somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশ্রু জলে লেখা হবু এফিটাফ। কেউ কি এক হতভাগ্য পুত্রের আর্তিতে সাড়া দেবেন?

৩০ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আমার বাবা শয্যাশায়ি। যে অবস্থা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা নেই, যদি না স্বয়ং আল্লাহর মেহেরবানি হয়। আমি জানি, তার তিরোধ্যানের পর লেখা হয়তো আর সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এক ধরণের দ্বায়িত্ববোধ থেকে আমার বাবার ইতিহাসটা ছড়িয়ে দেবার নিমিত্তেই কিবোর্ড তুলে নিলাম।)

সনটা জানা নেই। তবে সেটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কার কাছাকাছি। বৃটিশদের ঠিকাদার রহমতুল্লাহ, রাতের ত্রিপ্রহরে উঠেছেন তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য। বাইরে কিসের যেন শব্দ শুনে সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারেই ঘর থেকে বের হলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর বুকে শুয়ে তখন ৪০ দিনের শিশু মোহাম্মাদুল্লহ।

ঘরে ফিরে বেশ অসুস্থ বোধ করলেন রহমতুল্লাহ। হঠাৎ কোমড়ের ব্যাথায় কুকরে কাতরাতে থাকলেন। বিচলিত দ্বিতীয় স্ত্রী নাজনিন বানু। ছোট ছোট ৬ ছেলে মেয়ে নিয়ে তখন চিৎকার কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। কান্নার আওয়াজ শুনে বড় তরফের দুই ছেলেও উপস্থিত। কোরান দোয়া দুরুদ কলমা পড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু বিধাতা সবার আহবানকে উপেক্ষা করেই রহমতুল্লাহকে ফযরের আযানের সময়েই নিজের কাছে ডেকে নিলেন।

নাজনিন বানু বড় একা হয়ে গেলেন। প্রায় বছর বিশেক বয়সে বড় স্বামী এভাবে প্রয়াত হয়ে যাওয়াতে কি করবেন কিছুতেই মনস্থির করতে পারলেন না। স্বামির ভিটা ছেড়ে যাবেনই বা কোথায়?

স্বামির মৃত্যুর ৪০ দিন পার হয়েছে কি হয়নি ! বড় তরফের দুই ছেলে এসে নাজনিন বানুকে খুবই বিনয়ের সাথে বললেন, আম্মা এবার যে বাড়ি থেকে আপনাকে চলে যেতে হবে।

কথাটা শুনে যেন নাজনিন বানুর মাথায় বজ্রাঘাত হলো। তিনি বিলক্ষণ জানতেন পিতার দ্বিতীয় বিবাহের কারণে বড় তরফের দুই ছেলে মোটেও সন্তষ্ট ছিল না। কিন্তু নিজের বয়সের চেয়ে ঢের বড় হলেও ওদের তিনি মাতৃস্নেহ দিতে তো কোনদিন কার্পণ্য করেননি। তাছাড়া বড় বৌ মারা যাবার পরেই তো তিনি এ ঘরে এসেছেন। তাও নিজের ইচ্ছায় তো নয়।

বাপের বাড়িতে থাকার মত কেউ নেই। এক ভাই পাগলা বিড়ালের কামড় খেয়ে নিজেও উন্মাদ হয়ে পথে পথে ঘুরে।অন্য ভাইয়েরা নিজের ঘর সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। তাই মা বাপ হারা বালিকা বোনটিকে অবস্থাপন্ন পৌঢ়ের ঘরে বিয়ে দিয়ে বোঝা কমিয়েছে।

এখন এতগুলি ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনি যাবেন কোথায়। তিনি বড় তরফের দুই ছেলেকে যতই বোঝান, তারা অবুঝ। তাছাড়া নিয়মিত শরিরচর্চা করে বলে পাড়ার লোকও সমিহ করে চলে ওদের। আর টাকা পয়সার জোরও ওদের। অনুশোচনা থেকে কিনা জানি না, তবে রহমতুল্লা অন্তত ব্যাবসা আর টাকা পয়সার ব্যাপারগুলি বড় তরফের ছেলের হাতেই ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তবে সেদিনের যুবতি নাজনিন বানুর আত্মসম্মানবোধটুকু ছিল। ছেলের হাতে লাথিগুতা আর অপমানের জ্বালা থেকে ভাগ্যের হাতে নিজেকে ছেড়ে দেয়াটাই সমীচিন মনে করলেন। তাই কোন একদিন এতগুলি ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে পথেই নেমে গেলেন। পেছনে থেকে গেলো স্বামীর ভিটা। সন্তানদের জন্ম থেকে শুরু হয়ে বেড়ে উঠার স্মৃতি চিহ্ন। প্রথম ও শেষ ভালবাসার আদি থেকে অন্তিম চিহ্ন। সব পেছনে থেকে গেলো।

