এবারের চালের দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। হাওর এলাকায় যে ধরণের পরিস্থিতির স্রৃষ্টি হয়েছিল তা অস্বাভাবিক। কেজি প্রতি প্রায় পাঁচ টাকা দাম বেড়েছে। দুই মাস হয়ে গেল দাম কমার কোন লক্ষণ নাই। প্রথম দিকে মিডিয়া , কিছু রাজনৈতিক দল (বাম পন্থী ) ও ব্লগারেরা এ নিয়ে কথা বলেছিল. এখন এমন অবস্থা যেন সবাই এটা মেনে নিয়েছে।
আমাদের দেশে এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য কোন গবেষণা হয়না , গবেষণা হলেও সেটা বিশেষজ্ঞ মহলে থেকে যায়। যাদের উদ্ধারের জন্য গবেষণা করা হয় তাদের কাছে এর ছায়াও পৌছুয় না। ছয় সাত বছর পরে সে গবেষক কে দেখা যায় কোনো পশ্চিমা দেশের কোন এক স্বনামধন্য বিশ্ব বিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে. তার পাচ্ বছর পরে খবরের কাগজে এও আসতে পারে, কোন এক বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্যক্তি গবেষণার সাফল্য স্বরূপ সেই পশ্চিমা দেশের সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছেন. এ নিয়ে ফেসবুকে , ব্লগে বেশ শোরগোল হয় কিছুদিন. কিন্তু সে মহান ব্যক্তিটি বাংলাদেশী বংশদ্ভুত থেকে যায়, বাংলাদেশী হয়না। বরাবরই আমাদের দেশে এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। অন্যদিকে চোর, লম্পট, অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব আর স্বীকৃতি দেখতে দেখতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আসলেই কে ভালো আর কে খারাপ তা বোঝা দায়। রাজনৈতিক দলগুলো বটেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এমনকি মসজিদের কমিটিতেও এমন অসাধু লোকেরা সভাপতির আসনে বসে আছে। অথচ এ ধরণের লোকেরাই চাউলের মজুতদারি করে এদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের ভোগান্তির কারণ হচ্ছে।
চালের সংকট বেরে যাবার পরে এমন হুলুস্থুল বেধে গেল যে আগামীতে আর চাল পাওয়া যাবেনা। সাধারণ মানুষ যেন চাল কিনে মজুত করার প্রতিযোগিতায় নেমে গেল। কে কোথায় থেকে কত কম দামে চাল কিনতে পারে তা নিয়ে শুরু হল আলোচনা ।বাস্তবে এর থেকে লাভবান হলো মজুতদার ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্থ হল যারা দিন আনে দিন খায় , কিংবা অল্প উপার্জনের মানুষ। বাস্তবতা হল , যে সংকটের কথা বলা হচ্ছিল তা কৃত্রিম। বরাবরই এমন ঘটনা ঘটে যখন রমজান মাস আসে। এইবার সুযোগ পেয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অতি আলোচনায়। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ প্রশংসা যোগ্য। কিন্তু দীর্র্ঘ মেয়াদে যদি চালের দাম না কমে তাহলে এই ক্ষতিগ্রস্থদের সামান্য সময়ের সুবিধা কোনোই কাজে আসবেনা. অতীত ইতিহাস বলে চালের দাম একবার বাড়লে তা আর কমার নাম নেয় না। পরিবহন ভাড়া ব্র্র্দ্ধির ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে।
বেশি দামে চাল কিনতে গিয়ে কাউকে ফেরত আসতে হয়নি। কিন্তু দাম কম বললে চাল পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে মানুষ কি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে? মোটেও না। অভাবে ক্ষতিগ্রস্থরা কমিয়ে দিলেও অন্যরা একটুও কমায় নি. তার মানে চালের দাম বেড়ে গেলো, আবার দাম দিলে সঙ্কটের প্রশ্নই নেই। দাম কম দিলেই যত সমস্যা।
পরিচিত এক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলাম, তিনি ব্যবসার প্রয়োজনে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চীনাতে যান। আমার তখনো বাইরের বিশ্বের দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ব্যয় ব্র্র্দ্ধি নিয়ে খুব একটা ধারণা ছিলোনা. ভদ্রলোকের কাছে তার অভিজ্ঞতার কথা শুনে আমি রীতিমত থ. তিনি নাকি গত এক দশকে চায়নাতে যেয়ে পরিবহন ব্যয় এক টাকাও বাড়তে দেখেন নি. টাকা তো দূরের কথা, পয়সার অংকেও তিনি কোন ব্র্র্দ্ধি চোখে দেখেন নি। অন্যদিকে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বলুন আর পরিবহন ভাড়া ব্র্র্দ্ধি বলুন, বড়মাপের কোন কারণ ছাড়াই একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর মূল্য ব্র্র্দ্ধি হতেই হবে। আর একবার বাড়লে তা আর কমানোর কোন সম্ভাবনা নাই। বাড়িওয়ালার প্রতিবছর বাড়ি ভাড়া বাড়াতেই হবে. এ যেনো এক অলিখিত নিয়ম। আজ অবধি কোন সরকারই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। নিয়ণ্ত্রন করার সদিচ্ছা আছে কিনা তাতেও সন্দেহ আছে। কারন অনেক সময়তেই দলীয় লোকজনের এখানে বৃহৎ স্বার্র্থ থেকে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:১৯