somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইস্! মানুষ না হয়ে যদি কচ্ছপ হতাম! মৃত্যকালে হুমায়ুনের শিক্ষণীয় অনুভুতি

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের জীবনের শেষ দিকে পৃথিবীতে বহু বছর বাঁচার শেষ ইচ্ছা ছিল। তাঁর জৌলুস, খ্যাতি, অর্থ, বিত্ত, পরিচিতি, সন্তান, সম্পদ যখন মধ্য গগনে তখনই ওপার থেকে ডাক আসে। তিনি আদরণীয় সন্তানদের মায়ার টানে কিছুটা দিন অতিরিক্ত বাঁচার আশায় সিগারেটের নেশা ছেড়েছেন! কোরআন অনুবাদ করে তার ব্যাখ্যা লিখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এই প্রত্যাশায় যে, যদি এর কল্যাণে কিছুটা দিন বেশী বাঁচা যায়! পারত পক্ষে পৃথিবী থেকে কেউ মরতে চায়না। আর কারো সুখ যদি থাকে মধ্য গগনে, তার জন্য তো মরার চিন্তা করাই দূরে থাক, জীবনে একবার কবরস্থ হতে হবে এমন চিন্তা করে সময় নষ্ট করতেও চায়না। এমনটিই ঘটেছিল নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের জীবনে। তিনি কোথায় কবরস্থ হতে চান? তাঁর মাতা, ভাই, বন্ধু, স্ত্রী সবাই মিলে তাঁর সাহিত্য ভাণ্ডার ঘেঁটে ঘেঁটে সেই কথাটি উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজের কথা, অন্যের কথা সুন্দর ভাবে উপস্থাপনে সিদ্ধ ছিলেন, নিজের জীবনের প্রচুর অজানা কথা বলে গিয়েছেন। তবে মৃত্যু পরবর্তী কোথায় শুইতে চান, তাঁর লিখিত সাহিত্যের কোন লাইনে, কবিতার কোন ছন্দে কিংবা গানের কোন কলিতে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে ধরনের কোন বাসনার কথা পাওয়া যায়নি।

হুমায়ুন আহমেদ সময়ের মূল্য বুঝতেন, যার কারণে তিনি ব্যাপক ভাবে সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। জীবনের অন্তিম সময়ে পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে তিনি ভেবেছেন, যদি আরো একটু সময় পেয়ে যান তাহলে সেটা তিনি কোথায় ব্যয় করবেন! জীবন মৃত্যুর দোলাচলে তিনি যখন মাঝামাঝি অবস্থান করেছিলেন তখন তিনি অনুধাবন করতে পারলেন পুরো জীবনটা বুঝি এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল! অথচ তাঁর অনেক কিছুই করার বাকি আছে, জাতিকে দেবার মত অনেক কিছুই তার ভাণ্ডারে পড়ে আছে! তিনি তাঁর যোগ্যতায় অসম্ভব সক্ষমতা রাখতেন, তিনি যেটা বুঝতেন সেটা কলমের কালি কিংবা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অবিকল সেভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। তিনি একটি ক্ষুদ্র চরিত্রকে বিশ্লেষণ করে লম্বা করতে পারতেন। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের অব্যক্ত কথাগুলো খুবই সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। তাঁর উপস্থাপনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শক-পাঠক মোহাবিষ্টের ন্যায় অপেক্ষা করত। লেখায় শরৎচন্দ্র আর চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন বাংলার এই বরেণ্য এই সন্তান। ফলে তিনি যতদিন সুস্থ মস্তিষ্কে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেন ততদিন তিনি ভিন্ন আঙ্গিকে ভ্ন্নি রসের বহুমাত্রিক খোরাক তাঁর ভক্তবৃন্দকে যোগাতে পারতেন। তবে তাঁর হাতে আর সময় ছিলনা, কেননা সময়ের নিয়ন্ত্রক তিনি নন, পৃথিবীর কোন শক্তিও নন, এটি সম্পূর্ণ অন্য এক নিয়ন্ত্রকের হাতে নিবদ্ধ। একসময় তিনি মন্থর গতি সম্পন্ন একটি সাধারণ কচ্ছপের প্রায় তিন শত বছরের লম্বা জীবন দেখে আফসোস করে বলেছিলেন, ‘ইস্! কচ্ছপের মত একটি নগণ্য প্রাণীর মত যদি হায়াত পেতাম কতই না ভাল হত’।