বিধাতা একটি দরজা বন্ধ করে দিলেও খুলে দেন আরেকটি। নাজনিন বানুর ঠাই হলো দূর সম্পর্কের ভাইয়ের বাসায়। ছোট ৮ ফিট বাই ৮ ফিট একটি ঘরেই গাদাগাদি করে থাকতে হলো। দুবেলা দুমুঠো ভাতের বিনিময়ের ভাইয়ের ওখানে ঝিগিরি করতে হতো। তাতেও ভাই বৌ এর অনেক লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা সইতে হতো।

আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত নাজনিন বানু মুখে কিছুই বলতেন না। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ দিনের পর দিন অশ্রু হয়ে ঝরেছে। মোনাজাতে একান্তেই সেই দুঃখের কথা শুধু আল্লার কাছেই বলতেন তিনি।

দিন যায়। চার মেয়েই বড় হয়ে যাচ্ছে। পাত্রস্থ করতেই হবে। তাই এখান ওখান থেকে ধনি আত্মিয়স্বজন আর একে ওকে ধরে বড় তিন মেয়েকেই পার করলেন।

প্রতিদিন শরিরের ঘাম আর চোখের জল দেখতে দেখতেই বড় হতে থাকলো সেদিনের সেই শিশু । স্কুল বলতে বিনা মাইনের সরকারি স্কুল। মায়ের দুঃখকে খুব কাছে থেকে দেখা আর বাবার আদর আর স্নেহ বঞ্চিত শিশু কি করে যেন সব বুঝতো। অন্যান্য শিশুরা যখন ঈদ পরবে কিংবা বিশেষ দিনে জামা খেলনা কিংবা ভালো খাবারের বায়না ধরতো, তখন শিশু মোহামাদুল্লাহ মনের আশা মনের ভেতরে রাখার সামর্থ্য তৈরি করলো।

শুধু একবার বোধ করি যে বাসায় আশ্রিত ছিল, সে বাসায় বিয়ের খাবারের সময় খানিকটা ফিরনি খাবার বাসনা জেগেছিল। মামির মুখ ঝামটা খেয়ে অপমানিত হয়ে আবার মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে অভিমানে স্তব্ধ মোহামাদুল্লাহ সেই যে কারো কাছ থেকে কিছু চাইবার বাসনা ত্যাগ করেছিল, সেটি আজ পর্যন্ত বজায় আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সারা বাংলায় তখন আকাল। চারিদিকে হাহাকার। কোথাও একমুঠো চাল নেই। বেজন্মা চার্চিলের কারণে চাল ডালে সমৃদ্ধ বাংলার কত মানুষ যে মারা গিয়েছে তার ঠিক নেই। তবে সংখ্যাটা কোটি ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হবার মত কিছু নেই।

সেই ভয়ংকর আকালের দিনে দূর সম্পর্কের ভাইয়ের ঘরেও চাল বাড়ন্ত। চেয়ে চিনতে কতদিন। বাধ্য হয়েই যাকাত প্রার্থনা আর আত্মিয় স্বজনদের বাড়িতে রান্নার কাজে নেমে, ছেলে মেয়েদের জন্য একমুঠো অন্ন জোগাড়ের নির্মম সংগ্রামে নেমে পড়তে হলো নাজনিন বানুকে। মোহামাদুল্লার বেশ মনে ছিল, সামান্য ভাত নুন মেখে ৭ ভাগ করা হতো। তবে সবচেয়ে ছোট বলে মোহামাদুল্লাহর ভাগে কখানি ভাত বেশি জুটতো।

