somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজম চৌধুরীর এন্টার্কটিকা অভিযানের ডায়েরী।(১ম-পর্ব)

১২ ই জুন, ২০১১ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এই পিডিএফ করা ডায়েরীটা আজম চৌধুরীর কাছে অনুরোধ করে আনাই ইমেইলের মাধ্যমে।তিনি নিরবতাপ্রিয় মানুষ,তাই প্রথমেই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি,এই ডায়েরী পাঠানোর জন্য।আমি তার ডায়েরীর কোনরুপ পরিবর্তন ছাড়াই সম্পুর্ন যেভাবে তিনি লিখেছেন,সেভাবেই বঙ্গানুবাদ করলাম।যদি কোনরুপ ভূলত্রুটি হয় তার জন্য আমি তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

বরফে ঢাকা মহাদেশে অভিযান।
আজম চৌধুরী।
(৭ই জানুয়ারী,২০১১-১লা ফেব্রুয়ারী,২০১১)



এটা ছিলো আমার শৈশবকালের একটি স্বপ্ন যে,শুন্য তাপমাত্রা বা হিমাঙ্কের নীচে বন্যপ্রানী ও মানুষ কিভাবে বাস করে তা প্রত্যক্ষ করা।আর এন্টার্কটিকা মহাদেশের প্রতি আমার একটা আজন্ম আসক্তি ও দূর্নিবার কৌতুহল ছিলো।সেটা ছিলো এমন এক মহাদেশ যেখানে মানুষের স্থায়ী কোন বসবাস ছিলো না।

ভৌগলিকভাবে এন্টার্কটিকা পৃথিবীর ৫ম বৃহত্তম বরফে আচ্ছাদিত দেশ।এর আয়তন ১২ মিলিয়ন বর্গ কিঃমিঃ(৪.৫৯ মিলিয়ন বর্গমাইল)।পুরো মহাদেশের অধিকাংশই মোটা স্তরের বরফের হিমবাহে ঢাকা।শুধু অল্প পরিমান ভূমি আছে বরফমুক্ত এবং তা শুধু গ্রীস্মকালে।আর আছে কাচের মতো আলো ঝলমলে পর্বতচুড়া।

সুদীর্ঘ নয় মাসের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার পরে ২০১১ সালের জানুয়ারীর ১ম সপ্তাহে আমি সিডনী ছাড়ি বুয়েন্স আয়ার্সের উদ্দ্যেশে।নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড হয়ে আমি আর্জেন্টিনা যাই।১৪ঘন্টার ফ্লাইটে্ প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমি বুয়েন্স আয়ার্স নামি।সেখানের আবহাওয়া ছিলো উষ্ণ ও আদ্র,তাপমাত্রা ছিলো ৩৪ডিগ্রী ও আদ্রতা ৮০%।যা সিডনীর তাপমাত্রার সাথে পুরোই মিলে।প্রসঙ্গত বলে রাখি দক্ষিন গোলার্ধে ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারী মাসগুলো গ্রীস্মকাল।

এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে যেতে যেতে আমার বন্ধুবাতসল্য ট্যাক্সি-ড্রাইভার আমাকে আর্জেন্টিনার দর্শনীয় স্থানের এক গতিময় ধারা-বিবরনী দিলো।এবং তা দিলো সে তার ১০০% স্পেনিশ ভাষায়,আমাকে ঢোক গিলার সময়টুকু পর্যন্ত না দিয়ে।আর আমার কোন ধারনা ছিলোনা সে কি বলছে,কারন আমি স্পেনিশ ভাষায় সম্পুর্ন অজ্ঞ।পরবর্তীতে আমি জেনেছি দঃ আমেরিকার সর্বত্র খুব সীমিত সংখ্যক মানুষ ইংরেজী জানে।ভাগ্যক্রমে হোটেলের লবীতে একজনকে পাই যে ইংরেজী জানে ও বুঝে।

পরদিন আমি দঃ আমেরিকার দক্ষিনে যাত্রার জন্য আভ্যন্তরীন ফ্লাইটে উসুইয়া শহরে যাই।এটিই পৃথিবীর সর্বদক্ষিনে অবস্থিত মানুষের বাসযোগ্য সর্বশেষ শহর।আর সেখানেই আমি আমার দক্ষিন মেরু অভিযাত্রার বাকী যাত্রীদের পাই।

