বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল পুরস্কারের কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু ইগ নোবেলের কথা জানি কয়জন? এই পুরস্কারের একটা শর্ত আছে। শর্তটা হলো, আবিষ্কারগুলো দেখে বা সেগুলোর বর্ণনা শুনে যেন হাসি পায়। আগে হাসুন, তারপর ভাবুন তবে প্রথমে হাসির উদ্রেক করলেও পরবর্তীতে মানুষকে ঐ বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে উদ্ভুদ্ধ করে। এটাকে আপনি নোবেল পুরস্কারের প্যারোডিও বলতে পারেন। নোবেলের মতোই বিজ্ঞান, গবেষণা, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যের মতো নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ইগ নোবেল দেওয়া হয়। অ্যানালস অব ইমপ্রোবাবল রিসার্চ( Annals of Improbable Research) নামের এক পত্রিকা এর আয়োজক।
প্রতিবছর ১০টি বিভাগে ইগ নোবেল দেওয়া হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। গত ২২ সেপ্টেম্বর আয়োজিত ইগ নোবেলের ২৬তম আসর বসেছিল বরাবরের মতোই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যান্ডার্স থিয়েটারে। অনুষ্ঠানে বছরের সেরা অদ্ভূত গবেষণাগুলোকে সম্মান জানাতে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরাও এসেছিলেন। চলুন দেখি এবার কে কি মজার ঘটনা ঘটানোর জন্য পুরষ্কার পেলেনঃ-
এবারের প্রজননবিদ্যার পুরস্কার গেছে আহমেদ শফিক নামক এক গবেষকের ‘যৌণ জীবনে বিভিন্ন কাপড়ের যেমন পলিস্টার, সুতি অথবা উলের ট্রাউজার পরার ফলাফল কি ! আগে ইঁদুরে গবেষণা করেছেন , পরে মানুষে। Effect of Different Types of Textiles on Sexual Activity. Experimental study।
ও, হ্যা। এগুলো আবার সত্যিকার গবেষণাপত্র বা রিসার্চ পেপার কিন্তু।
ল্যাব পরীক্ষায় বায়ু দূষণের পরিমাণ কম দেখাতে জালিয়াতির কৌশল আবিষ্কারের জন্য রসায়নে এবছরের ‘ইগ নোবেল’ পেয়েছে জার্মানির বিখ্যাত মোটর নির্মাতা কোম্পানি ফক্সভাগেন।
ফক্সভাগেনের গাড়ি রাস্তায় চলার সময় বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইডসহ যে পরিমাণ ক্ষতিকর উপাদান ছাড়ে, তা যুক্তরাষ্ট্রে এসব উপাদানের অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি।
তবে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি জালিয়াতির কৌশল খাটায়, যাতে ল্যাব পরীক্ষার সময় গাড়িটি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর উপাদান না ছড়ায়। গাড়ির ভেতর একটি সফটওয়্যার বসিয়ে করা হতো এই কাজ।
ল্যাব পরীক্ষার সময় গাড়িগুলোকে যখন নিয়মিত রাস্তায় না চালিয়ে ঘূর্ণায়মান রাস্তায় একটি নির্ধারিত গতিতে চালানো হয় তখন গাড়ির কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের ওই সফটওয়্যার অবস্থাটি বিশ্লেষণ করে বাতাস ও জ্বালানির সমন্বয় করে দূষণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে।
২০১৫ সালে এই জালিয়াতি ধরা পড়ার পর বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করা প্রায় ১১ মিলিয়ন গাড়িতে ওই কৌশল বসানোর কথা স্বীকার করে ফক্সভাগেন কর্তৃপক্ষ।
জীববিজ্ঞানে এবার যৌথভাবে ইগ নোবেল পেয়েছেন দুজন, যার মধ্যে ছাগলের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে এই পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের এক ব্যক্তি।
আল্পসে বসবাসকারী টম টুইথস চলতি বছর টম থুইটেস নকল পা ব্যবহার করে ছাগলের সঙ্গে তিনদিন কাটিয়ে এই পুরস্কার জয় করেছেন। তিনি প্রায় বছরখানেক সময় চিন্তা-ভাবনা-গবেষণা করে ছাগলের মতো হাঁটার জন্য কৃত্রিম পা বানান। এরপর ছাগলের জীবনযাপন আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আল্পস পর্বতে এই প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটান। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে টম থুইটেস বলেন, “নকল পা লাগিয়ে ছাগলের পালের সঙ্গে আমিও ঘাস চিবুচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় কয়েকটি ছাগল আমার দিকে এগিয়ে আসে, শিং দিয়ে গুঁতোও মারে।” প্রথম দিকে আধুনিক জীবনের চাপ থেকে মুক্তির জন্য টম থুইটেস এই অভিনব কাজ শুরু করলেও ধীরে ধীরে এর সঙ্গে তার আবেগও যুক্ত হয়ে যায়। তার গবেষনার নাম How I Took a Holiday from Being Human।
ছাগলের সংগে বাস করে যদি নোবেল পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের দেশের ছাগুদের তো সবার আগে ইগ নোবেল দেওয়া দরকার।
ছাগল-মানব টম থুইটেস তার পুরস্কারটি যার সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন সেই চার্লস ফস্টারও যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ফস্টারও প্রাণীর দৃষ্টিতে জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এই ভদ্রলোক, স্যরি বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পশুপাখি যেমন badger, otter, deer, fox এবং পাখিদের সাথে বাস করে পশু হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার গবেষনার নাম Being a Beast!