মায়ের কস্টকে বৃথা যেত না দেবার একটা জেদ ছিল। তাই স্কুলের পাঠ না চুকতেই কাজে নেমে পড়লো সে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সয়ে বড় ভাইটি জেদ আর রাগি হয়ে গেলেও, মোহামাদুল্লাহ ছিল ব্যাতিক্রম। অসম্ভব সহ্য শক্তি আর ধৈর্য্য দিয়েই যেন বিধাতা তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।

মায়ের কষ্ট লাঘবের কঠিন পণে বালক কিশোর আর যুবক বয়সের সব শখ আল্লাদকে পায়ে ঠেলে দিতে তার একটুও বাধেনি। তাই বিধাতার করুণা ছিল এই অসহায় এতিম ছেলেটির প্রতি।

সৎ কর্মনিস্ট আর পরিশ্রমি বলে মালিকের নজরে পড়ে চাকুরিতে তার উন্নতি হতে থাকলো। মা ছেলে মিলে পাই পাই করে জমিয়ে প্রথমে একটা দোকানের মালিক হয়ে গেলো।খুব ধীরে হলেও অবস্থা ফিরতে শুরু করলো। যে ছোট ঘরে এতদিন আশ্রিত ছিল, সেই ছোট ঘরটি পয়সা দিয়ে কিনে নেওয়া হলো। কিন্তু বিধি বাম !

নাজনিন বানু কঠিন অসুখে পড়লেন। বড় ভাই নতুন বিয়ে করেছে। চাকুরির ঠিক ঠিকানা নেই। বোনরা তত দিনে শশুড়বাড়িতে। ওদের অবস্থাও ভালো নয়। যে মা এত কস্ট করেছে, সে কি তবে চোখের সামনে মারা যাবে?

নাহ। মোহামাদুল্লাহ কোনমতেই সেটা হতে দিতে পারেনা। দোকান বিক্রি করে দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তুললো। পুরানো মালিকের কাছে আবারও চাকুরি শুরু করলো। আবার জীবন সংগ্রাম। কিন্তু তাতে দমে যায়নি সেদিনের মোহামাদুল্লাহ।

আবারও নিজের শখ আল্লাদ জলাঞ্জলি দিয়ে শুরু হলো কস্টের জীবন। কিন্তু এবারের চিত্রনাট্য ভিন্ন। বিধাতার আশির্বাদ আর মায়ের একান্ত দোয়ায় খুব অল্প দামেই আরেকটি দোকান কিনতে পারলো সে।

সেখান থেকেই তার উত্থান। তার দোকানে সওদা করতে আসা বেশির ভাগ খদ্দেরই ছিল ব্যাবসায়ি। কয়েকজন আবার এলাকার নামকরা ঘাঘু ব্যাবসায়ি। তাদের কথাবার্তা শুনে, তাদের সাথে আলাপ করে, তাদের পরামর্শ শুনে, সদ্য যুবক মোহামাদুল্লাহ ব্যাবসার অনেক কিছু শিখে গেলো।

এভাবেই একের পর এক বিভিন্ন ব্যাবসায় লাভের পর লাভ হতে হতে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মোহামাদুল্লাহকে। মাকে নতুন একটা আলাদা নতুন বাড়ি কিনে দিয়েছিল।লো)পিঠাপিঠি সবচেয়ে ছোট বোনটি ছোটকালে বলতো, ভাইয়া তুই যখন কামাবি তখন আমরা খুব মজা করে মিস্টি, আঙ্গুর বেদানা খাবো।

ভাই বোনের কোন শখ আল্লাদ বাকি রাখেনি মোহামাদুল্লাহ। এমনি কি ভাবি আর ভাতিজা ভাতিজিদের নিজের শৈশবের চেপে রাখা সব শখ পুরণ করতে সব কিছুই করেছিল সে।

শ্রমিক অবস্থায় মালিকের জুলুম নির্যাতন আর অন্যায় অবিচার তার ঢের দেখা ছিল।পরে তার এক সময়ের সহকর্মিদের অনেকেই কম্যুনিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। তাই ব্যাবসায়ি হিসাবে বেশ খ্যাতি হতেই মোহামাদুল্লার কাছেই কম্যুনিস্ট পার্টির জন্য চাদা নিতে নিয়মিতই আসতো ওরা। শ্রমিকের দুঃখ কস্ট শ্রমিকই বুঝতো। তাই অকৃপণ উদারতায় মোহামাদুল্লাহ ওদের সাহায্য করতো।