বিজ্ঞানী টমাস এডিসন যদি আরো এক বছর বেশী বাঁচত, তাহলে তাঁর হাতে মানুষের কল্যাণে আরো নতুন কোন আবিষ্কার হত। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বারবার বেহুশ হচ্ছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; যখন হুস ফিরে পাচ্ছিলেন তখনই অসমাপ্ত কবিতার বাকি চরণ গুলোর দিকে নজর দিচ্ছিলেন। একটি চরণ লিখছেন মুহূর্তেই জ্ঞান হারাচ্ছিলেন, হুশ ফিরল তো পরবর্তী চরণের প্রতি নজর দিচ্ছিলেন। তারপরও কবিতাটি শেষ করতে পারলেন না। তিনিও যদি আরো একমাস বেশী বাঁচতেন তাহলে আরো প্রচুর লিখে যেতে পারতেন এবং বাংলা সাহিত্যের কল্যাণে তা অনেক উপকারে আসত! কবি নজরুলের ৮৬ বছরের জীবনে প্রথম ২৩ বছর অভাবের কষাঘাতে, পরবর্তী ২৩ বছর লিখায়, পরের ৪৬ বছর বোবা হয়ে ঘরে ছিলেন। সেই ৪৬ বছরও যদি লিখতে পারতেন তাহলে, বাংলা সাহিত্যে কলম চালানোর মত কোন অধ্যায় বাকি থাকতো না। একই ধারায় হুমায়ুন আহমদের জীবনে সময় ফুরিয়ে গিয়েছিল, যার কারণে তিনিও সময়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ফলে হুমায়ুন আহমদের মত বিরল প্রতিভার অধিকারী মানুষকেও সময় স্বল্পতার জন্য আফসোস করে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে।

উপরে বর্ণিত এ সকল ব্যক্তি আমাদের মতই দোষে গুনে মানুষ ছিলেন। তবে যে মানুষটি দুনিয়াময় খ্যাত ছিলেন, অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী অধিকন্তু ব্যক্তিজীবনে পরিপূর্ণভাবে নিষ্পাপ ছিলেন সে ধরনের ব্যক্তিও সময়ের অভাব উপলব্ধি করেছেন। তিনি ছিলেন সোলায়মান (আঃ), স্বয়ং আল্লাহ যার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন। দুইটি ঘটনার পার্থক্য হল, সোলায়মান (আঃ) পৃথিবীতে বেশীদিন বাঁচার ইচ্ছায় সময়ের প্রয়োজন অনুধাবন করেন নাই। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত অর্পিত দায়িত্ব পুরোটা শেষ করার জন্য সময়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় বান্দা সোলায়মান (আঃ) এর জন্য একটি কদম পর্যন্ত আগ বাড়ানোর সুযোগ দেন নাই। তবে তাঁর অসমাপ্ত কাজ আল্লাহ অন্য ভাবে শেষ করে নিয়েছিলেন, যার কারণে সোলায়মান (আঃ) এর আফসোস করার দরকার হয়নি। মানুষ মরণশীল, সবাইকে মৃত্যুর চোবলে অবশ্যই হেলে পড়তে হবে, যিনি এই মুহূর্তে জন্মেছেন তিনি সহ সবার সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য মৃত্যুর সময় যাতে কাউকে সময়ের জন্য আফসোস করতে না হয়, সেদিকে সকল বুদ্ধিমান মানুষকে লক্ষ্য রাখা উচিত। এই পৃথিবীতে যিনি যতটুকু সময় পেয়েছেন, তার জবাবদিহিও থাকবে ততটুকু সময়ের জন্য। কিছু ব্যকটেরীয়া ১০ মিনিটের জন্য পৃথিবীতে বেঁচে থাকে, একটি মাছি ১ মাসও বাঁচতে পারেনা। তারপরও তারা পৃথিবীতে যতক্ষণ বেঁচে থাকে, ততক্ষণ সময়-সুযোগকে কাজে লাগায়। মূলত এটাই হল স্রষ্টার প্রতি সৃষ্টির পক্ষ থেকে সুবিচার। আর এক্ষেত্রে মানুষ হল বড় অবহেলা কারী, তারা সময়ের জন্য আফসোস করে একেবারে অ-বেলায়!

