somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের চিকিৎসা সেবা

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় ছিল যখন "ডাক্তার" শব্দটা শুনলে চোখের সামনে এমন কিছু মানুষের ছবি ভেসে উঠত যারা তাঁদের কাজ এবং উদ্দেশ্যের দিক থেকে ছিলেন নির্মোহ পরোপকারী। তাঁদের কাছে মানব সেবাটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তারাও টাকা নিতেন, কিন্তু সেটা গলায় ছুরি ধরে না। ছোট বেলায় কোন রোগ ব্যাধি হলে বাবা চাচারা কয়েক ডোজ হমিও ঔষধ নিয়ে আসতেন। সেটাতেই কাজ হতো; আমরা ভালো হয়ে যেতাম। খুব বড় কোন রোগ হলে 'রতিন্দ্র বাবুর চেম্বার', অনেক বড় ডাক্তার ছিলেন। কিন্তু কোনদিন চার্জ করে কারো কাছ থেকে টাকা নিতে দেখিনি। আমাদের প্রজন্মের প্রায় সবাই থাকে দাদু ডাকতো। আমরা কখনও তার কাছে চিকিৎসার জন্য গেলে পরো ব্যবস্থাপত্র, সাথে ওষুধও দিয়ে দিতেন। টাকা দিলে হয়তো শুধু ওষুধের দামটাই রাখতেন। এই মহান ডাক্তার দের কথা মনে হলে মনের অজান্তেই একটা শ্রদ্ধাবোধ মনের মধ্যে চলে আসে। তারাও অনেক টাকা খরচ করে হয়তো বিলেত থেকে ডাক্তারি পাশ করে আসতেন। টাকার দরকার তাঁদের ও ছিল কিন্তু সেটা কি আজকালকার ডাক্তারদের মতো ?

ডাক্তারির সেই মহান পেশা আজ কতটা মহান ? এখানে কি মানবিকতা বলে কিছু আছে ? নাকি সব এমন এক ব্যবসায় রূপ নিয়েছে যেখানে টাকা, এবং টাকাই শেষ কথা ?

আমাদের ডাক্তাররা আজ একেকজন পাকা ব্যবসায়ী। একজন রুগীকে কত ভাবে জবাই করা যায় সেটা তাদের থেকে ভালো আর কেউ বলতে পারবে না। আপনি যদি কখনও সেটা বুঝতে চান তাহলে প্রথমত আপনাকে রুগী হতে হবে। আর তখনই শুরু হবে আপনার এই মহান(!) পেশার অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা অর্জন একজন ডাক্তারের কাছে গেলেই শুরু হয়ে যাবে। প্রথমেই আপনাকে ৫/৭ শত থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হবে তার প্রথম ভিজিটের চার্জ। তার পরে শুরু হবে মূল পর্ব - লম্বা একটা ব্যবস্থাপত্র আপনাকে ধরিয়ে দেয়া হবে। যার মধ্যে অনেকগুল ওষুধ দেয়া থাকবে যার বেশীরভাগ ওষুধই হয়তো এমন সব অখ্যাত, নিম্ন মানের কোম্পানির যারা ওষুধের মানের উন্নতি না করে ডাক্তারদেরকে কমিশন সহ নানা ধরনের উপহার সামগ্রী দিতেই বেশি সচেষ্ট থাকে। এমন কি গাড়ি, ফ্ল্যাট পর্যন্ত ও আজকাল ওষুধ কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের উপহার দেয়। আর এভাবেই তাদের নিম্ন মানের ওষুধ বুঝে না বুঝে গিলতে হয় আমাদের সাধারন মানুষকে। এটা তো গেল ঔষধ। এবার আসি টেস্টের বিষয়ে; আপনার প্রয়োজন হোক আর না হোক কয়েকটা টেস্ট আপনার প্রেসক্রিপশনে লেখা থাকবেই এবং সেই টেস্ট গুলো আপনি যেকোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করাতে পারবেন না। তা সেটা গুনগত মানের দিক থেকে অনেক ভালো হলেও। ডাক্তার আপনাকে একটা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলে দেবেন; আপনাকে সেখানেই তা করতে হবে। আপনি যদি আমার মতো একটু ঘাড় তেড়া টাইপের হন এবং ডাক্তারের বলা ডায়াগনস্টিকের চাইতে আরও শতগুণ ভালো কোন পরিক্ষাঘার থেকে পরীক্ষাগুলো করিয়ে আনেন তাহলে ডাক্তার মহোদয় সেগুলো খুলেও দেখবেন না। ঘটনার শানে নুযূল হল- সেই কমিশন ব্যবসা। এখানে ডাক্তাররা অনেক বেশি দক্ষ। আজকাল তারা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে প্রি-পেইড সিস্টেমে কমিশনটা নিয়ে থাকেন। ধরুন মাসের শুরুতেই ডাক্তাররা তার সেই নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট পরিমান টাকার একটা চেক পেয়ে যান এবং প্রতিদিন রুগীকে টেস্টের জন্য পাঠাতে থাকেন যতক্ষণ না চেকের টাকা শুধ হয়। আপনি যদি খুবই ভাগ্যবান হন তাহলে হয়তো আরও দু একবার এই ডাক্তারের কাছে যাবার পর রেহাই পেয়ে যাবেন। কিন্তু যদি আপনার অবস্থা একটু খারাপ হয় তাহলে একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন আপনি কীভাবে রেহাই পাবেন। প্রথমেই হয়তো আপনাকে পরামর্শ দেয়া হবে হাসপাতালে ভর্তির। সেটা আবার ওই ডাক্তার মহোদয়ের পছন্দের হতে হবে। কারন এখানেও কমিশনের ব্যাপারটা ওপেন সিক্রেট। তা না হলে আপনি তার সেবা পাবেন না। সরকারী হাসপাতালে চাকরি করেন কিন্তু সেখানে সময়মত কাজে না গেলেও প্রাইভেট ক্লিনিক গুলতে যে কোন সময় তিনি ডাক পেলেই হাজির হবেন। সেখানেও আবার কত ধরনের কমিশন যে তারা পান সেটা বলাই বাহুল্য। এমন নজির ও আছে এই ডাক্তার সাহেব রা শুধুমাত্র ক্লিনিকের বিল বাড়ানোর জন্য মৃত মানুষকে জীবিত দেখিয়ে ৩/৪ দিন আই, সি, ইউ তে ফেলে রেখেছেন। কিন্তু তাদেরকে কিছু বলা যাবে না। সরকারও তাদেরকে কিছু বলার সাহস করে না। করবে কীভাবে ? তারা যে পান থেকে চুন খসলেই কর্মবিরতিতে চলে যাবেন। ভালো কোন কাজে এক হতে না পারলেও যে কোন অন্যায় কাজে তারা সব সময় এক হয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।

