পারি , আমরাও পারি । একথা বলার অধিকার আমদেরও আছে , সাকিব-আল-হাসান নামের এক তরুণের হাতে ভর করে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতে এখন আমরা ঢুকে পড়েছি টেস্ট ক্রিকেটের এলিট গ্রুপে । ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তাদের হারানো দলগুলোর ভিড়ে বাংলাদেশও আছে , ভাবতেই মনে প্রাণে শিহরণ জাগছে । তাও আবার চারদিনে ম্যাচ শেষ, বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়া সময় বাদ দিলে যে তিনদিনের মত হয় !
ম্যাচের ৩য় দিনে অনেকেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন , আমার মনে হচ্ছিল ২৫০ রানের কাম টার্গেট হলে বাংলাদেশ পারবে । যখন এনামুলের স্পিনের বিষে কাটা পড়লেন বার্নাড নামক মাঠে জন্মদিন পালন করা উইন্ডিজ ইনিংসের সাবলিল ব্যাটসম্যানটি তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আজ কিছু একটা হবে । শেষ উইকেটের পতন নিশ্চিত করল বাংলাদেশের টার্গেট কত হচ্ছে , মনে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল ।
জঘন্য ব্যাটিং এর প্রদর্শনী আবার দেখতে হল । এমন পরিস্থিতে কিভাবে উইকেট বিলিয়ে দেয়া যায় তার একটা নোংরা প্রতিযোগীতায় নামলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা । আইসিএল না খেললেও যাদের কমিটমেন্ট নিয়ে আমার সন্দেহ হয় ।
আমি দলে কেন আছি ? আমার উপর যে দায়িত্ব তা আমাকে করতে হবে , এ উপলব্ধি যারা করতে পারেনা তারা
তারা কতটা প্রফেশনাল তা নিয়েও মনে প্রশ্ন জাগে । এসব ব্যাটসম্যান ক্রমাগত বাজে ব্যাটিং করে দলে টিকে আছে কিসের জোরে ? কই আকরাম,বুলবুল কিংবা নিকট অতীতের কাপালী,নাফিসকে এমন সুযোগ তো দেওয়া হয়নি ।
লজ্জা লাগে যখন ভাবি তিনি ৫০ তম টেস্ট খেলতে নামছেন আর আউট হচ্ছেন নির্বোধের মত । ধিক্কার বিসিবির কর্তাদের যারা প্রতিভার লালন করতে পারেননি ।
যখন স্কোর ৬৭/৪ তখন ক্ষোভে-অভিমানে টিভি বন্ধ করে দিয়েছিলাম , মনে হচ্ছিল আর পারবেনা বাংলাদেশ ।
কিন্তু সাকিব-রাকিবুলের উপর কিছুটা হলেও আস্থা ছিল , তারা অন্তত চেষ্টা করবে ; মনে হচ্ছিল রাজিন সালেহ কিংবা আফতাবের কথা । মাথায় জাতীয় পতাকা নিয়ে ব্যাটিং করতে আর কাউকে যে দেখিনি , দেখা হয়নি রাজিন এর ধিরস্থির ব্যাটিং প্রদর্শনী । অথবা অলক কাপালীর শৈল্পিক ব্যাটিং এর চিত্র । নানান ভাবনার মাঝে শব-ই-মিরাজের রাতে ইবাদতের মধ্যেও মন পড়েছিল সেন্ট জর্জে ।
সাকিবের ব্যাট দেখিয়ে দিল কিভাবে দায়িত্ব নিতে হয় দলপতিকে , বল হাতে এবং ব্যাট হাতে নিজের সিদ্ধান্ত প্রমানের চেষ্টা কিংবা তার চেয়েও বড় দেশের প্রতি মমত্ববোধ । সে যে ১৪ কোটি বাঙালির প্রতিনিধি , নিজের দেশকে প্রমাণের এ সুযোগ হাতছাড়া করলে কি চলে ? আমাদের অন্যতম পরিচয় যে ক্রিকেট , এই একটি ক্রীড়াবিশ্বে আমাদের অবস্থান সুসংহত করার হঠাৎ পাওয়া সুযোগ নষ্ট করা সাজে না । তা করেনি মাগুরার কৈশোরের ছাপ লেগে থাকা এ তরুণ ।
এ ১৪ কোটি বাঙালির একজন, যে স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেনি ; দেখেছে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির উন্মাদনা এবং তারও আগে যখন সবাই ফুটবল নিয়ে মেতে থাকত তখন ক্রিকেট নিয়ে তার মনের টান । যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের চরম সমর্থক , সবসময় দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে ভাবে তার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল সাকিব আর তার দলের প্রতি ।
হয়তো ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কেউ লেখাটি পড়বেনা , কিন্তু ব্লগের বন্ধুরা তো পড়বে ; তাতেই স্বার্থক হবে এ লেখা ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:৪৩