প্রথম বিজ্ঞান সম্মত প্রস্তাব পেয়েছিলাম বাবার কাছ থেকে।ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের শর্তপূরণ করতে গিয়ে এই বিষ্ময় উপহার পেয়েছিলাম।সেই প্রথম বাবার পিছুনিলাম।প্রথম লঞ্চেচড়া,প্রথম শহরে আসা এক অপ্রত্যাশিত ব্যাপার ছিল।এখানে কত গাড়ি,রিকশা,মানুষ……. স্টুডিও বড়ুয়া।হাফহাতা শার্ট,কালোপ্যান্ট,স্যান্ডেল।অবশেষে সেই ইচ্ছাপূরণের পালাপর্ব।একটা ছোট গাঢ় অন্ধকার কক্ষ।হঠাৎই লাইট জ্বলে উঠল।সূর্যেরমতোন।পেছনের দেয়ালে আকাশ।কতবার যে ছুঁয়ে দেখলাম।অবাক হলাম।সত্যিকারের আকাশ!তারাগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে।বুকের ভেতর কি উত্তাপে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছিলাম,হাত-পা কেমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।টুলের ওপর আমাকে বসিয়ে দেয়া হলো।সামনে দুটো বড়োবড়ো বাতি মোহময় ভঙ্গিতে ধপ করে জ্বলে উঠল।ছোটছোট কালোরঙের ছাতাগুলো ভীষণ সুন্দর।ইস্ একটা যদি আমার হতো!তিনি হাতদিয়ে আমার মুখ,ঘাড়,জামা ঠিক করে দিলেন,বাবাও দিলেন।ভয় না পেতে বললেন।খেয়াল করলাম বাবা সরে গেলেন।তিনি কালোপর্দা সরিয়ে সামনে পেছনে কি যেন ঘোরাচ্ছেন।আমার আর্কিমিডিসের কথা মনে পড়ছে,টমাস আলভা এডিসন।একটু বকা ও দিলেন।ঘাড় বাঁকা করা যাবে না।হাসা যে কি কঠিন কাজ! ক্লিক! ক্লিক! খুব সুন্দর হয়েছে- এইবলে তিনি চলে গেলেন।ঠাস করে গাঢ় অন্ধকার নেমে এলো সেইকক্ষে।কেমন অন্ধ হয়ে গেলাম।কিন্তু চোখের বিস্ময় তখনো ফুরায়নি।আবার নীল অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে তারাগুলো।সেই অপেক্ষা যেন ফুরায়না।বাবা ও নেই, ছেলেও নেই।তবু কবেকার নক্ষত্রবয়সী উজ্জ্বলতা তার ছায়ার নিচে একটা পুরনো শহর খুঁড়ে বের করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা।এই ছবি বাবার।প্রত্যেক মিহিময় রাতের চাঁদসম অগ্রতারা।আমি যেন অন্ধকারে ঝুলে আছি, ডানার আড়ালে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০