পরশুদিনের একটা তাজা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার না করে পারছি না। পহেলা বৈশাখ তখনও সকাল হয় নি। আমার এক নিকটাত্মীয় মারা যান। এই মৃত্যু সংবাদে আমার আরেক নিকটাত্মীয় অসুস্থ হয়ে পড়েন; আমরা কিছু লোক মৃত আত্মীয় কে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে কিছু লোক অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে হাসপাতালে রওয়ানা হই এবং যথেষ্ট নামকরা একটা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌছাই। রুগীর প্রাথমিক উপসর্গ দেখে আমাদের মনে হয়েছে উনার স্ট্রোক হয়েছে সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন করাটা জরুরী। তাই কাছাকাছি থাকায় এই হাসপাতালটাতেই চলে যাই। সাথে সাথে রুগীর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে কেবিনে নেয়া হয়। শুরু হয় চিকিৎসা। আসলে চিকিৎসা কিছুই না। ওই ইউনিটের কর্তব্যরত শিক্ষানবিস চিকিৎসক রুগীর প্রেসার, ডায়াবেটিকস পরিক্ষা করে চলে যান। একটু পরে গেলাম তার কাছে, যেহেতু স্ট্রোকের রুগী তাই একজন বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্ট কে দেখানোটা জরুরী। ব্যাপারটা বলার পর কর্তব্যরত ঐ ডাক্তার আমাকে নিশ্চিত করলেন যে সকাল আটটা নাগাদ অমুক ডাক্তার সাহেব আসবেন। বিষয়টা আমি বার বার তার কাছ থেকে নিশ্চিত হবার চেষ্টা করি এবং থাকেও জানাই যে আজ পহেলা বৈশাখ তাই ডাক্তার না ও আসতে পারেন। যদি না আসেন তাহলে আমি বিকল্প চিন্তা করব। তাতেও তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দিলেন যে ডাক্তার আসবেন। সকাল ৮ টা, ৯ টা, ১০ টা বাজে, আমি ডিউটি ডাক্তার, নার্স আর আমার কেবিনে চক্কর দিচ্ছি আর এই আসবে এই আসবেন শুনছি। অতঃপর দেড়টার দিকে নতুন আরেকজন শিক্ষানবিশ ডাক্তার আসলেন; তার কথা শুনে আমি কি করব সেটা চিন্তা করতে পারছিলাম না। সারাদিন এমন কি পরের দিন সকাল পর্যন্ত নাকি কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসবেন না, তাছাড়া তাদের হাসপাতালে নিউরলজির কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নেই এবং এই বিভাগ ও তাদের এখানে নেই। থাকে প্রশ্ন করলাম যে, তাহলে আপনারা এই রুগী ভর্তি নিলেন কেন ? আমাকে ডাক্তার আসার নিশ্চয়তাইবা দেয়া হল কীভাবে ? তখন ঐ ডাক্তার আমাকে হয়তো ফিডার খাওয়া শিশু মনে করে কিছু একটা বুঝাতে চাইলেন। আমি নিজেকে কি ভাবে শান্ত রাখলাম সেটা চিন্তা করতে পারছিনা। এদিকে রুগীর অবস্থা আরও খারাপ হওয়াতে দৌড়াতে হল অন্য হাসপাতালের খুঁজে। তাদেরকে কিছু বলা যাবে না কারন তারা ডাক্তার, তারা মানুষ না। কিছু বললেই হয়তো ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বসবেন।

দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসনসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে যাদের দায়িত্ব এসব অনিয়ম দেখা বা তদারকির। কিন্তু এসব দেখে কি মনে দেশে কেউ আছে যে এসব দেখবে ?

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×