somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসল ধর্ষণ, নকল ধর্ষণ !

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


...
এ লেখা কতজনার সাথে যে খাতির চুকাবে তা ভাবতেই শিউরে উঠছি ! কতজন কতকিছু ভাববে, বাঁকা চোখে দেখবে, হয়তো ঠোঁট বাড়িয়ে গালিও পাড়বে-তবুও বলতে হবে ।
...
ধর্ষণ ! নৈমিত্তিক জীবনে তীব্র গতি নিয়ে ক্রমশ মহাদূর্ঘটনার রূপ পরিগ্রহ করেছে । ধর্ষকের ভয়ে এবং ধর্ষিতার আহাজারীতে গোটা সমাজ ব্যবস্থা কম্পমান । নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে আমাদের মা-বোনদের সিংহভাগ । নিত্যাকার সংবাদমাধ্যমের উল্লেখযোগ্য অংশ দখলে নিয়েছে গণধর্ষণ, পালাধর্ষণ কিংবা একক ধর্ষণের সংবাদ । ধর্ষণ ও ধর্ষকদের যিনি ঘৃণা করেন না তিনি মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে ভুল করেছেন । ধর্ষকদের কাছে আপন কিংবা পর নেই । এদের লোলুপ থাবায় আক্রান্ত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হতে পারে যে কেউ । কাজেই ধর্ষকদের জন্য কঠিন ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং তাদেরকে সমাজবহির্ভূত হিসেবে চিহ্নিত করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী । অন্তত, পুরুষ হিসেবে আমাদের মা-বোন-স্ত্রী ও কন্যার সামনে মাথা উঁচু করে চলার প্রতিজ্ঞাবোধ থেকে ধর্ষকদেরকে এ সমাজ থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করার দাবীটিকে সার্বজনীনতার রূপ পরিগ্রহন করানো আবশ্যক ।
...
প্রশ্ন হচ্ছে, যতগুলো ধর্ষনের সংবাদ আমরা পাই এবং যে বিপুল পরিমান ধর্ষণকান্ডের ব্যাপার গোপন থাকে তার কতগুলোতে প্রকৃত ধর্ষণের আলামত মেলে । দু’জনার সম্মতি কিংবা প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরীক সম্পর্ককে নিশ্চয়ই ধর্ষণের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়ণ করা যৌক্তিক হবে না । অথচ এই সমাজে যতগুলো ধর্ষনের সংবাদ প্রকাশ্যে আসে তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যাতে দু’জনার প্রারম্ভিক সম্মতি ছিল । তারপরে জানাজানি কিংবা অস্বীকারের সূত্র গড়িয়েই সেসব ধর্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হয় । টইটম্বুর বিশ্বাসের ভরসায় যে নগ্নতার স্থিরচিত্র কমপ্যাক্ট ডিস্কে জায়গা পায় কিংবা ইন্টারনেটের পৃষ্ঠপোষকতায় সুমেরু থেকে কুমেরুতে পৌঁছে যায় তখন সেখানেই ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে অথচ পূর্বে আন্দাজ থাকে না আমি কি করতে যাচ্ছি আর কেন এসব করছি । বিপদ যখন নামবে তখন কি তাতে আমি একা ভূগব নাকি আমার পরিবারের সম্মানও নিলামে উঠবে-এটুকুতে যাদের পূর্ব আন্দাজ থাকে না তাদের সম্মান লুট হওয়া, সতীত্ব বিলীন হওয়া কি ব্রক্ষ্ম-বিষ্ণুও রোধ করতে পারবে ?
...
