somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু পুরুষদের সিঁদুর পরাও, না হলে আরও মরবে’

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার মধ্যেই আলোচনায় এসেছে কয়েকটি গণকবর। নিপীড়ক রাষ্ট্রের দাবি, এসব গণকবর থেকে হিন্দুদের অন্তত ৪৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে রোহিঙ্গারা। যদিও রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে জীবন নিয়ে রাখাইনের মংডু থেকে বাংলাদেশে আসা বদিউল আলম (৬০) জানালেন তার এলাকার এমন কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা।

বদিউলের বাড়ি মংডুর বলিবাজার গ্রামে। গত ২৫ আগস্টের পর এখানেই মিয়ানমারের সেনারা চালিয়েছে নির্মম গণহত্যা। বলিবাজারের অদূরে তুলাতুলি গ্রামেও সমানে চলেছে রোহিঙ্গা নিধন। সেনারা প্রথম দিকে হিন্দু-মুসলিম কোনো বাছবিচার করেনি। গ্রামে ঢুকে সমানে গুলি চালিয়েছে।

তবে এক পর্যায়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে হিন্দু নারীদের আপত্তিতে। তারা সেনাদের জানায়, তারা হিন্দু। এরপরও কেন তাদের পুরুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে?

তখন সেনাদের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়, মানুষ দেখে কী হিন্দু-মুসলিম বোঝা যায়? আমরা এসেছি মুসলমানদের কঁচুকাটা করতে। বাঁচতে হলে তোমাদের পুরুষদের সিঁদুর পরে থাকতে বলো। না হলে আরও মরবে।

কক্সবাজারের বালুখালী সীমান্তে পরিবর্তন ডটকম’র কাছে বদিউল আলম বলিবাজার ও তুলাতুলি গণহত্যার এমন-ই বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা হিন্দু-মুসলিম একই গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে এসেছি। এখানে মগও থাকে। হঠাৎ করেই মিয়ানমারের সেনারা এসে গ্রামে মুসলিমদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালায়।’

মুসলিম হত্যা করতে গিয়ে হিন্দুরা কিভাবে সেনাবাহিনীর বুলেটের মুখে পড়লেন, তার বর্ণনায় বদিউল বলেন, ‘বলিবাজার ও তুলাতুলি মূলত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। হিন্দু আর মগরা সংখ্যায় কম। ঘটনার দিন মিলিটারি এসেই সমানে গুলি শুরু করে। মুসলমান আর হিন্দু তো দেখতে একই। এই ভুলটাই তারা করে বসে।’

তিনি বলেন, ‘মিলিটারির গুলিতে যখন বেশকিছু হিন্দু মারা গেল, হিন্দু নারীরা তখন কান্নাকাটি করে মিলিটারিকে বলল- তোমরা কেন আমাদের পুরুষদের মারছ? আমরা তো হিন্দু। তখন মিলিটারিরা বলে- আমরা মুসলমান মারতে এসেছি। তোমরা আর মুসলমান তো দেখতে একই। আমরা কি হিন্দু চিনি?’

বদিউলের ভাষ্যে, ‘পরে চেনার জন্য মিলিটারিরা হিন্দু পুরুষদের কপালে সিঁদুর পরার পরামর্শ দেয়। এরপর থেকে আমাদের গ্রামে মিলিটিারিরা শুধু মুসলমানদের মারল। হিন্দুদের বাঁচিয়ে রাখল।’

তিনি বলেন, ‘মিলিটারির পরামর্শে হিন্দুরা সিঁদুর নিয়ে মগদের সঙ্গে জঙ্গলে চলে যেতো। এরপর মিলিটারিরা এসে গ্রামে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গুলি করে হত্যা করত।’

বদিউল আলম বলেন, ‘শুধু তাই নয়, মিলিটারির বুলেট থেকে বাঁচতে যেসব মুসলিম পালিয়ে জঙ্গলে যেতো, তাদের মগ ও হিন্দুরা মিলে কঁচুকাটার মতো কুপিয়ে হত্যা করত।’

তিনি বলেন, ‘এটাই হচ্ছে মংডুর বলিবাজার ও তুলাতুলির আসল ঘটনা। আর এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অন্য গল্প ফাঁদছে বলে শুনেছি। আমরা নাকি হিন্দুদের হত্যা করেছি! বছরের পর বছর আমরা হিন্দুদের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও কখনও আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করিনি। আর নিজের জীবন নিয়েই যখন আমরা সন্দিহান, তখন নাকি হিন্দুদের গণহত্যা করেছি, এসবই সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্র।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হবার পর এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের সঙ্গে বসবাস করা ৩০ হাজার হিন্দুও বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তারাও এখানে এসে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেদের স্বজনদের হত্যার নির্মম বর্ণনা দিয়েছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অভিযানে ৫ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। যদিও মিয়ানমার সরকারের দাবি, নিহতের এই সংখ্যা ৪শ’।

দীর্ঘ এক মাস রাখাইনে মুসলিম গণহত্যা আর তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার পর হঠাৎ করেই মিয়ানমার সরকার হিন্দুদের ওপর গণহত্যার অভিযোগ আনে। প্রমাণ হিসবে তারা গত রোববার ও সোমবার সংঘাতপূর্ণ রাখাইনের মংডু শহরের কয়েকটি গ্রামের তিনটি গণকবরের কথা জানায়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করে, এসব গণকবর থেকে নারী-শিশুসহ ৪৫ জন হিন্দুর লাশ উদ্ধার করা হয়, যারা রোহিঙ্গাদের হত্যার শিকার হয়েছেন।

বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনতাকামী সংগঠন দ্য আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র দিকে আঙুল তোলে মিয়ানমার সরকার। তবে সরকারের এই দাবি নাকচ করে আরসা’র এক মুখপাত্র সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীকে হত্যায় মিয়ানমারের দাবি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।’

একই সঙ্গে গণকবরের লাশগুলো যে হিন্দু সম্প্রদায়ের, মিয়ানমার সরকারের কাছে তার প্রমাণ চেয়েছে ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গ কাউন্সিল।

সংগঠনটির প্রধান লা ইয়াও গত সোমবার এই প্রমাণ দাবি করার সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্টের ঘটনার স্বাধীন তদন্ত দাবি করেন।

তিনি সরকারের দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে, সেখানে এভাবে সরলীকরণ ঠিক হবে না। এটা এখনও অস্পষ্ট, হত্যাকাণ্ড মিয়ানমারের বাহিনী না জঙ্গিরা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন তদন্ত ছাড়া আমরা বলতে পারি না, আরসা এসব হিন্দু গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে।’

লা ইয়াও বলেন, ‘যে এলাকায় এই গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হিন্দু-মুসলিম সৌহাদ্যপূর্ণ সহাবস্থানে বসবাস করে আসছে। আরসা এসব হিন্দু গ্রামবাসীকে হত্যা করবে এমন কোনো কারণ আমাদের চোখে পড়ে না।’

তিনি এও বলেন, ‘হয়তো মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এদের মুসলিম ভেবে ভুল করে হত্যা করেছে। কারণ এখানে মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে সম্প্রীতি ছিল। সুতরাং তাদের মধ্যে সংঘাত বাধিয়ে বিশ্বব্যাপী হিন্দুদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা থেকে থাকতে পারে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেই কূটকৌশল থেকেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দোষারোপের পথ বেছে নিয়েছে।’

ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউিন্সলের প্রধান জাতিসংঘের তদন্তদলের নেতৃত্বে রাখাইনের সমস্ত গণহত্যার তদন্তও দাবি করেন।
সূত্রঃ পরিবর্তনডটকম
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×