somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাত্র ১১ বছর আগে ঘটেছিল এক ও এগারো

১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, মাত্র বছর ১১ আগের কথা। সে সময় আবির্ভাব ঘটেছিল কথিত ওয়ান ইলেভেন-এর। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একতরফা সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্ভূত এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনা নিয়ন্ত্রিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে এটিকে ওয়ান ইলেভেন হিসেবে নাম দেয়া হয়। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। দিনভরই চারদিকে ছিল নানা ধরনের গুজব ও গুঞ্জন। চারদিকের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ রকমের থমথমে। এমন অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে আওয়ামী লীগের তত্কালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং কাজী জাফর উল্যাহ ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল যোগ দেন কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে। কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার ডগলাস ফসকেট, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইনোওয়ে মাসাইয়েকি, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত ড. স্টিফান ফ্রোইন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রেনাটা ডেজালিয়েন।

বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত সেই বৈঠক শেষে অনেকটা হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তারা। কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসা থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি চলে যান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির সুধাসদনের বাসায়।আওয়ামী লীগ নেতারা বের হওয়ার আধাঘণ্টা পর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির তত্কালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে তারাও মুখ খোলেননি। সোজা চলে যান গুলশানের হাওয়া ভবনে। সেখানে তারা বৈঠক করেন দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তার আগে দুপুর পৌনে বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সঙ্গে তার বারিধারার বাসায় বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রধান দু'টি দলের বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দুপুর বারোটায় বৈঠক করেন আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে। এতে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পরপরই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন বঙ্গভবনে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে বিকেল সাড়ে চারটায় উপদেষ্টা পরিষদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। দুই-একজন ছাড়া উপদেষ্টাদের প্রায় সবাই বঙ্গভবনে গিয়ে বৈঠক বাতিলের খবরে ফিরে আসেন।বঙ্গভবনের বৈঠক শেষে বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাব, বিডিআরসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সেনাসদরে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ।

রাত সাড়ে আটটায় বঙ্গভবনে পুনরায় ডাকা হয় উপদেষ্টাদের। কোনো বৈঠক ছাড়াই উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টাদের অবহিত করা হয়। সেসময় উপদেষ্টাদের সবাইকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়। তারপর প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে উপদেষ্টারাও পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ডক্টর ফকরুদ্দিন আহমদকে। তিনি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন।এইসব নাটকীয় ঘটনা এবং টানটান উত্তেজনা-উদ্বেগের মধ্যেই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয় অভ্যন্তরীণ গোলযোগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন এবং বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে। একইসঙ্গে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সকল মহানগর এবং জেলা শহরে কারফিউ বলবত্ থাকার ঘোষণাও দেওয়া হয়।তারপর নানা উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার মধ্যে রাত সাড়ে এগারোটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ।

ভাষণে তিনি বলেন একইসঙ্গে দু'টি দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে ঘিরে চারদিকে নানান বিতর্ক শুরু হয়েছে।তাই তিনি এই অবস্থায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথকে সুগম করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাতে সরকারের তথ্য অধিদফতর থেকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে রাজনৈতিক সংবাদ এবং সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় টিভি চ্যানেলের খবর এবং সকল টকশো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×