ছবি: যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে টয়োটা যুদ্ধের সময়ে একটি টয়োটা পিকআপ থেকে চাদীয় সৈন্যরা
চাদ–লিবিয়া যুদ্ধ ছিল ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে লিবীয় ও চাদীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত কয়েক দফা বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ। ১৯৭৮ সালের আগে থেকে লিবিয়া চাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে জড়িত ছিল, এবং মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতা দখলে আগেই ১৯৬৮ সালে চাদের গৃহযুদ্ধ উত্তর চাদে ছড়িয়ে পড়লে লিবিয়া এই সংঘর্ষে জড়িত হয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ চলাকালে লিবিয়া চার বার (১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০–৮১ এবং ১৯৮৩–৮৭ সালে) চাদে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। প্রত্যেকবারই লিবিয়া চাদের গৃহযুদ্ধে যুদ্ধরত কিছু দলের সমর্থন লাভ করে, অন্যদিকে লিবিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ফ্রান্সের সাহায্য লাভ করে। ফ্রান্স চাদীয় সরকারকে রক্ষা করার জন্য ১৯৭৮, ১৯৮৩ এবং ১৯৮৬ সালে চাদে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।
যুদ্ধটির ধরন ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। লিবীয়রা সাঁজোয়া যান, গোলন্দাজ বাহিনী ও বিমানবাহিনী ব্যবহার করে, আর তাদের চাদীয় মিত্ররা পদাতিক বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শত্রুর ওপর নজরদারি ও যুদ্ধের মূল ভার গ্রহণ করে। এই ধরনটি ১৯৮৬ সালে যুদ্ধের শেষদিকে চরমভাবে পরিবর্তিত হয়। সেসময় অধিকাংশ চাদীয় বাহিনী উত্তর চাদে লিবিয়ার দখলদারিত্বের মোকাবেলা করার জন্য একত্রিত হয়। এরকম জাতীয় ঐক্য চাদে আর কখনো দেখা যায় নি। এর ফলে লিবীয়রা তাদের প্রথাগত পদাতিক বাহিনী থেকে বঞ্চিত হয়। এটা ঠিক সেই সময়ে ঘটে যখন লিবীয়রা ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ও বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপনাস্ত্রে সুসজ্জিত একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন চাদীয় বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এর ফলে অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে লিবীয়দের যে আধিপত্য ছিল তা দূরীভূত হয়ে যায়। এরপর সংঘটিত হয় টয়োটা যুদ্ধ, যার ফলে লিবীয় বাহিনী পরাজিত হয়ে চাদ থেকে বিতাড়িত হয় এবং যুদ্ধটির অবসান ঘটে।
লিবিয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল আউজৌ অঞ্চল (চাদের সর্ব উত্তরের অংশ) দখল করা, যেটিকে গাদ্দাফি ঔপনিবেশিক আমলের একটি অমীমাংসিত চুক্তির অজুহাতে লিবিয়ার অংশ বলে দাবি করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তাঁর লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় লিবিয়ার উদরতলে এমন একটি আশ্রিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যেটি তাঁর জামাহিরিয়ার মতো একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হবে, লিবিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং আউজৌ অঞ্চল লিবিয়ার অন্তর্গত বলে স্বীকার করে নেবে; অঞ্চলটি থেকে ফরাসি প্রভাব নির্মূল করা; এবং চাদকে একটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে মধ্য আফ্রিকায় লিবিয়ার প্রভাব বিস্তার করা।
চাদ–লিবিয়া যুদ্ধ
তারিখ: ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৮ – ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭
অবস্থান: চাদ
ফলাফল: চাদীয় ও ফরাসি বিজয়
অধিকৃত এলাকার পরিবর্তন: চাদ আউজৌ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে
পক্ষ:
চাদ: এফএটি (১৯৭৮–৭৯) এফএএন (১৯৭৮–৮৩) এফএএনটি (১৯৮৩–৮৭) জিইউএনটি (১৯৮৬–৮৭)
ফ্রান্স
জায়ারে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সামরিক সমর্থন:
মিশর
সুদান
বিপক্ষ:
লিবিয়া
ইসলামিক লেজিয়ন
চাদ চাদীয় বিদ্রোহীগণ
ফ্রোলিনাট
জিইউএনটি (১৯৭৯–৮৬)
সেনাধিপতি পক্ষ:
ফ্রাঁসোয়া তোঁবালবায়ে - চাদ
ভ্যালেরি দ্য'এস্তায়িং - ফ্রান্স
হিসেন হাবরে - চাদ
হাসান ডিজামুস - চাদ
ফ্রাঁসোয়া মিতেঁরা - ফ্রান্স
ইদ্রিস দেবি - চাদ
মবুতু সেসে সেকো - কঙ্গো
রোনাল্ড রিগ্যান - যুক্তরাষ্ট্র
সেনাধিপতি বিপক্ষ:
মুয়াম্মার গাদ্দাফি - লিবিয়া
মাসুদ আব্দেলহাফিদ - লিবিয়া
গৌকুনি ওয়েদ্দেই - চাদ বিদ্রোহী
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি:
পক্ষ: ১,০০০+ সৈন্য নিহত (চাদ ও ফ্রান্স)
বিপক্ষ: ৭,৫০০+ সৈন্য নিহত, ১,০০০+ সৈন্য যুদ্ধবন্দি, ৮০০+ সাঁজোয়া যান ধ্বংসপ্রাপ্ত, ২৮+ যুদ্ধবিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত।
উপসংহার: - আউজু স্ট্রিপ নিয়ে লিবিয়া এবং চাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এই দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘঠিত হয় যা টয়োটা যুদ্ধ নামে খ্যাত। লিবিয়ার উন্নত সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার মতো তেমন কোনো অস্ত্রই ছিলোনা চাদের। তাই এই যুদ্ধে চাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স। তবে কোনো যুদ্ধাস্ত্র না চাদকে ৪০০ টি টয়োটা পিক আপ ট্রাক সরবরাহ করে ফ্রান্স। এই ট্রাকগুলোতে এন্টি এয়ারক্রাফট গান এবং এন্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ইনস্টল করে চাদ। যুদ্ধক্ষেত্রে চাদের এই পিক আপ ট্রাকগুলোর বিরুদ্ধে দাড়াতেই পারেনি লিবিয়ান ট্যাংক এবং এপিসি ফোর্স। ফলশ্রুতিতে চাদের কাছে নির্মভাবে পরাজিত হয় লিবিয়া। এই যুদ্ধে লিবিয়ার মোট ৭,৫০০ সৈন্য নিহত হয় এবং ৮০০ ট্যাংক-এপিসি,২৮ টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। অন্যদিকে চাদের ১,০০০ সৈন্য নিহত হয়।
সুত্র: - https://bn.wikipedia.org
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৪৩