সামুরাই হল জাপানের প্রাক-শিল্পাঞ্চল যুগের সামরিক বাহিনীর সদস্য যা অনেকের কাছে জাপানী যোদ্ধা হিসেবেও পরিচিত। এর অন্য আরেকটা নাম আছে সেটা হল বুশি। জাপানী ক্রিয়াবাচক শব্দ সাবুরাই থেকে সামুরাই শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। এর অর্থ হচ্ছে কাউকে সেবা করা। ইদো শাসনামলে সামুরাই শব্দটির সর্বশেষ প্রয়োগ হয়েছিল। বিখ্যাত অনুবাদক উইলিয়াম স্কট উইলসনের মতে, ১০ম শতকে জাপানী কবিতার প্রাথমিক সংকলন গ্রন্থ কোকিন ওয়াকাশু তে প্রাচীন এবং আধুনিককালের সংমিশ্রণের গড়া জাপানী কবিতায় এর প্রথম উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। একজন সামুরাই অনেক ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করার অধিকারী ছিলেন। তার মধ্যে তাদের কাছে জনপ্রিয় অস্ত্র হিসেবে রয়েছে কাতানা নামীয় লম্বাটে ধরনের তলোয়ার। ডান হাতেই তারা অস্ত্র ধারণ করে থাকেন।প্রতিটা সামুরাই তারা নিজেদের কাছে দুইটি করে তলোয়ার রাখেন। শান্তিকালীন সময়ে কাতানা এবং ওয়াকিজাশি নামীয় ছোট ধরনের তলোয়ার বহন করেন। কিন্তু যুদ্ধের সময়ে তারা লম্বা তলোয়ার তাচি এবং ছোট তলোয়ার টান্তো রাখেন। প্রাচীন ইউরোপের নাইটদের তুলনায় তারা কম অস্ত্র বহন করে থাকেন আর এটা
তাদের অন্যতম একটা গুন।
তলোয়ার হল উপমহাদেশের এক ধরনের বাঁকা অসি যা আধুনিক বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে পাওয়া যায়।এক সময়এই উপমহাদেশে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তলোয়ার ছিল প্রধান যুদ্ধ অশ্র।তলোয়ার অন্যান্য বাঁকা অসি যেমন আরব সাইফ, ফার্সি শমসের, তুর্কি কিলিজ এবং আফগান পুলয়ার এর পাশাপাশি উদ্ভূত, এই সব বাঁকা অসিগুলো উদ্ভূত হয়েছে মধ্য এশিয়ার তুরস্কের উন্নত বাঁকা অসি থেকে।
একেকজন সামুরাই বিশ্বাস করেন যে তলোয়ারই তার আত্মাকে ধারন করে আছে,আর তাই তারা তলোয়ারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসেবে মনে করেন। তাদেরকে যথোপযুক্ত সম্মান না করলে তাদেরকে যে কারোর সাথেই যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি তলোয়ারই পরীক্ষা করার জন্য তৈরী করা হয়েছে। সেজন্যে তলোয়ার ধারক যে-কোন অপরাধীকে হত্যা করার মাধ্যমে তলোয়ারের ধারালো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যোদ্ধার করণীয় বা বুশিদোর নীতি অনুসরণ করে সামুরাই নিজ জীবন সচল রাখেন। প্রভুর প্রতি আনুগত্যবোধ, আত্মনির্ভরশীল, নিয়মানুবর্তিতা, নৈতিক আচরণ ইত্যাদির কারণে যুদ্ধক্ষেত্রেও সম্মানিত হয়ে থাকেন। যখন সামুরাই তার প্রভু বা শিক্ষককে হারান তখন তা দাইমিও নামে আখ্যায়িত করা হয় এবং তিনি রোনিন নামে পরিচিত হন। পরাজয় বা বুশিদো নীতি মেনে না চলার কারণে সামুরাই অসম্মানিত হলে তাকে অবশ্যই সেপ্পুকু নামের আনুষ্ঠানিক আত্মহত্যা করতে হয়। তাদের কাছে অসম্মানের চেয়ে মৃত্যুই অধিকতর শ্রেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সেপ্পুকু নামের আনুষ্ঠানিক আত্মহত্যায় শত্রুর হাতে ধৃত হবার পূর্বে তারা তাদের পেট কেটে ফেলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩০