somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ত্রিপিটক হল পালি ভাষায় সংরক্ষিত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থের সংকলন

১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ত্রিপিটক হল পালি ভাষায় সংরক্ষিত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থের সংকলন। এটিই বিদ্যমান আদি বৌদ্ধ আনুশাসনিক ধর্মগ্রন্থাবলির মধ্যে প্রাচীনতম এবং সম্পূর্ণতম ত্রিপিটক উত্তর ভারতে রচিত হয়। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় সাড়ে চারশো বছর পর খ্রিস্টপূর্ব ২৯ অব্দে শ্রীলঙ্কায় চতুর্থ বৌদ্ধ সঙ্গীতি চলাকালীন লিপিবদ্ধ হওয়ার আগে এটি মুখে মুখে প্রচলিত ছিল।

ত্রিপিটক তিনটি সাধারণ শ্রেণীতে বিভক্ত। এগুলিকে বলা হয় পিটক অর্থাৎ, ঝুড়ি। কারণ হিসেবে জানা যায় তালপাতায় লেখা পাণ্ডুলিপিগুলি ঝুড়িতে রাখা হত। এই জন্যই পালি আনুশাসনিক ধর্মগ্রন্থাবলি তিপিটক সংস্কৃত ত্রিপিটক নামে পরিচিত হয়। এই তিনটি পিটক হলঃ
বিনয় পিটক ("শৃঙ্খলা ঝুড়ি"), এখানে ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণিদের নিয়মাবলি রয়েছে । সুত্ত পিটক,সূত্র/বচন পিটক, কথোপকথন। অধিকাংশই বুদ্ধের কথোপকথন বলে কথিত। কোনো কোনোটি বুদ্ধের কোনো শিষ্যের কথোপকথন।অভিধম্ম পিটক, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, অধিবিদ্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা।বিনয় এবং সুত্ত পিটক অন্যান্য আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্প্রদায়ের অনুরূপ। অভিধম্ম পিটক অবশ্য কঠোরভাবে থেরবাদী সংকলনের অন্তর্গত। অন্যান্য বৌদ্ধ সম্প্রদায়ে অভিধম্ম রচনার সংখ্যা নগন্য।

থেরবাদ বৌদ্ধধর্মে ত্রিপিটককে বুদ্ধবচন বা বুদ্ধের বাণী মনে করা হয়। যদিও ত্রিপিটক সম্পূর্ণত বুদ্ধের বাণী নয়। এতে বুদ্ধের শিষ্যদের উপদেশও সংকলিত হয়েছে ।ত্রিপিটকের প্রথাগত থেরবাদী বা মহাবিহারী ব্যাখ্যা পাওয়া যায় অত্থকথা নামে এক টীকা গ্রন্থমালায়। সেই গ্রন্থমালায় সমগ্র ত্রিপিটকের ব্যাখ্যা আছে। সেই টীকাগুলি সম্পাদনা করেছিলেন বুদ্ধঘোষ,খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৫ম শতাব্দী এবং অন্যান্য সন্ন্যাসীরা। সেই টীকার ভিত্তি ছিল অধুনালুপ্ত প্রাচীন কিছু গ্রন্থ। ত্রিপিটক এবং এর টীকাগুলির ব্যাখ্যা করে পরবর্তীকালে উপটীকা গ্রন্থমালা রচিত হয়েছিল। ত্রিপিটকের প্রথাগত থেরবাদী ব্যাখ্যার সারসংক্ষেপ রয়েছে বুদ্ধঘোষের বিশুদ্ধিমাগ্গ গ্রন্থে।

মায়ানমারের বুদ্ধ সাসন সঙ্গীতির হয়ে এক মুখপাত্র প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেন, ত্রিপিটকে নির্বাণের পথপ্রদর্শক সব কিছুই রয়েছে, টীকা এবং উপটীকাগুলিকে কোথাও কোথাও অনুমানমূলক কথা আছে তবে সেগুলি ত্রিপিটকের শিক্ষার প্রতি সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে খুব সুন্দর উপমা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ডে সরকারি বৌদ্ধধর্মের ব্যাখ্যা অনেকাংশে পাশ্চাত্য গবেষকরা গ্রহণ করেছেন ।