এবার মনোবিজ্ঞানে ইগ নোবেল দেওয়া হয়েছে ১০০০ জন মিথ্যাবাদীর সত্যবাদিতার ওপর একটি গবেষণার জন্য। গবেষনার কি গালভরা নাম From Junior to Senior Pinocchio: A Cross-Sectional Lifespan Investigation of Deception। পিনাচিওকে চেনেন ? সেই যে কমিক ক্যারেক্টার, মিথ্যা বললেই তার নাক লম্বা হয়ে যেত।
চিকিতসাশাস্ত্রের পুরস্কারটা আরো অদ্ভূত। আপনার যদি শরীরের বামপাশে চুলকানী হয়, আপনি একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের ডানপাশে চুলকালে কি চুলকানি কমে ? আমার ধারণা, আমাদের দেশের অতি চুলকানীওয়ালা লোকদের জন্য এটা বেশ কাজে দেবে।
বাই দ্য ওয়ে, এটা কিন্তু প্লস ওয়ানে(PloS ONE) প্রকাশিত পেপার! আমার মতো পাবলিকের স্বপ্ন একটা প্লস ওয়ানে পাবলিশড আর্টিকেল। এখন কাজ করতেছি, ব্লগারবৃন্দ দোয়া রাইখেন উদীয়মান একজন পাবলিক হেলথ রিসার্চারের জন্য
এবার শান্তি পুরষ্কার। কেমনে ধরা খাবেন এবং ধরতে পারবেন মিথ্যা বুলশিট বা চাপাবাজি এই বিষয়ের উপর রিসার্চ করে পুরস্কার পেয়েছেন গর্ডন। আসলেই ব্যাপারটা ইম্পর্টেন্ট!
সাহিত্যের পুরস্কার শুনবেন ? এক লোকের ৩ খন্ডের আত্মজীবনী যার শখ হচ্ছে মৃত এবং জীবিত মাছি সংগ্রহ করা। আচ্ছা, মানুষের অনেক অদ্ভুত শখ থাকে। তাই বলে মাছি সংগ্রহ করা, তাও মরা মাছি তার উপর এই শখে সে কি মজা পাইছে এইটা নিয়া ৩ টা ইয়া মোটা বই লেখা! এই বই পড়লো কেডায় ?
আরেকটা অদ্ভূত পুরষ্কার ছিলো এবার। উপলদ্ধি,অনুভূতি বা পারসেপশন বিভাগে। দুই জাপানি বিজ্ঞানী গবেষনা করে দেখতে চেয়েছেন আপনি যখন উবু হয়ে দুই পায়ের মাঝখান দিয়ে কিছু দেখেন সেটার সাথে স্বাভাবিক ভাবে দেখার কোন পার্থক্য আছে কিনা!
এইখানে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মজাদার ২৫টা ইগ নোবেল বিজয় নিয়ে একটা ভিডিও দিলাম।
পুরো বিস্তারিত পড়তে পারবেন এখান থেকে।
কেমন লাগলো ? আপনি নিশ্চয়ই ছোটবেলায় বা এখনো অদ্ভুত কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছেন বা করেন। আপনার এসব ভাবনাগুলো আর লোকলজ্জ্বার ভয়ে আটকে না রেখে চালিয়ে যান, বলা যায়না নোবেল না পেলেও ইগ নোবেল জুটে যেতেও পারে আপনার কপালে!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৬