somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেসিডেন্ট জিয়া ইতিহাসের কালো অধ্যায়

৩০ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কর্নেল তাহের ও জিয়াউর রহমান গং সিপাহী বিপ্লবের নামে কাউন্টার ক্যু তৈরি করে - সিপাহীরা নন মেট্রিক, ক্লাস এইট পাশ হয়তোবা তাও না, অর্ধশিক্ষিত সিপাহীরা হিংস্র হয়ে গগণ ফাটিয়ে গুলি বর্ষণ আর আন্দোলনের স্লোগান দিয়ে উঠে -

“সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই
-অফিসারের রক্ত চাই”


০৭ ই নভেম্বর ১৯৭৫ বাংলাদেশের আরেক সূর্য সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) কে হত্য করা হয় যার মুল নায়ক কর্ণেল তাহের ও জিয়াউর রহমান গং, বিপ্লবের নামে অফিসার হত্যার কাজগুলো সাধারণ সৈনিকেরা করতো, কিন্তু ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের হত্যার দায়িত্ব পালন করে দুজন অফিসার সহ সৈনিক দল, অফিসারগণকে খালেদ মোশাররফ খুবই পছন্দ করতেন “কে ফোর্সের” অধীনে ৭১ এর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেই দুজন ছিলেন ক্যাপ্টেন আসাদ ও ক্যাপ্টেন জলিল, এদের মধ্যে ক্যাপ্টেন আসাদকে ৭১ এর যুদ্ধকালীন সময়ে খালেদ মোশাররফ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুর হাত হতে উদ্ধর করেছিলেন ।

অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বীরউত্তম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের ইউনিফর্মড মৃতদেহ ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় খেজুর গাছের নিচে অপমান ও অবহেলায় পড়ে থাকে - দুখিনী বাংলাদেশের প্রদ্বীপসম সন্তানেরা একে এক নিভে যেতে শুরু করেন ।

অফিসার হত্যার কাউন্টার ক্যু কে নানা নামে রাঙানো হয় “সিপাহী বিপ্লব, বিপ্লব ও সংহতি দিবস, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস” - ইত্যকার নাম, হায়রে অভাগা বাংলাদেশ ।

১৯৭৬ জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সাথে সাথে শুরু হয় এক প্রহসনের বিচার, স্থান ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগার - নাম “ রাষ্ট্র বনাম মেজর জলিল গং” কর্ণেল তাহের সহ অভিযুক্ত ৩৩ জন ইউনিফর্মড অফিসার !!! ১৯৭৭ সনের ৯ই অক্টোবর পর্যন্ত জিয়া্উর রহমানের নির্দেশে সামরিক আদালতে সরকারী নথিপত্র হিসেবে ১,১৪৩ (এক হাজার একশত তেতাল্লিশ) জন অফিসার ও সৈনিক ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে - বাংলাদেশের কারাগারের বাতাস তরুণ সব সৈনিক ও অফিসারদের দির্ঘনিঃশ্বাস এবং হতাশ ক্রন্দন বিষাক্ত হয়ে আছে আজো ।

রাষ্ট্রিয় হত্যার দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হাইকোর্টে এক রীট পিটিশন করা হয়। পিটিশনে বলা হয় ৩৩ জন ইউনিফর্মড অফিসার সহ ১,১৪৩ জন সৈনিক ও অফিসারের বিচার অবৈধ । হাইকোর্টের রীট পিটিশন আমলে এনে ও যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্য বিচার বিবেচনা করে ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন মহামাণ্য বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, ২২শে মার্চ ২০১১, তাঁর রায়ে বলা হয় ৩৩ জন ইউনিফর্মড অফিসার সহ ১,১৪৩ জন সৈনিক ও অফিসারকে ঠান্ডা মাথায় ততকালীন রাষ্টপক্ষ কুশলী হত্যা করেছে, এই বিচার অবৈধ। জেনারেল জিয়াউর রহমানকে এই সাজানো হত্যা কান্ডের জন্য দায়ী করা হয়, রায়ে বলা হয় জেনারেল জিয়া বেঁচে থাকলে এই হত্যা কান্ডের জন্য তার বিচার করা হতো, বাংলাদেশ আইনে মৃত অপরাধীরদের বিচারের বিধান নেই ।।

জিয়াউর রহমান অতি ভাগ্যবান মানুষদের একজন, মাত্র ৪৩ বছর বয়ষে তিনি বাংলাদেশের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হোন । ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম এক ঘোষণায় জানান -

“আমি সাদাত হোসেন সায়েম শারীরিক অসুস্থতার কারণে প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েছি। সুতরাং আমি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোণীত করেছি এবং তাঁর কাছে প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব অর্পণ করেছি”

শারীরিক অসুস্থতার কাতর হয়ে প্রেসিডেন্ট সায়েম জিয়াকে প্রেসিডেন্ট করেন নি, জিয়া এই ঘোষণা দিতে তাকে বাধ্য করেছিলেন।

যবনিকাঃ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাবলে কঠিন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব দিলেন এবং বিশেষ ক্ষমতায় বসালেন - আর সামরিক আদালতে সৈনিক ও অফিসারদের বিচার হতেই থাকলো আর তাদের দির্ঘশ্বাস কষ্ট জমা হতে লাগলো চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে - এবং আশ্চর্য্যজনক ভাবে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজেই ৩০শে মে, ১৯৮১ জিয়াউর রহমানের এক সময়ের সাথী জেনারেল মঞ্জুর ও তার দল জিয়াকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন - আরেকটি সেনা অভ্যুথ্যান ঘটে। বলা হয়ে থাকে জেনারেল মঞ্জুর তার রুপবতী স্ত্রী দ্বারা পরিচালিত ছিলেন - সেনা অভ্যুথ্যান ঘটানো ও জিয়া হত্যার পেছনে প্রলয়ংকারী স্ত্রীবুদ্ধি কাজ করে থাকতে পারে । হযরত আলী (রাঃ) বর্ণিত বাণী থেকে বলছি “আপনার হিসাব আপনাকেই দিতে হবে ইহকালেও পরকালেও”


লেখাটি উৎসর্গ করছি - জনাব চাঁদগাজী ভাইকে যিনি মুরুভূমিতে পানি খোঁজার মতো ইতিহাস খোঁজে বেড়ান এবং নিজে ইতিহাসের কড়াল সাক্ষি।


সুত্র:
দেয়াল - হুমায়ুন আহমেদ
রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫ - নির্মলেন্দ গুণ

ছবি: গুগল




সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×