হুমায়ুন আহমেদ মৃত্যুর পূর্বে আমেরিকা যাবার কালে টিভি সাক্ষাতে বলেছিল, তাঁর সৃষ্ট নুহাশ পল্লীর কথা! তাঁর চেতনায় প্রথমেই মনে পড়ে নুহাশ পল্লীর কথা, তারপরে বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা, তারপর মায়ের কথা.....। তাঁর অমর সৃষ্টি নুহাশ পল্লীকে তিনি মনের মত করে সাজিয়ে তুলে ছিলেন। প্রতিটি চাঁদনী রাতকে উপভোগ করতে তিনি নুহাশের আহবানে সাড়া দিতেন। তিনি জীবিত কালে নুহাশকে এমনভাবে ভালবাসতেন যে, মৃত্যু পরবর্তী সেখানে তাঁর কবর হলে সেটা কবরস্থান কিংবা মানুষের অন্যায্য আনাগোনার স্থলে পরিণত হবে বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থাৎ নুহাশের সৌন্দর্যে বিনষ্টের ভয়ে, সেখানে তিনি কবরস্থ হতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি নুহাশ পল্লী শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসর্গ করার অভিপ্রায়ের কথা সাহিত্যে উল্লেখ করেছেন, এসবের মাঝে এভাবে বাঁচতে চেয়েছেন। কামনা করি তিনি যেন, তাঁর অভিপ্রায় অনুযায়ী বেঁচে থাকেন। আমাদের বড় আফসোস লাগে সে কথা ভেবে, যাদের কাছে তিনি নুহাশের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন তারা কি এর কদর করবেন? কেননা এর চেয়েও বড় কীর্তি সৃষ্টি করেও জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীকে জাতি ভুলে গিয়েছে! তিনি পৃথিবীর বহু দেশ থেকে, বহু অর্থের বিনিময়ে, বহু মূল্যবান গাছ সংগ্রহ করে ১৯০৯ সালে ৬৭২ প্রজাতির গাছ দ্বারা ঢাকার বলদা গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; মৃত্যুর পর জাতির সন্তানদের জন্য তা উৎসর্গ করে যান। জাতি তাকেও ভুলে গিয়েছেন। দুনিয়ার একমাত্র স্বর্গ নামে খ্যাত সম্রাট শাহজাহানের লাল-কেল্লায় আজ লাল বাতি জ্বলে! ১৯২৫ সালে রাজা গিরীশ চন্দ্র রায়ের দেওয়া ঐতিহাসিক স্থাপনা এম, সি কলেজ হোস্টেল ৯১ বছর পরে জ্বালিয়ে দিয়ে, যে জাতি উল্লাস প্রকাশ করে, সে জাতির কাছে নুহাশ পল্লীর গুরুত্ব কতটুকু এবং কতদিনের জন্য স্থায়ী হবে তা বিবেক সম্পন্ন মানুষ সহজে অনুধাবন করতে পারে। অবোধ মানুষ এসব কীর্তি সহজে ভুলে যায়, যদি আল্লাহ কারো প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তার ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। আমরা দেখেছি, পাঁচশত বছরের বেশী সময় ধরে, মহান আল্লাহ সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে শাহজালালের (রহঃ) মাটির একটি কবরের স্থানকে দুনিয়া ব্যাপী যেভাবে প্রসিদ্ধ ও আলোকিত করে মর্যাদাবান করেছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে করা সম্ভব নয়।

