নাদের শাহ আফছার এক সময় ইরানের শাহ হিসেবে শাসন কর্তা ছিলেন এবং তিনি একই সাথে আফছারিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন ।নাদের শাহ দস্তগীর দূর্গনগরে আফছারের কেরেক্লু গোত্রে জন্মগ্রহন করেন।তার পিতা এমাম কুলি ছিলেন একজন গবাদিপশু পালক যিনি মাঝে মাঝে উষ্ট্রচালক এবং কোটম্যাকার হিসেবেও কাজ করতেন। নাদের শাহ যখন ছোট তখন তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে নাদের এবং তার মাতা উজবেক বা তুর্কী দ্বারা দাস হিসেবে কাজ শুরু করেন কিন্তু নাদের পালাতে সক্ষম হন। নাদের শাহ তারপর একটি সৈন্যবাহিনীতে যোগদান করেন ও পরবর্তীকালে একটি সময় নাদের শাহ সেনাবাহিনীর প্রধান হন। নাদের শাহ উপজাতীয় গোত্রের সর্দারের পৃষ্ঠপোষকতায় তার পদমর্যাদা বাড়তে শুরু করে ও তিনি ক্ষমতাশালী সামরিক ব্যক্তিত্ত্বে পরিনত হন। নাদের শাহ স্থানীয় গোত্রপ্রধান বাবা আলী বেগের দুই কন্যাকে বিয়ে করেন।
নাদের শাহ এর প্রখর সামরিক দক্ষতার কারনে কোন কোন ইতিহাসবিদ তাকে পারস্যের নেপোলিয়ন অথবা দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার হিসেবেও আক্ষ্যায়িত করেছেন। নাদের শাহ তুর্কীর আফছার উপজাতীর সদস্য ছিলেন ,যারা প্রথম শাহ ইসমাইলের সময় থেকেই সাফাভিদ রাষ্ট্রে সামরিক রসদ সরবরাহ করতেন।
হুতাকি আফগানদের দ্বারা বিদ্রোহ শুরু হলে ইরানে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তারা পারস্যের শাহ সুলতান হুসাইনকে সহজেই ক্ষমতাচুত্য করেন। উসমানীয় এবং রাশিয়া এই দুইমিলে পারস্যের বিভিন্ন অঞ্চল দখল করে নেন। ঠিক এরকম একটি পরিস্থিতিতেই নাদের শাহ ক্ষতায় আসা হয়। তিনি ক্ষমতায় আসার পর পারস্যের অঞ্চলগুলোকে পুনরায় একত্রিত করেন এবং সেখান থেকে দখলদারীদের উচ্ছেদ করেন। তিনি এতো ক্ষমতাবান হয়ে উঠেন যে ২০০ বছর ধরে পারস্য শাসন করা সাফাভিদ রাজবংশের শেষ শাসককে পদচুত্য করার পরিকল্পনাও করেন। ১৭৩৬ সালে সাফাবিধ রাজবংশের শাসককে ক্ষমতাচুত্য করে নিজেকে ইরানের শাহ হিসেবে ঘোষণা করেন।
তার অনেক সামরিক অভিযান তার সাম্রাজ্য বহুগণে বৃদ্ধি করে এবং চতুর্দিকে তার সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বর্তমান ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, ভারত, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, ওমান এবং পারস্য উপসাগরের অঞ্চলকে তার সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে নেন । কিন্তু তার সেনাবাহিনী পারস্যের অর্থনীতিতে ধ্বংস ডেকে আনে।
নাদের শাহ তার আদর্শ হিসেবে মধ্য এশিয়ার আরো দুইজন অন্যতম বিজেতা চেঙ্গিস খান এবং তৈমুর লংকে অনুসরন করেন। তিনি তাদের সামরিক ক্ষমতা, তাদের রাজত্ব পরিধির ধারা এবং পরবর্তীকালে তাদেরমত নিষ্ঠুরও হয়ে উঠেন। তার এই বিজয় তাকে মধ্যপ্রাচ্যের সার্বভৌম ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু ১৭৪৭ সালে তাকে হত্যা করার পরপরই তার সাম্রাজ্য ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে। নাদের শাহকে এশিয়ার ইতিহাসের সর্বশেষ মহান সামরিক বিজেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।তাকে উসমানীয় এবং মুঘল সাম্রাজ্যের মাঝেও ইরানের ক্ষমতা পূণ্য প্রতিষ্ঠার জন্য কৃতিত্ত্ব দেয়া হয়ে থাকে।
সূত্রঃ https://www.britannica.com/biography/Nadir-Shah
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