ছিয়াত্তরের মন্বন্তরঃ
১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির রাজত্বকালে বাংলার দুর্ভিক্ষটি ছিল বাংলার ইতিহাসে সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষগুলির মধ্যে একটি এবং বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল ১৭৭০ এবং তার পরবর্তী বছরগুলিতে ?
নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় এবং ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন আর সে সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন এবং অত্যাচার শুরু করে দেয়।ছসে বছর অত্যধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার গ্রাস থেকে কৃষক ফসল ঘরে তুলতে পারে নি। তদুপরি ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা এবং খাদ্যবাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের ফলে অবস্থার চরম অবনতি ঘটে।
অথচ ব্রিটিশরাজের কোম্পানি শাসকরা পুরো বিষয়টিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে দাবি করে। কিন্তু ভিন্ন সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে ১৭৬৮ সালে আদায়কৃত রাজস্ব দেড় কোটি রুপির চেয়ে ১৭৭১ সালের আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৫,২২,০০০ রুপি বেশি ছিল, অথচ এর আগের বছরেই ঘটে যায় দুর্ভিক্ষ। এভাবে কোম্পানি শাসনের সহযোগিতায় খাদ্যশস্যের বাজার থেকে মুনাফা লুট এবং অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কারণে জনমানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। পরিণতিতে মারাত্মক দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকাগুলি হয়ে পড়ে জনশূন্য। জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, প্রায় ১০ মিলিয়ন(১ কোটি) মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। কৃষি উৎপাদন আর রাজস্ব আদায় অনুরূপহারে কমে যায়। দেশে দেখা দেয় চরম বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ। কয়েক লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যান। এটাই ইতিহাসখ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
পঞ্চাশের মন্বন্তর
১৩৫০ বঙ্গাব্দ বা ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তাই পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে পরিচিত। ইংরেজ সরকারের কিছু বিতর্কিত নীতি এবং উদাসীনতার কারণে সেই দুর্ভিক্ষ ত্বরান্বিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বার্মা দখল করে নিলে বার্মা থেকে বাংলায় চাল আমদানী বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। অনুমান করা হয় এই দুর্ভিক্ষে বাংলায় প্রায় ৫০ লক্ষ লোক মারা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:০০