হুমায়ুন আহমেদ আজ আমাদের মাঝে পৃথিবীতে বেঁচে নেই। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি টিভি চ্যানেল তারই রচিত বিভিন্ন সিনেমা ও নাটক প্রচার করছে। অনেকেই স্মৃতি চারণ করছেন, কেউ আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তাঁর আত্মীয়-স্বজন তাঁর বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া চেয়েছেন যাতে করে তিনি যেখানেই থাকুন না কেন সেখানে যাতে ভাল থাকেন। প্রবাসে তাঁর নামাজে জানাজা হয়েছে, লাশ ফিরলে দেশেও জানাজা হবে। আগত মুসল্লিরা নামাজ শেষে তাঁর জন্য দোয়া করেছেন, যাতে আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে দাখিল করেন। তিনি বেঁচে থাকতে মুসল্লিদের পক্ষ থেকে এভাবে দোয়া পাননি! জীবিত কালে কোন ঈমামের কাছে তাঁকে কখনও দোয়া চাইতে না দেখলেও, তিনি কখনও ইসলাম বিদ্বেষী আচরণ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তাই মৃত্যুর পর যখন তার স্ত্রী দোয়ার আহবান করেন, তখন তাঁর প্রতি ভালবাসায় সিক্ত প্রতিটি মানুষ আল্লাহর কাছে হাত তুলেছেন এবং তাঁকে উত্তম স্থানে রাখার আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহ কখনও তাঁর অবাধ্য বান্দাকে জীবনের শেষ সময়েও ক্ষমা করে থাকেন, এটা নিতান্ত তাঁর রহমতের একটা দিক। আমরাও আশা করি আল্লাহ যেন তাঁকে ক্ষমা করে দেন। তবে হুমায়ুন আহমদের জীবনের শেষ দিকের আকাঙ্ক্ষার প্রতি নজর বুলালে সকলের জন্য একটি বিরাট শিক্ষণীয় বিষয় ফুটে উঠে, সেটা হল সময়ের জন্য আফসোস এবং দোয়ার জন্য লালায়িত হওয়া। কেননা ভূক্ত-ভূগী একটা সময়ে এসে বুঝতে পারেন পৃথিবীর কিছু সমস্যা এমন থাকে যা দোয়ার মাধ্যমে কিছুটা সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে এবং সমাধানও হতে পারে যা অন্য কোন ভাবেই নয়। জীবন যন্ত্রণায় কেউ কষ্ট পেলে তখন একটা উপলব্ধির সুযোগ ঘটে। কেউ যদি তখন আল্লাহর কাছে আন্তরিক ভাবে আশ্রয় চায়, তখন আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিয়ে দেন। চেতনার অন্তরালে ঘটা এসব দৃশ্য, দুনিয়ার কোন মানুষের পক্ষে সেটা উপলব্ধি করার সুযোগ থাকেনা। তবে আল্লার যে অবাধ্য বান্দা জীবন যন্ত্রণার কষ্ট ব্যতীত হঠাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয়; তখন তার পক্ষে সত্য মিথ্যা উপলব্ধি করারও সুযোগ পায়না।

