একজন কখনোই মেসের খাবার খায় না। এতে করে আমাদের সবার প্রতিদিনের খাবার খরচ এক থেকে দেড় টাকা বেড়ে যাচ্ছে। মাসিক মিটিংয়ে তাই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলো। আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র ডাবলু ভাই হান্নানকে(ছেলেটির নাম) ডেকে বললো
-তুমি মেসের খাবার খাচ্ছো না কেন?তোমার কারনে সবার খাবার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
হান্নান তখন কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো
-আমার আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে গত এক সপ্তাহ ধরে শুধুমাত্র শুকনো চিড়া পানি দিয়ে ভিজিয়ে খেয়ে কোন রকম বেচে আছি। আমার মনে হয় আর পড়াশুনা করা হবে না।

হান্নানের এক কথা শুনে সবারই খুব মায়া হল, সবাই চিন্তা করতে লাগলো কিভাবে তাকে সাহায্য করা যায়!

মেসের মালিক দেশের বাইরে থাকেন, মালিকের ভাতিজা মতিউর ভাই মেসটি পরিচালনা করতেন। মতিউর ভাইয়ের সাথে আমাদের বন্ধুর মত সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই মিলে মতিউর ভাইকে অনুরোধ করলাম হান্নানের কাছ থেকে ভাড়া না নেওয়ার জন্য। আমাদের সবার অনুরোধ তিনি ফেলতে পারলেন না। তার জন্য একটা ফ্রী সিটের ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম হান্নানের পেপার বিল, কারেন্ট বিল, বুয়ার খরচ বহন করবো। কিন্তু খাওয়ার খরচ কোথা থেকে আসবে?

আমাদের মেসের সবচেয়ে সিনিয়র ডাবলু ভাই সেটারও সমাধান করে দিলেন। মেসের পাশের বাড়ির এক ভাবি ডাবলু ভাইকে ওনার মেয়েকে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ডাবলুর ভাই হান্নানকে ভাবির সাথে পরিচয় করে দিয়ে বললেন
-এই ছেলেটা আপনার মেয়েকে পড়াবে বিনিময়ে কোন টাকা দিতে হবে না, শুধু তিনবেলা খাবার দেবেন। ভাবি ডাবলু ভাইয়ের প্রস্তাবে সানন্দে রাজী হয়ে গেলেন।

আমরা সবাই হলে উঠলেও হান্নান হলে সিট পেলেও কখনই হলে ওঠেনি, সেই মেসে থেকেই পড়াশুনা শেষ করেছিল। সবার একটু আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে ছেলেটা সেদিন পড়াশুনা শেষ করতে পেরেছিল।

আমরা যারা পাবলিক ভার্সিটিতে পড়েছি, জনগনের টাকায় অল্প খরচে খাবার খেয়েছি তাদের পক্ষ থেকে দেশের জনগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×