শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আজ ৩১শে মে। তার মৃত্যু দিবস। ১৯৮১ সালের ৩১শে মে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কিছু বিপথগামি উদভ্রান্ত এবং বিদেশি উস্কানিতে বিভ্রান্ত হাতে গোনা কয়েকজন অফিসারদের হাতে তিনি নির্মমভাবে শহীদ হন।
সেদিন সারা দেশের লোক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল।
বীর মুক্তিযোদ্ধা, এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসকের এই নির্মম প্রয়াণে বাংলাদেশের মানুষ সহজভাবে নেয়নি। একারণেই খুনিদের পালানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা সবাই ধরা পড়েছিল, এবং ফাসি কাষ্ঠে ঝুলেছিল।
এপর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার সততা দেশপ্রেম এবং নিষ্ঠা নিয়ে সন্দেহের শুরু হয়েছে মাত্র এই কয় বছর আগে থেকে। সেটা নিছকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনিত।
কি দোষ করেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান?
চলুন খুব সংক্ষেপে দেখি উনি কি কি করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ক্যু পালটা ক্যু এর কারণে সেনাবাহিনী তো বটেই বরং সারা দেশ একটা চরম অস্থিরতার মধ্যে পতিত হয়েছিল। অজানা আশংকায় দেশবাসি প্রহর গুনছিল।
১৫ আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থানের পর তৎকালিন আওয়ামি লিগের বাঘা বাঘা নেতারাই সরকার গঠন করেছিলেন। সেটা খন্দোকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বেই।
কিন্ত সিভিল বনাম সেনাবাহিনীর ক্ষমতার দন্দে খন্দোকার মোশতাক, আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন মোশতাক। সেটা ছিল ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ সাল। এ সময় বন্দি হন, সেনাবাহিনীর অফিসার এবং সৈনিকদের মধ্যে চরম জনপ্রিয় মেঃ জেঃ জিয়াউর রহমান।
এটা সাধারণ সৈনিকরা মানতে পারেনি।
তাই ৭ই নভেম্বর সিপাহি জনতার স্বতঃফুর্ত পালটা অভ্যুত্থানে খালেদ মোশারফ ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হন। এবং ক্ষমতার পালা বদলে প্রথমে সামরিক প্রশাসক হিসাবে এবং পরে গণভোটে ক্ষমতায় বসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর যা হয়েছিল, তাকে শ্রেফ বিশৃংখলা বললে অন্যায্য হবে। তবে একটি যুদ্ধবিধবস্ত দেশকে শৃংখলার মধ্যে আনতে সময় প্রয়োজন হয় সেটিও মিথ্যে নয়।
এজন্য যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রয়োজন, দুর্ভাগ্যবশত তার প্রতিফলন দেখাতে ব্যার্থ হয়েছেন বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে তার রাজনৈতিক সহকর্মিরা।
বংগবন্ধুর হিমালয় সমান জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে যেখানে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালি ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো, সেখানে রাজনৈতিক অদুরদর্শিতা, স্বজনপ্রীতি এবং ভুল মানুষদের উপর আস্থা অর্পন করায় পুরো প্রশাসনই হয়ে পড়ে অর্থব। শুরু হয় দেশব্যাপি চরম মাৎসন্যায়।
এক দল, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপক লুটপাটে নিমজ্জিত হয়। অন্য দল সব হারানোর বেদনায় প্রতিরোধ শুরু করে।
ফলে আইন শৃংখলা রক্ষায় বঙ্গবন্ধুকে রক্ষি বাহিনী নামের আলাদা একটি বাহিনী তৈরি করতে হয়। দেশ শাসনে ক্রমাগত ব্যার্থতার খবর ধামাচাপা দিতে একের পর এক দলন নিপীড়ন আর বাক স্বাধীনতার গলা চেপে ধরা হয়।
যার চুড়ান্ত রুপ হিসাবে ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি, চিরকাল গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করে, গণতন্ত্রের কবর রচনা করেন।
এর ফলে দেশে শুধু মাত্র একটি রাজনৈতিক দল এবং ৪টা পত্রিকা ছাড়া বাকি সব দল এবং সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হয়। যা ৪র্থ সংশোধনি হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধানে যুক্ত হয়।
বাকশাল অর্থাৎ বাংলাদেশ কৃষকশ্রমিক আওয়ামি লিগ গঠনের পর মুল সংগঠন হিসাবে আওয়ামি লিগেরও বিলুপ্তি ঘটে।
বঙ্গবন্ধুর কাছে দেশের সব মানুষের আকাশ সমান প্রত্যাশা ছিল। কিন্ত তার ব্যার্থতা চির আবেগি বাংলাদেশের মানুষকে বিতশৃদ্ধ করে তোলে। বিশেষ করে যখন দু বেলা দুমুঠো ভাত এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে ব্যার্থ হওয়াতে সাধারণ মানুষ তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ক্ষমতায় আসবার পরেই প্রথম যেটি করেন, সেটি হচ্ছে ৫ম সংশোধনির মাধ্যমে বাকশাল বিলুপ্ত করে বহু দলিয় গণতন্ত্র চালু করণ।
অনেকেই অভিযোগ করেন যে, এর ফলে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধীতা করা এবং পাকিদের গণহত্যা এবং নারী ধর্ষনের সহযোগি রাজনৈতিক সংগঠন জামাত এ ইসলামি এর ফলে রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ পায়।
কিন্ত এটা বলে না যে, এর ফলে বিলুপ্ত আওয়ামি লিগ আবার প্রাণ ফিরে পায়। একারণেই দুইবার আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় বসতে পেরেছে এবং রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছে।
ক্ষমতায় বসে জিয়াউর রহমানের সততা দৃঢ়তা এবং সুশাসক হিসাবে নিরলস পরিশ্রমের ফলেই , বঙ্গবন্ধুর আমলে তলাবিহীন ঝুড়ি অপবাদে ক্লিস্ট স্বাধীন বাংলাদেশে প্রাণ ফিরে আসে।