ত্রিপিটক দুই হাজার বছর ধরে লিখিত আকারে রক্ষিত হয়েছে। তবে তার আগে বৌদ্ধ প্রথা অনুসারে এটি মৌখিকভাবেই প্রচলিত ছিল ।তবে ত্রিপিটক মুখস্থ করে মনে রাখার প্রথা এখনও প্রচলিত আছে। বহুল পঠিত গ্রন্থগুলির মধ্যে একটি হল পরিত্তা। সাধারণ বৌদ্ধরাও অন্তত কয়েকটি গ্রন্থ মনে রাখে এবং সেগুলি তারা নিত্য পাঠ করেন। যদি পাঠক এর অর্থ বুঝে এটি করেন তবে এটিকে ধ্যানের একটি রূপ মনে করা হয়। সন্ন্যাসীদের একটু বেশি জেনে রাখতে হয় ।বিচিত্তসার নামে এক ব্রহ্মদেশীয় সন্ন্যাসী ষষ্ঠ বৌদ্ধ সঙ্গীতিতে সমগ্র ত্রিপিটক মুখস্থ করেছিলেন।

বৌদ্ধধর্মে ধর্মগ্রন্থগুলির সম্পর্ক প্রকৃতপক্ষে সাধারণ সন্ন্যাসী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যেভাবে রয়েছে, অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে তা বোঝানো কঠিন; ত্রিপিটকের অল্প কিছু অংশই সুপরিচিত, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। এও জানা যায় আনুশাসনিক ধর্মগ্রন্থ নয় এমন কিছু ধর্মগ্রন্থও অধিকতর জনপ্রিয়। তবে এর বিস্তারিত বিবরণ স্থান অনুসারে পৃথক হয়। রুপার্ট গেথিনের মতে, বৌদ্ধধর্মের সামগ্রিক ইতিহাসটিকেই প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলির প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

ত্রিপিটকের রচয়িতা সম্পর্কে গবেষকের মতামতকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ঃ
স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের রচনা
প্রাক-সম্প্রদায় বৌদ্ধধর্ম পর্যায়ের রচনা
অজ্ঞাবাদ
গবেষকরা বিভিন্ন মতবাদের স্বপক্ষে এবং বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্ত উত্থাপন করেছেন।

স্বয়ং বুদ্ধের রচনা – এই সংক্রান্ত মতামত
আদি বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে বিশারদ একাধিক গবেষকের মতে, ত্রিপিটকের (এবং এই গ্রন্থের প্রধান উপদেশগুলির) উপাদান সম্ভবত গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক রচিত। রিচার্ড গোম্বরিচ বলেছেন যে, বুদ্ধের প্রধান উপদেশগুলি (যেমন বিনয় পিটক ও সুত্ত পিটকে পাওয়া যায়) যুক্তিসঙ্গত ও যথাযথভাবে ব্যাখ্যাত। এগুলি সম্ভবত কোনো এক জন মহাপুরুষের রচনা এবং তিনি হলেন গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং। বুদ্ধের মৃত্যুর পর তার অনুগামীদের কোনো সমিতি তা রচনা করেনি।পিটার হার্ভেও তিপিটকের ‘অনেকাংশে’র প্রামাণ্যতা স্বীকার করেছেন। এ. কে. ওয়ার্ডার বলেছেন যে, এমন কোনো প্রমাণ নেই যে ত্রিপিটক বুদ্ধ বা তার সাক্ষাৎ শিষ্যদের পরিবর্তে আদি বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলি রচনা করেছিল। জে. ডব্লিউ. দে জং বলেছেন যে, আমরা আদিতম বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানি না একথা বলা ‘বকধার্মিকতা’র সমতুল। তার মতে, “বৌদ্ধধর্মের মৌলিক ধারণাগুলি আনুশাসনিক গ্রন্থাবলিতেই পাওয়া যায়। এগুলি তার দ্বারা খুব ভাল ভাবে ঘোষিত হয়েছে প্রচারিত হয়েছে এবং তার শিষ্যগণ কর্তৃক বিকাশলাভ করেছে। শেষে এগুলি নির্দিষ্ট সূত্রের আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ. ওয়েন বলেছেন যে ত্রিপিটকে যে ধর্মগ্রন্থগুলি সংকলিত হয়েছে সেগুলির উৎস বৌদ্ধধর্মের একবারে সূত্রপাতের সময়টি।

সম্ভবত এতে বুদ্ধের শিক্ষার সারাংশ আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো তার মুখের কথাগুলিও আছে। হাজিমে নাকামুরা লিখেছেন যে, ঐতিহাসিক বুদ্ধের রচনা হিসেবে কিছু পাওয়া না গেলেও কিছু উপদেশ বা শব্দ নিশ্চয়ই তার মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×