ধর্ষকের মূখ্য কৌশল হয়েছে প্রেমের ফাঁদ পাতা । শুরুতেই জানিয়ে নিচ্ছি, কোনভাবেই চিহ্নিত করার সাধ্য নাই যে প্রেমিকের কোনজন ধর্ষক আর কোনজন ধর্ষক নহেন । কাজেই সম্পর্কে জড়ানো নিশ্চয়ই অপরাধ নয় কিন্তু আত্মসম্মানের স্বার্থে যেটুকু দূরত্ব বজায় রাখা উচিত ততটুকু বজায় না রাখতে পারলে ইজ্জতের দেউলিয়াত্ব তো জুটবেই । যারা নাচতে নাচতে এসে সবকিছু বিলিয়ে যাওয়ার মানসিকতা দেখায় তারাই আবার সব খুইয়ে চিৎকার করে বেশি । এই সমাজের সর্বত্রই নারীরা অনুকম্পা বেশি পেয়েছে, পাওয়ার যৌক্তিকতাও আছে । কিন্তু ইজ্জত খোয়ানোর পর বহুমাত্রিক অনুকম্পা পেয়েই-বা লাভ কি ? যারা অনুকম্পা দেখায় ওদের মধ্যেই বহুজন সুযোগ সন্ধানী হায়েনা ঘাপটি মেরে থাকে । কাজেই সাবধানতার যেটুকু তা নিজেকেই অবলম্বন করতে হবে, সামলে চলতে হবে ।
....
কতিপয় উগ্রপন্থীর আনুষ্ঠানিক উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে যারা প্রকৃতপক্ষেই শ্লীলতাহানীর স্বীকার হয়ে তারা যথাযোগ্য বিচার পায়না । কেননা সত্য-মিথ্যার ব্যাপারটি এমন ধাঁধাঁলো হয়েছে যাতে কে প্রকৃত আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয় তা চিহ্নিত করাই দুরূহ ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে । কৃত্রিম ধর্ষিতাদের লম্ফজম্ফতে প্রকৃত ধর্ষিতাদের আহাজারী ন্যায়ের কর্ণ পর্যন্ত পৌঁছার ব্যাপারটি কঠিন হয়ে পড়েছে । যে কারণে ধর্ষকরা শাস্তি এড়িয়ে অনায়াসে আবার ধর্ষণের প্রস্তুতি নিতে পারছে । কে প্রেমিকা হয়ে আহ্বান পেয়েছিল আর কে ধর্ষক ছিল সেটা নির্ধারণ করা না গেলে ধর্ষণের রেশ টানা সত্যিকারেই অসম্ভের গন্ডিতে থাকবে ।
...
পরিবারিক বন্ধন যদি জোড়ালো না হয়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যদি নৈতিক না হয়, ধর্মীয় রীতি যদি প্রয়োগিক না হয় তবে সমাজ থেকে ধর্ষণের মত অনাচার রোধ করার সাধ্য আইন কিংবা শাস্তির কোন বিধান দ্বারাই ফলপ্রসু হবে না । সংস্কৃতির সুস্থ ধারার চর্চা নিশ্চিত করতে না পারলে এখানে নারী-পুরুষের পারস্পারিক বিশ্বাস-ভরসার সম্পর্ক নিশ্চিত করার অসাধ্য রইবে । এককভাবে ভাবে কারো দ্বারাই এ অনাচারের লাঘাম টানার সাধ্য নাই । সমাজস্থ বৃহদাংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধের আন্দোলন করতে হবে । উত্তম চরিত্রের চর্চা ছাড়া আর কোন পথই আমাদেরকে আলোর নির্দেশনা দিতে পারবে না । কাজেই, নিরাপদে থাকতে ততটুকু সাবধানে থাকতে হবে যতটুকু সাবধানতা অবলম্বন করলে অন্তত সতীত্বের দেউলিয়াত্ব না ঘটে । আমরা সেদিন ধর্ষকমুক্ত সমাজ গড়তে পারবো যেদিন পরিবার থেকে ধর্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আসবে এবং রাষ্ট্র যেদিন আর ধর্ষকের পৃষ্ঠপোষকে হবে না । সমাজও ধর্ষককে সুরক্ষা দিতে উঠেপড়ে লাগবে না । প্রশ্ন থেকেই যায়, সেদিনে সুদিন হয়ে কবে আসবে?

লেখকঃ কলামিস্ট রাজু আহমেদ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×