কিন্তু বাধ সাধলো তৎকালিন পাকিস্থানি সামরিক জান্তা। এক ফরমান বলে নিষিদ্ধ করা হলো কম্যুনিস্ট আন্দোলন। অনেককে গোয়েন্দা সংস্থা গুলি করে মেরে ফেললো। অনেককে অত্যাচার করলো। তাদেরই একজনের মুখে মোহামাদুল্লার অর্থনৈতিক সাহায্যের কথা শুনে সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হলো মোহামাদুল্লাহ।

জীবনে এর আগে শুধু স্বামির ঘর থেকে বিতাড়িত হবার মত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন নাজনিন বানু। অর্ধশিক্ষিত তায় মেয়ে মানুষ। কে তার আর্তি শুনবে? আত্মিয় স্বজন কত জনের দুয়ারে ঘুরলেন নিজের কলিজার টুকরাকে জেল থেকে বের করতে সাহায্যের জন্য। কিন্তু সেধে পড়ে কে যাবে পাকিস্থানি হানাদার সামরিক সরকারের লেজে পারা দিতে?

বিধাতা যাকে সাহায্য করেন, সেটা কোথা থেকে আসে, কেউ জানে না। তাই তো একটি প্রভাবশালি দৈনিকের মালিকের জ্ঞাতি ভাইয়ের সাথে জেলেই পরিচয় ঘটলো মোহামাদুল্লাহর। তার জীবনের ঘটনা শুনে কেন জানি মায়া হলো সেই ভদ্রলোকের। নিজের সাথে সাথে তাই মোহামাদুল্লাহকে জামিনে ছাড়িয়ে আনলেন তিনি। তবে হ্যা। বিনা পয়সায় নয়। ভালো একটা রকম খরচ করতে হয়েছিল। সাথে মুচেলিকা যে জীবনে আর কম্যুনিস্ট পার্টির ধারে কাছেও যাওয়া যাবে না।


সারা জীবন শখ আল্লাদ কিছুই ছিল না। তবে বোধ করি শখ ছিল খুব খুবই সুন্দরি একটি মেয়েকে বিয়ে করার। তাই জেল থেকে ফিরে ব্যাবসায় থিথু হতেই মা কথাটা পারলেন। ততদিনে কয়েকটি বাড়ির মালিক মোহামাদুল্লাহ। সে আর এতিম অসহায় তুচ্ছতাচ্ছিল্যের পাত্র নয়। সে এলাকার বিশিস্ট ব্যাবসায়ি। যার ব্যাবসায় বাধা মুটে মজুরের সংখ্যাই অনেক। কয়েকটা ম্যানেজার শশব্যাস্ত। সকাল থেকে বেশ রাত পর্যন্ত দম ফেলার ফুরসত পর্যন্ত নেই।

খালাতো বোন চতুর্দর্শি মেহেরুন্নেসাকে স্কুলে যাওয়া আসার সময় বেশ কবার দেখেছিলেন মোহামাদুল্লাহ। অসম্ভব ফর্সা হাল্কা পাতলা গরণ আর সুন্দরি এই মেয়েটিকেই পছন্দ হয়েছিল তার। সেই পাড়ার এক বন্ধুর সাহায্য মা আর খালা দুজনকেই বার্তা পাঠিয়েছিলেন।

বোনের ছেলে, ভাল বংশ, এত পয়সা হলেও চরিত্রে কোন দাগ নেই। বয়সের ফারাক হলেও খালা রাজি হলেন। জীবনে প্রথমবার একটি শখ করে সেটা পুরণ করতে পেরেছিলেন মোহামাদুল্লাহ।

১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধ এর পর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাবসার বাড়বাড়ন্তে ভাটা পড়লো। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার বোনের বুকে আশ্রয় নেয়া তরুণ ভাইগ্নাকে পাকিস্থানি শুয়োরের বাচ্চারা গুলি করে মেরে ফেলেছিলো। আর যুবতি ভাগ্নির সামনেই ভাগ্নি স্বামিকে।

