আজকাল ব্লগে আসা হয় কম, অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। ভেবেছিলাম খুব লেখালেখি করব, কিন্তু তাই কি হয়? আমি কর্মজীবি মহিলা, অফিস, বাসায় ফিরে রান্না বান্না, ছেলেমেয়ের হোম ওয়ার্ক, সামাজিকতা---এতকিছু সামলে সামু তে পড়ে থাকলে চলবে?--এই বুড়ো বয়সে সামুর ভক্ত হয়ে পড়ার জন্য মাঝেমধ্যে লজ্জা পাই! --আসলে আমার সেই ফেলে আসা বয়সটাতে এতো সৃজনশীল একটা জিনিস, মানে ব্লগের মতো কোন ব্যাপার ছিলো না, অথবা আমি এটা জানতামও না! বুয়েটে পড়াশোনা কালিন আমার কোন কম্পিউটার তো দুরের কথা, একটা টেবিল ফ্যান যোগার করতে হিমসিম খাবার মতো অব্স্থা ছিল। তারমধ্যে, আর্কিটেকচারের মতো ব্যয়বহূল একটা বিষয়, এই আজ ড্রাফটিং টেবিল কেনরে--কাল মডেল মেকিং পেপার কেনরে--অমুক, তমুক!
বাড়ীতে চিঠিতে আব্বার কাছে এসব জানাতে খারাপ লাগতো। ভাগ্যিস স্কলারশীপ টা ছিলো সরকারী ইউনিভার্সিটির, নইলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের ব্যয়বহূল প্রাইভেটে পড়ার কোন সুযোগই ছিলোনা! হয় ভর্তি পরীক্ষায় উৎরে যাও, নয় চুপচাপ ঘরে বসে মাকে কাজে সাহায্য কর এবং মফঃস্বলের কোন সরকারি কলেজে বি এস সি ভর্তি
হয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকো---
ভাগ্যের জোরে সেই নিভৃত মফঃস্বলের আমগাছে ছাওয়া, উঠানের দক্ষিণ
কোণের সেই কবেকার পুরনো কৎবেল গাছে ঢাকা আমাদের দোতলা কাঠের বাড়ী আর আমার প্রচন্ড মমতাময়ী আম্মা, স্নেহশীল আব্বা, বান্ধবীতূল্য বোনদের ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় চলে এলাম! ---আমার বিয়েটা ছিলো --উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে লেগেছে, অনেকটা এইরকম! ভালো পাত্র, সেও প্রাক্তন বুয়েটিয়ান, দ্রুত ঘটে গেলো সবকিছু। আমি বরাবরের মতোই শান্ত মেয়ের মতো বউ সেজে আর তার কয়েকমাস পরে প্লেনে চেপে সবার কাংখিত পশ্চিমা দেশটিতে পা রাখলাম!-- আর যে মুহূর্তে আমাদের রিসিভ করে নেয়া গাড়িটা অচেনা হাইওয়ের রাতের কালো আধার চিরে শহর ছেড়ে দূরের শহরতলীর দিকে ছুটলো, সেই মুহতেই তীব্র কান্না গলায় চেপে বসলো, অভ্যাসমতো তা আটকে রাখলাম নতুন লোকজনের সামনে --সেই কান্না ফিকে হয়ে গেলেও এখনও পুরোপুরি মুছে যায়নি এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনে! সেই রূপকথার মতো জীবনের গল্প না হয় ধীরে ধীরে বলব!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ২:৫৮