দামবুল্লা গুহা মন্দির যা অনেকের কাছে আবার দামবুল্লা স্বর্ণমন্দির নামেও পরিচিত। এটি এই মন্দিটি শ্রীলঙ্কার মধ্যভাগে অবস্থিত। মন্দিরটি ১৯৯১ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে মর্যাদা পায় এবং তালিকাভূক্ত হয়। এটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো থেকে প্রায় ১৪৮ কি.মি. পূর্বে এবং ক্যান্ডি থেকে প্রায় ৭২ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত। মন্দিরটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় এবং সুষমভাবে সংরক্ষিত একটি বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্স। ১৬০ মি. উচু পাথরের টাওয়ারটি একটি পাথরের সমতল ভূমিতে অবস্থিত। এই মন্দির কমপ্লেক্সে মোট ৮০ টি তালিকাভুক্ত গুহা বিদ্যমান। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষনীয় জিনিস সংরক্ষিত আছে পাচটি গুহাতে, যাতে কিছু প্রতিমা এবং মূর্তি ও কিছু চিত্র বিদ্যমান। এই মন্দির কমপ্লেক্সে মোট ১৫৩ টি বুদ্ধ মূর্তি, ৩ টি শ্রীলঙ্কান রাজার মূর্তি এবং ৪টি দেব–দেবীর মূর্তি আছে। শেষের চারটি হল হিন্দু প্রতিমা, বিষ্ণু এবং গণেশের। সেসব ম্যুরাল কমপ্লেক্সের মোট ২,১০০ বর্গ মিঃ স্থান দখল করে রেখেছে। বুদ্ধের আগমণের পূর্বে প্রাগৈতিহাসিক যুগে শ্রীলঙ্কানরা এসব গুহায় বসবাস করতেন। ফলে কমপ্লেক্সের নিকটে ইব্বানকাটুয়া নামক স্থানে ২,৭০০ বছরের প্রাচীন মানুষের কঙ্কালও রাখা আছে।
এই মন্দির কমপ্লেক্সটি তৈরী হয় খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে। এই মন্দির কমপ্লেক্সের পাচটি গুহা বিশাল ঝুলন্ত পাথরের নিচে অবস্থিত। এই বিশাল পাথরটি কেটে গুহাগুলো তৈরী হয়, যাতে গুহার ভেতরে শুকনো থাকে। ১৯৩৮ সালে এই মন্দির কমপ্লেক্সটি সাজানো হয়েছে সময়াতনে এবং সমবিভক্ত খিলান ও সুশোভিত তৌরণ দ্বারা। গুহার ভেতরের ছাদের পাথর বিভিন্ন রঙিন ধর্ম সম্পর্কিত ছবি অঙ্কন দারা সজ্জিত। সেই ছবির মধ্যে বুদ্ধ বোধিসাত্তাভাস সহ অনেক দেব দেবীর ছবি আছে। দামবুল্লা গুহা মন্দির এখনও পূজা অর্চনা সংঘটিত হয় এবং এখনও শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে উত্তমভাবে সংরক্ষিত প্রাচীন একটা স্থাপনা। খ্রিস্টপূর্ব ২য় এবং ৩য় শতকে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সন্ন্যাসী মঠে পরিণত হয়। রাজা ভালাগাম্বাহু খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে এই গুহা সমষ্টিকে মন্দিরে রূপান্তর করার জন্য ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন। তারপর খ্রিস্টপূর্ব ১১শতক পর্যন্ত বিভিন্ন রাজা এর পর্যায়ক্রমে সমৃদ্ধি সাধন করেন। তারপর থেকে এটি একটি বিশাল মন্দিরে পরিণত হয় যা এখনও পযন্ত বিশাল মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা। রাজা নিসসাঙ্কা মাল্লা ১১৯০ সালে এই গুহা কমপ্লেক্সে ৭০ টি বৌদ্ধ মূর্তি সংযোজন করেন। ১৮ শতকে রাজা কান্দ্যান অনেক গুহা পুনরুদ্ধার করেন এবং রঙ করান।
প্রথম গুহাটিকে নাম দেবারাজা লিনা বা স্বর্গীয় রাজার গুহা এই গুহাটিকে কেন্দ্র করে প্রথম মন্দিরটি তৈরীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা গুহার শুরুতে অবস্থিত।
এই গুহাটির বেশিরভাগ স্থান দখল করে আছে একটি ১৪ মিঃ দৈর্ঘ্যের বুদ্ধ মূর্তি। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে এই মূর্তিটি অসংখ্যবার রঙ করা হয় এবং ধারনা করা হয় এটি শেষবারের মত রঙ করা হয় ২০ শতকে। এই মূর্তির পায়ে তার প্রিয় শীষ্য আনন্দ এবং মাথায় বিষ্ণুর ছবি আকা। এও বলা হয় তার স্বর্গীয় শক্তি দ্বারা এই গুহাটি তৈরী হয়।
বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় গুহাটিতে ১৬ টি দাঁড়ানো ও ৪০ টি বসানো বুদ্ধ, প্রভু সামান এবং বিষ্ণুর মূর্তি রয়েছে। যা প্রায় সাজানো থাকে উপাসনাকারীদের মালা দিয়ে এওবং সবশেষে রাজা ভাট্টাগামানী অভয়া, যার মূর্তি এই মন্দিরটিকে খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে একটি বিশেষ সম্মানে স্থানে আরোহণ করান। ১২ শতকে রাজা নিসশাঙ্কা মাল্লা এই গুহার ৫০ টি মূর্তিকে সোনা দিয়ে মোড়াতে বিশেষভাবে দায়িত্ব পালন করেন, যা মন্দিরের শুরুতে নির্দেশ করা আছে। তাই মহারাজা লিনার নামানুসারে এই গুহাটিকে মহারাজার গুহা নামেও ডাকা হয়।
তৃতীয় গুহা যার নাম মহা অলুট বিহার এটির ছাদ এবং দেওয়াল ক্যান্ডি স্টাইলের চিত্র দ্বারা সুসজ্জিত। এসব চিত্র আকা হয় ১৭৪৭ সাল থেকে১৭৮২সালের ভিতর রাজা কৃতি শ্রী রাজসিং এর শাসনামলে। যিনি বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৫০ টি বুদ্ধ মূর্তির পাশাপাশি এখানে রাজার মূর্তিও বিদ্যমান।
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৩