ব্যাবসা করতে গিয়ে পাকিস্থানি আমলে অনেক পাকিস্থানি পাঠানের সাথে যে সখ্যতা ছিল, স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করার পর তাদেরকে ঘৃণা শুরু করলেন মোহামাদুল্লাহ। সম্পর্ক তো চুকে গিয়েছিল অনেক আগেই। এমনকি বিহারিদের পর্যন্ত সহ্য করতে পারতেন না। যে বাসা কিনেছিলেন তার আশে পাশে অনেক বাড়িতেই বিহারিরা থাকতো। প্রতিদিন উঠতে বসতে অনেক টিপ্পনি তাকে সহ্য করতে হয়েছিল। অথচ ওই এলাকার মধ্যে এত বিত্তশালি আর কেউ ছিল না। আর পাকিস্থানিদের জোরে তখন বিহারি ছুচোরাই হয়ে গিয়েছিল বাঘ।

স্বাধীনতার পর নতুন আশায় আবার ব্যাবসা শুরু। কিন্তু শান্তি কই? অস্ত্র হাতে করে নিত্য নতুন অচেনা লোক আসতো চাদা চাইতে। সেখানে দিতে হতো। আর ব্যাবসায় অসাধুতা করে অল্পদিনের চারিদিকে বিভিন্ন লোকজন লালে লাল হয়ে গেলেও মোহামাদুল্লাহকে সেই অসাধুতা গ্রাস করতে পারেনি। মায়ের কঠোর সেই বাণী, কম খাও কম পর কিন্ত কোনদিন হারামের এক পয়সাও খেও না, অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আজ অব্দি চলছে।

জীবনে এক সময় দাওয়ার ব্যাপারে অনেক কস্ট করেছিলেন বলেই, স্বচ্ছলতা আসার পর অন্তত খাওয়া দাওয়ায় কোন কার্পণ্য করেননি তিনি। মেহেরুন্নেসা হয়তো দুপুরের রান্না করে স্বামির জন্য অপেক্ষা করছেন। অফিস থেকে ফেরার পথে মোহামাদুল্লাহ চোখে পড়লো ভালো কোন মাছ বা মাংস। আর যাবে কোথায়? সেটি কিনে এনে রেধে দাওয়ার পরই বিকেলে দুপুরের খাওয়া খেতেন মোহামাদুল্লাদ।

হ্যা, এই জীবন সংগ্রামি মানুষটিই আমার বাবা।যে মানুষটি অমানসিক পরিশ্রমে বিচলিত হতো না, এই তো সেদিন পর্যন্ত কয়েক মেইল হেটে হেটে এখানে সেখানে যেতো, সেই মানুষটি আজ শয্যাশায়ি। মানুষের কথার নিচে থাকতে হতে পারে বলে কোনদিন কারো কাছে কিছু চাইতো না। অসুখ বিসুখ যাই হোক, ওষুধ ছুয়েও যে দেখতো না, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এমনকি আমার মায়ের উপরেও নির্ভর করতো না, আজ তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে আমার মায়ের সেবার উপর। কখন স্মৃতি থাকছে, কখন থাকছে না। মোট কথা হয়তো প্রস্থানের সময় টুকু খুব নিকটে।

বাবার অনেক আদরের ছিলাম। তাই ধর্মের বানী, দর্শনের কথা কোন কিছুই আমাকে সান্তনা দিতে পারছে না। তাই প্রথা ভেঙ্গে এই লেখাটি লিখতে হলো।

বাবার কোন শখই পুরণ করতে পারিনি। সৎ উপার্যনের কথাটি ছাড়া। এজন্য আরো অনুতপ্ত মনে হচ্ছে।জানি এজন্য অনেক প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে। কিন্তু আমার মানসিক অবস্থা সে সব প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য মোটেও তৈরি নয়।

তাই পাঠকদের কাছে অনুরোধ, যেন বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেন তিনি আমার অক্ষমতাকে ক্ষমা করুন। এবং এই মানুষটিকে অনন্ত শান্তি দান করুন। আমিন।

(ব্যাক্তিগত কারণেই সবগুলি নামই ছদ্ম আকারে দেয়া হলো)
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×