পরদিন সকালে নাস্তার পর আমরা সবাই হোটেলের লবীতে মিলিত হয় এবং অভিযাত্রার বাকী যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করি।এছাড়া আমরা যাত্রাপুর্ব প্রস্তুতি পর্বের জন্য তৈরী হয়।সমস্ত দিনটা আমরা উসুইয়া শহর ঘুরে কাটালাম।হোক ছোট তারপর ও উসুইয়া শহর ভারী মনোরম।শহরের আবহাওয়া ঠান্ডা ও বাতাস ঝড়োময়।এখন গ্রীস্মেই এখানকার তাপমাত্রা ৬ডিগ্রী,আর শীতে এখানকার তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের বহু নিচে।সমস্ত শহর তখন বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে।

সন্ধ্যায় আমাদের ট্যুর বাস আমাদের উসুইয়া বন্দরে নিয়ে যায়।সেখানে আমরা আমাদের জন্য অপেক্ষমান অভিযাত্রী জাহাজ এম এস এক্সপিডিসানকে দেখলাম।জাহাজের বোর্ডে আমরা আমাদের সমস্ত নিরাপত্তা প্রদর্শন মহড়া ও জরুরি উদ্ভাসন মহড়া চালালাম।

সন্ধ্যা ৬টায় আমরা উসুইয়া ছাড়লাম এবং ৭টায় ডিনার করলাম।আমাদের অভিযাত্রী জাহাজ একটি আধুনিক সুবিধাসম্বলিত অত্যাধুনিক জাহাজ।
পরবর্তী ১৮ দিন আমরা ক্রমাম্বয়ে ফকল্যান্ড দ্বীপ-তার রাজধানী পোর্ট স্ট্যানলী-কিং এডোয়ার্ড বে-স্ট্রমনেস বে-সাউথ জর্জিয়ার সলসব্যারি প্লেইন-প্রিয়ন দ্বীপ-গডথাল বে হারবার-মোল্টক হারবার-সেন্ট এন্ড্রজ-কুপার বে-সিঙ্গল কোভ-সাউথ অর্কনী দ্বীপ-এলিফ্যান্ট দ্বীপ ভ্রমন করি।

২৩ জানুয়রি আমরা ডিসেপসন আইল্যান্ডে পৌছি।ফকল্যান্ড দ্বীপেই আমরা প্রথম জায়ান্ট আলবাট্রাস ও হপার পেঙ্গুইনদের বাসা বাধতে দেখি।আমি কখনো ভাবি নাই যে আমি তাদের এতো কাছে যেতে পারবো,মাত্র ২ ফুট দূর হতে আমরা তাদের ফটো তুলি।

কিং এডোয়ার্ড বে তে আমরা ব্রিটিশ এন্টার্কটিকা রিসার্চ সেন্টার ও পুরোনো তিমি শিকার কেন্দ্র দেখি।আর সাউথ জর্জিয়ার সলসব্যারি প্লেইনে আমি নিজেকে ৬০০০০ জোঁড়া পেঙ্গুইনএর মাঝে নিজেকে আবিস্কার করি।আমাদের চারোপাশে আরো ছিলো ফার সীল ও এলিফ্যান্ট সীল।এটি ছিলো আমাদের জন্য শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা।

আমরা আগেই জানতাম যে,সেন্ট এন্ড্রুজ হলো কিং পেঙ্গুইনদের প্রধান আবাস,কিন্তু আমরা জানতাম না সেখানে আমাদের জন্য ১৫০০০০ কিং পেঙ্গুইন ডিম পাড়ার জন্য অপেক্ষায় আছে।সে দৃশ্য ভোলার নয়।তাদের কলরবে এই স্থানটি ছিলো আমাদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে গোলমেলে,সবচেয়ে দূর্গন্ধময় ও সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান।যদিও আমাদের তাদের ১৫ ফুট দুরত্বে থাকার কথা,কিন্তু তারাই কৌতুহলী হয়ে আমাদের কাছে এগিয়ে আসছিলো।আমরা যখনই তাদের ছবি তুলছিলাম,তারা এসে আমাদের ক্যামেরার লেন্সে ঠোঁকড় দিচ্ছিলো।অসাধারন এক অনুভূতি!(চলবে)।












আজম চৌধুরী।







আরো ছবি দেখার জন্য পুর্ববর্তী পোস্ট গুলো পড়ুন।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১১ দুপুর ২:৪৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×