somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন গোয়েন্দার সেকাল-একাল

১৪ ই মার্চ, ২০১২ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস টু-তে পড়ি, খুব সম্ভবত। কার্টুন দেখতাম খুব আর পড়তাম রূপকথার চোখ ধাধানো বইগুলো। বেশী পড়তাম চীনা রূপকথা। এছাড়াও ছোটদের আরব্য রজনী, ঠাকুরমার ঝুলি থেকে বিদেশী সব রূপকথার বই ছিল মুখস্ত। টু-এর ফাইনাল পরীক্ষা তখন শেষ হয়েছে। যে কয়টা গল্পের বই আম্মু কিনে দিয়েছিল, সেগুলো পড়ে শেষ করে ফেলেছি। এরপর থেকে সময় যেন আর কাটতেই চায়না। আপুর পিছনে ঘুরঘুর করতে লাগলাম নতুন বই কিনে দেওয়ার জন্য। আপু পড়লো ঝামেলায়, সবসময় তো ইচ্ছে করলেই আর বাইরে যেয়ে বই কিনে দেওয়া যায়না। শেষে আপু নিজের লাইব্রেরী ঘেটে আমার হাতে একটা বই ধরায়ে দিল। আমি অবাক হয়ে বইটার দিকে তাকালাম। এটা কি বই? নিউজ প্রিন্ট কাগজ, ঝলমলে কোন ছবি নেই। এ বই মানুষ পড়ে? বইটার কভার পেজটা পড়লাম। লেখা আছে,
"তিন গোয়েন্দা-বেগুনী জলদস্যু"।

আমি আপুকে বললাম , এ কি বই দিলা? এ বই কেমনে পড়বো? আপু আমাকে বুঝালো আপাতত এটা পড়, কাল যেয়ে নতুন বই কিনে দিব। আমি তবুও ঘ্যানঘ্যান করতে লাগলাম। আপু আমাকে অনেক বুঝায়ে সেদিনের মতো শান্ত করলো।

কি আর করবো? মেজাজ খারাপ করে পড়া শুরু করলাম আমার জীবনে পড়া ১ম তিন গোয়েন্দার বই, "বেগুনী জলদস্যু"।

তারপরে আর কবে রূপকথা পড়েছি, বলা কষ্টকর। আপুর লাইব্রেরী থেকে খুজে খুজে তিন গোয়েন্দার সব বই পড়া শুরু করলাম। পড়ে ফেললাম, তিন গোয়েন্দা, অথৈ সাগর, ভীষন অরণ্য, কাকাতুয়া রহস্য, রক্তদানো, কঙ্কাল দ্বীপ, রূপালী মাকড়সা..............বললে পেজ ভরে যাবে বইয়ের নামে। পড়তাম তো না, গিলতাম বইগুলো। মনের কল্পনায় কখনও তিন গোয়েন্দার সাথে ঘুরে বেড়াতাম রকি বীচে, কখনও চলে যেতাম হলিউডে, কখনও ভয়ঙ্কর আমাজনে আবার কখন বা জিনার সেই দ্বীপে। কখনও কল্পনা করতাম আমার বুদ্ধি দেখে তিন গোয়েন্দার নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাকে আবার কখনও কল্পনা করতাম জিনা কিশোরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। মোটামুটি বলতে গেলে তিন গোয়েন্দাই হয়ে গেল আমার আলাদা একটা নিজস্ব জগৎ।

একদিন আমার দুই বন্ধু বিপু আর রনিকে প্রস্তাব দিলাম একটা গোয়েন্দা দল করার। ওরাও ততদিনে তিন গোয়েন্দার ভক্ত হয়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে পয়সা জমিয়ে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থার ভিজিটিং কার্ড বানালাম। কার্ডটার ফরম্যাট ছিল কিছুটা এরকম:

"গোয়েন্দা'স"
"? ? ? "
"* শাহারিয়ার আহমেদ"
"* আরিফুল বিপু"
"* শরিফুর রহমান"

এ নিয়েও দ্বন্দ। কার নাম আগে থাকবে? কে হবে নেতা। আমি ওদের বুঝালাম, "দেখ, আমার বুদ্ধি হলো সবচেয়ে বেশী, তাই কিশোরের জায়গায় আমার নাম থাকবে মানে আমি হবো নেতা। বিপু পড়ালেখায় ভালো, তাই বিপু হবে রবিনের জায়গায় আর রনির হাতির মতো শরীর। শক্তিও বেশী তাই রনি হবে মুসা।"

একটু কুই কুই করে শেষপর্যন্ত মেনে নিল ওরা। তবে ঐ পর্যন্তই। সত্যিকারের গোয়েন্দাগিরী আর করা হয়নি কখনও।

এতকিছু লেখার মূল কারন হলো, তখন তিন গোয়েন্দা ছিল আসলেই তিন গোয়েন্দা। সত্যিকার গোয়েন্দা কাহিনীর মজা পাওয়া যেত তিন গোয়েন্দা পড়ে। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে আর তিন গোয়েন্দা করে গোয়েন্দাগিরী। কিন্তু তিন গোয়েন্দার সেই মজাটা কি এখন আছে? তখন শুধু ছোটরা কেন, বড়রাও তিন গোয়েন্দার বই নেশার মতো পড়তো। কিছুদিন আগে আমার এক ছোট মামাতো বোনকে বললাম,
"তিন গোয়েন্দা পড়ো?"
ও বলল,
"ধুর, ওর চেয়ে তো রূপকথাও অনেক বেশী ম্যাচিউরড" :P

তখন তিন গোয়েন্দার একটা নির্দিষ্ট বয়স ছিল, আজগুবি তেমন কিছুই থাকতো না। এখনকার তিন গোয়েন্দার কোন নির্দিষ্ট বয়স নাই। কোন বইতে দেখা যায় তিন গোয়েন্দা বেশ বড়ো আবার তারপরের কোন ভলিউমে দেখা যায় ওদের বয়স অনেক কমে গেছে। কখনও ড্রাকুলার লাশের সন্ধান পায় আবার কখনও জাদুর ট্রি হাউজে চড়ে টাইটানিকে যেয়ে গোয়েন্দাগিরী করে। মৌলিক লেখা তো হয়ই না বলতে গেলে। কখনও হরর ক্লাব সিরিজের বইগুলোর ক্যারেকটারের নাম চেন্জ করে তিন গোয়েন্দায় রূপন্তিত করা হয় আবার কখনও অন্য এক লেখক তিন গোয়েন্দা লিখেন সেটাকে তিন গোয়েন্দায় রূপান্তিত করা হয়। (যদিও গল্পের শুরুতে সেটা লেখা থাকে।) একটা ব্যাপার বুঝতে পারিনা, একজন তিন গোয়েন্দা লিখছেন সেটা আবার রূপান্তর করার কি আছে। নতুন করেই তো লিখছে, সেটা আবার রূপান্তর করে কিভাবে? কোন কাহিনীতে হয়ত শুধু কিশোর আর মুসা আছে আবার কোনটায় শুধু মুসা। তিন জনকে এখন একসাথে পাওয়া যায়না বললেই চলে।

যদিও এখন তিন গোয়েন্দা পড়ে আগের সেই তিন গোয়েন্দার কানাকড়ি মজাও পাইনা তবুও এখনও রেগুলার তিন গোয়েন্দা পড়ে যাচ্ছি। হয়তো কোন দিন ফিরে পাবো পুরোনো সেই,

কিশোর, মুসা আর রবিনকে।
৫৪টি মন্তব্য ৫৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×