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পৃথিবীতে যশ-খ্যাতি, অর্থ-সম্পদ, স্বাস্থ্য-মন সুস্থ সবল থাকলে মাটির প্রতি মায়া বেড়ে যায়। চির সত্য মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের কথা ভুলেও ভাবতে চায়না, কেউ সেকথা তুললে তাকে চরমভাবে অপছন্দ করা হয়। যে অনুষ্ঠানে মৃত্যুর কথা বেশী উচ্চারিত হয়, সে সবকে এড়িয়ে চলা হয়। তবে এক প্রকার মানুষ ব্যতীত! কোরআনের ভাষায় তাদের পরিচয় হল ‘মুমিন’। একজন মুমিন ব্যক্তি পৃথিবীর সময়কে কাজে লাগাতে সদা তৎপর থাকে, মুমিন বিশ্বাস করে পৃথিবীর জীবনের শেষ সময় থেকে তার আসল জীবন শুরু! সেজন্য মুমিন ব্যক্তি সদা প্রস্তুত থাকে কখন জানি জীবনের শেষ সময় এসে পড়ে। শেষ সময় এসে পড়লেও সে ভিত-বিহ্বল হয়না। কেননা মুমিন তার পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে সে ব্যাপারে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ ধারণা ও শতভাগ নিশ্চিত থাকে। তার জীবনে আফসোস থাকেনা, হতাশা থাকেনা, দুনিয়ার জীবনের মায়ায় দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়না। পৃথিবীর জীবন থেকে নতুন করে পাওয়ার কিছু না থাকলেও হারাবার কিছু থাকেনা। পৃথিবীর জীবনটা তার জন্য একটি অপেক্ষমাণ রেল ষ্টেশনের মতই হয়।

হুমায়ুন আহমদের মত জ্ঞানী ব্যক্তি জীবনের প্রান্ত লগ্নে এসে যেভাবে সময়ের জন্য আফসোস করে আমাদের চোখের পাতা খুলে ধরেছেন। আসুন, আমারা যারা জীবিত আছি তারা যেন সেই সময়ের মূল্য অনুধাবন করি। তাকে সঠিক পথে যথাযথ কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। আল্লাহ হুমায়ুন আহমদকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছিলেন, তবে আয়ু দিয়েছিলেন সীমাবদ্ধ। একটা পর্যায়ে এসে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা দ্বারা কচ্ছপের জীবন কে উপলব্ধি করেছেন! যা আমাদের জন্য একটি নির্মম শিক্ষা, স্বয়ং আল্লাহ মানুষের আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বলেছেন আরো মারাত্মক কথা। কেয়ামতের দিন অবিশ্বাসীরা তাদের সম্ভাব্য ভয়ানক পরিণতির ভয়ে-আতঙ্কে বলে উঠবে, ‘হায়! আফসোস-আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম’ সুরা নাবা-৪০। মানব জীবনের সময় গুলো দ্রুত সেভাবে ফুরিয়ে যাচ্ছে, যেভাবে খরিদ করা আইসক্রিম খাওয়ার আগেই গলতে থাকে। তাই তাকে গলার আগেই কাজে লাগাতে হবে, তবেই সেটা বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার কাজ হবে। নতুবা সবটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। বুঝতে হবে, আল্লাহ তে বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী যেই হোক না কেন, ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’।


পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ্য:
এই লিখাটি হুমায়ুন আহমদের মৃত্যু সংবাদ শোনার সাথে সাথে লিখা হয়। রাত ১২ টায় শুরু করে মাত্র দু’ঘণ্টার ব্যবধানে লিখাটি পরিপূর্ণ করি। সে সময় উপস্থিত যে অনুভূতি আমার মনে এসেছিল তাই তুলে আনা হয়েছিল! পরক্ষনেই তা প্রকাশ করার জন্য একটি ম্যাগাজিনে পাঠানো হয়। হুমায়ুনের মৃত্যুর পরের দিন প্রকাশিত এই প্রবন্ধের কিছু কথা পড়লে পাঠকের মনে হতে পারে, কিছু জানা কথা ও ঘটনা পরিষ্কার নয়। কেননা এই লিখা যেদিন প্রকাশিত হয়, তখনও তাঁর কবর কোথায় হবে সেটা নিয়েও রহস্যময় ধূম্রজাল চলছিল!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×