মেডিকেল গভেষকদের মতে এ পযন্ত স্তন ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে সব থেকে বেশি এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা বা ঝুঁকি রয়েছে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এতোদিন এই ক্যান্সারের ব্যাপারে নারীদের সচেতন করার জোরটা ছিল বেশি, কিন্তু এখন পুরুষদেরকেও সচেতন করার জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কারন হিসেবে বিশেষজ্ঞদের মতে পুরুষদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। যদিও এখনো পুরুষদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার খুবই কম । এক হিসেবে দেখা গেছে যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর প্রায় ৪১ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় আর সেই তুলনায় মাত্র ৩০০ জন পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হন।
৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর পর পর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক্সরের মাধ্যমে নারীদের স্তনের অবস্থা পরীক্ষা করা। সাধারণত প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার এতো ছোট থাকে যে বাইরে থেকে সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। কিন্তু ম্যামোগ্রামের মাধ্যমে খুব ছোট থাকা অবস্থাতেই বা প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পরলে ক্যান্সার থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রচুর থাকে। আর এই পরীক্ষার জন্য মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে।বিআরসিএ অথবা ব্র্যাকা নামের একটি জিন আছে সবার শরীরে। কিন্তু এই জিনের কোনও একটিতে যখন ত্রুটি দেখা দেয় তখন সেটা ডিএনএর ক্ষতি করতে পারে এবং তার জের ধরে শরীরের কোষে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে।যুক্তরাজ্যে স্তন ক্যান্সারের যত রোগী আছেন তাদের প্রায় ৫ শতাংশের শরীরেই আছে এই ব্র্যাকার ত্রুটিপূর্ণ জিন। আর এই জিনটিকে নির্মূল করতে অপারেশনের মাধ্যমে স্তন কেটে ফেলে দেওয়া হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ম্যাসটেকটোমি।ব্রিটেনে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ ব্র্যাকা জিন আছে স্তন ক্যান্সারের যেসব রোগীর শরীরে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আর যাদের শরীরে এই ত্রুটি নেই তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনার সমান।প্রায় তিন হাজার রোগীর উপর এই গবেষণাটি চালিয়ে দেখা গেছে রেডিওথেরাপি কিম্বা ম্যাসটেকটোমি যে ধরনের চিকিৎসাই তারা নিয়ে থাকুক না কেনো তার ফলাফল একই দাঁড়ায়।বিশেষজ্ঞরা মতে এর অর্থ হলো স্তন কেটে ফেলে দেওয়ার মতো বড়ো রকমের এক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অল্প বয়সী নারীরা আসলে একটু সময় নিতে পারেন।বিআরসিএ বা ব্র্যাকার দুটো জিন আছে ব্র্যাকা এক এবং ব্র্যাকা দুই। চিকিৎসকরা বলছেন এই জিনের রূপান্তরের ফলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি চার থেকে আটগুণ বেড়ে যায়। যেসব নারীর উপর এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে তাদের ১২ শতাংশের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে তাদের শরীরে ব্র্যাকার রূপান্তর ঘটে সেখানে ত্রুটি দেখা দিয়েছিলো।চিকিৎসকদের গবেষণায় আরো দেখা যায় যেসব রোগীর শরীরে ব্র্যাকা ত্রুটি ছিলো এবং যাদের ছিলো না তারাও প্রায় একই সময়কাল পর্যন্ত বেঁচে ছিল।তবে গবেষকরা বলছেন নতুন করে দীর্ঘ মেয়াদী সময়ে যাতে ক্যান্সার হতে না পারে সেজন্যে রোগীদের শরীরে এই ম্যাসটেকটোমি উপকারী হতে পারে।
এই ব্র্যাকা জিনটির অতি সুপরিচিত একটি নাম বিখ্যাত হলিউড মুভির অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি । হলিউডের এই অভিনেত্রী যখন জানতে পারেন যে তার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৭ শতাংশ রয়েছে তখনই তিনি অপারেশন করে স্তন কেটে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের একটিই উপায় আর তা হল ম্যাস্টেকটোমি বা অপারেশন করে স্তন কেটে ফেলা। তবে এই গবেষণায় ক্যান্সার হওয়ার আগেই স্তন কেটে ফেলে দেওয়ার বিষয়ে নজর দেওয়া হয়নি।
এই ম্যাস্টেকটোমি নিয়ে বাংলাদেশে শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি এবং ইমেজিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার। অডিও কিলিপটি বিবিসি বাংলা
স্তনের কোন অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া অথবা কোন লাম্প দেখা যাওয়া।
স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন ।
স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা তরল পদার্থ বের হওয়া।
স্তনবৃন্তের আশেপাশে রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যাওয়া।
বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া।
স্তনের ভেতরে গোটা ওঠা বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
এগুলো হল স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ অথবা উপসর্গ।
তথ্যসূত্রঃ https://www.breastcancercare.org.uk/
এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা বিবিসি বাংলা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