কথায় আছে, পিতার পদাংকই সাধারণত পুত্র/কন্যা অনুসরণ করে থাকে। যথার্থতার উদাহারণ হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা, প্রাক্তন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী জনাব নাসিম এবং ধানমন্ডির এম পি শেখ ফজলে নুর তাপসের নাম উল্লেখ করা যায়।
তখন বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে ভারতের ঐকান্তিক সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ অশেষ কৃতজ্ঞতার বাধনে আবদ্ধ। সুযোগ বুঝে ভারত ফারাক্কা বাধ চালুর প্রস্তাব করলে, আগপাশ চিন্তা করার মত সময় কিংবা সুযোগ ছিল না। সেই থেকে যে শুরু, আজ পর্যন্ত ফারাক্কার নাগপাশে বাঁধা বাংলাদেশ যন্ত্রণায় হাসফাস করছে।
তখন ছিল বঙ্গবন্ধুর শাসনামল। এরপর পদ্মা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে অনেকটা জল গড়িয়েছে। দ্বিতীয়বারের জন্য বাংলাদেশ শাসনে আসীন মুজব তনয়া শেখ হাসিনা। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নিশ্চিত তিনি। সুযোগ বুঝে আবারো ভারতের নতুন আবদার। টিপাইমুখ বাধ দেবে তারা। সরকারি পর্যায়ে যেন মৌনতা অবলম্বন করা হয় তা নিশ্চিত করলে ঝটিকা সফরে আসেন ভারতের শিব শংকর মেনন। চুপি চুপি কথা বলে যান, হাসিনা দিপু খুকুমনি আর ঘোড়া মইনের সাথে। সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উওরও দেননি।
ফারাক্কার আর টিপাইমুখ বাধ দেবার সময়টুকু এক নয়। ফারাক্কার সময় যে কৃতজ্ঞতার বাধন, ছিল ভারতের শত্রুতামুলক আচরণে বর্তমানে সে দায় আর নেই। তাই টিপাইমুখ বাধের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের তোষন নীতি মানতে বাধ্য নয় সচেতন বাংলাদেশিরা। এ সত্যটা হাসিনা ভালো করে জানলেও, অন্ধের মত পতার পদাংক অনুসরণ করতে চলেছেন। টিপাইমুখ বাধ দেখতে সংসদীয় কমিটির যাত্রা বিলম্ব, প্রতারনার কৌশল ভিন্ন অন্য কিছু মনে হচ্ছে না। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ পাঠানোর ব্যাপারটিও খুব একটা আমলে আনছেন না তিনি।
বঙ্গবন্ধুর হিমালয় পর্বতসম জনপ্রিয়তা, ভুমির সমন্তরালে নেমে আসার পেছনে যে কয়টি কারণ বর্তমান, তার মধ্যে ফারাক্কাও ছিল। ৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিভিন্ন স্থান নামকরণ, টাকার মধ্যে ছবি ছাপানো, ইত্যাদি করেও কিন্ত হারানো সেই জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনা যায়নি। টিপাইমুখ বাঁধেরর ব্যাপারেও উদাসীন হলে, হাজার চেস্টা করলেও হাসিনার সম্মান আর পুনরোদ্ধার হবে না।
স্বাধীনতার পর পর স্বরাস্ট্রমন্ত্রি হন ক্যাপটেন মনসুর আলী। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের প্রতিকুল পরিস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখার কাজটি সহজ ছিল না। কিন্ত ৯৬ এর প্রেক্ষাপটে মনসুর পুত্র নাসিম সাহেব, স্বরাস্ট্রমন্ত্রি হিসেবে পিতার ব্যার্থতাই বহন করেছেন। যদিও দুই সময়ের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। নাসিম সাহেব যত না আইন শৃংখলা রক্ষায় ব্যাতিব্যাস্ত ছিলেন তার চেয়ে বেশি ব্যাস্ত ছিলেন গলাবাজি আর বিবৃতিবাজিতে। সন্ত্রাসিদের বগলে নিয়ে তিনি যেভাবে "পাতাল খুড়ে হলেও অপরাধী খুজে বের করবো" টাইপের কথা বলেছেন, তাতে সবচেয়ে নির্লজ্জ লোকটাও লজ্জা পেয়েছে। এর পর সর্বহারাদের বিডি আর এ ঢুকিয়ে তার নির্বুদ্ধতার ষোলকলা পুরণ করেছেন।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর এবং তার পুত্রের পরেই যে লোকটি প্রতাপশালি ছিলেন, তিনি হলেন শেখ ফজলুল হক মণি। দুর্মুখেরা বলেন, শেখ কামাল আর শেখ মণির পাপের চুড়ান্ত ফলভোগ করতে হয়েছে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের। সেই শেখ মণি পুত্র শেখ তাপসকে বিশেষ স্নেহধন্য জ্ঞান করে হাসিনা কি পিতার পদাংক অনুসরণ করছেন না? বিশেষ করে যেখানে বিডি আর হত্যাকান্ডের তিনটি তদন্ত রিপোর্টেই তাপসের নাম এসেছে, সেখানে তাকে সরকারিভাবে আড়াল করার অর্থ কি?
ইতিহাস সাক্ষি যে, একজন সেনা অফিসারের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির দায় থেকে শেখ কামালকে বাঁচানোর কারণে বঙ্গবন্ধুকে চরম মুল্য দিতে হয়েছিল। আজ এত বছর পর, ৬৭ জন সেনা অফিসার হত্যাকান্ড এবং তাদের পরিবারের স্ত্রী কন্যাদের শ্লীলতাহানির কারনে, সন্দেহভাজন তাপস-নানকদের বাঁচানোর চেস্টা করা হলে, ৭৫ এর সেই বিয়োগান্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি অসম্ভব কিছু নয়। দেশের স্বার্থেই এ ধরণের ঘটনা আবারো ঘটুক , এটা কেউই চাইবেন না। তাই শ্রেফ ১/১১ পরবর্তি হাসিনা আটকের সময়ে তাপসের আইনজীবি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালনই, তাকে বিচারের কাঠগড়া থেকে বাঁচানোর একমাত্র যোগ্যতা হতে পারে না।