যেখানে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ভারত ও সোভিয়েট ব্লকের তকমা পড়াতে সেই সময়কার ধনি পশ্চিমা গোষ্টি মুখ ফিরিয়ে ছিল, জিয়াউর রহমান সেই পশ্চিমা গোষ্ঠিকে বাংলাদেশের প্রতি পুনরাইয় আকর্ষিত করতে সক্ষম হন।
ফলে বাংলাদেশে বিদেশি সাহায্য এবং বিনিয়োগ দুইই বেড়ে যাওয়াতে অর্থনীতির চাকা আবারও সচল হয়।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকালিন সময়ে পশ্চিম পাকিস্থানিদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের ধনি দেশগুলির উচ্চ মাত্রায় দহরম মহরম ছিল। যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় হবার পর, ব্যাপক অপপ্রচারের কারণে স্বাধীনতার পর পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি বাংলাদেশের ব্যাপারে একধরণের ঋণাত্মক ধারণা পোষণ করতো। এমন কি অনেক দেশ সেই সময় স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার প্রজ্ঞার ব্যাবহার ঘটিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলাদেশের কুটিনৈতিক সম্পর্কের অচলাবস্থার ইতি ঘটান। ফলে সেখানে শ্রম বাজারে ব্যাপক হারে যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃস্টি হয়। আজ আমাদের অর্থনীতিতে বিদেশি রেমিটেন্সের যে রমরমা অবস্থা সেটা শহীদ জিয়ার একক কৃতিত্ব।
তাছাড়া আভ্যন্তরিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে তিনি বঙ্গবন্ধুর করা কল কারখানা জাতিয়করণ রোহিত করেন, এবং ব্যাক্তি মালিকানায় কারখানাগুলি ছেঁড়ে দেন। ফলে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি আর অলসতার জাল ছিড়ে দেশীয় শিল্প আবারও চাঙ্গা হওয়া শুরু করে।
বাঙালি জাতিয়তাবাদের কারণে বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নাতাবাদ শুরু হয়। ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পাকিদের এক সময়কার সহযোগি চাকমারা সশস্র আন্দোলন শুরু করে। সেটি মোকাবেলায় এবং বৃহত্তর ঐক্যের জন্যই শহীদ জিয়া, বাংলাদেশি জাতিয়তাবাদি রাজনীতি শুরু করেন।
এছাড়া বাংলাদেশকে নতজানু করার বদ মতলব থেকে উদ্ভুত ফারাক্কা বাধ নামের অবৈধ কর্মকান্ড দিয়ে বাংলাদেশকে মরুকরণ করতে চাইলে, স্বাধীনচেতা জিয়া, জাতিসংঘে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যার ব্যাপারে বিশ্ববাসির দৃস্টি আকর্ষন করেন। ফলে ভারত বাধ্য হয় বাংলাদেশের ন্যায্য পানি দিতে।
মোদ্দা করা ধবংসপ্রায় বাংলাদেশকে খাদের কিনারা অত্যন্ত সফল টেনে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আজ যাদের মুখ থেকে শুনছি যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, অথবা বাই চান্স মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, পাকিস্থানিদের চর ছিলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্থানে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, তাদের চেহারা গুলিও চিনে রাখুন।
এদের নের্ত্রিস্থানীয় একজন স্বাধীনতার ৯ মাস, পাকিস্থানিদের মাসিক ১২০০ রুপি ভাতায় দিন পার করেছেন। পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর প্রহরায় ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়িয়েছেন। েমন কি পাকিস্থানি হানাদারদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রফেশনাল বাহিনী হিসাবেও সার্টিফিকেট দিয়েছেন। তার পুত্রের জন্ম হলে, পাকিস্থানি বাহিনীর সদস্যরা যে মিস্টি বিলিয়ে আনন্দ করেছিলো, সে কথাও অকপটে বলেছেন।
আরেকজন মহিলা নেত্রি, যিনি জিয়ার বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানোতে বেশ নাম কামিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি এবং উনার তৎকালিন দল, মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরর যুদ্ধ বলে ঘোষনা করে, হাতে হাত দিয়ে বসে ছিলেন। আর স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে সশস্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। এমনকি উন্মুক্ত জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গশত্রু এবং তার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর মত ঔধর্ত্যপুর্ণ বক্তব্যও দিয়েছিলেন।
এছাড়া প্রতিমন্ত্রি মর্যাদার একজন তো পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর প্রমোদবালক বলে কুখ্যাতি পেয়েছেন।
আর তথাকথিত সুশিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার আড়ালে আওয়ামি লিগের পদলেহনকারি গোষ্ঠির প্রধান দুইজনের একজন স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্থানি হানাদারদের মুরগি সাপ্লাইয়ের কাজে নিয়োজিত ছিল। আরেকজন পাকিস্থানিদের পরম আস্থাভাজন প্রশাসকের ভাতিজা হবার সুবাধে, খেয়ে দেয়ে ফুর্তি করেছিল সেই নয় মাস।
শহীদ জিয়ার নামে কুৎসা রটনা যারা করে, তাদের পরিচয় একটাই। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধী। কারণ একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা এবং কার্যকর করতে যিনি সবচেয়ে বড় ভুমিকা রেখেছিলেন, সেই শহীদ জিয়াকে এরা নিন্দা করে।
আর এই দেশ বিরোধী শক্তি যখন দলিয় অন্ধ বেশ কিছু বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের আস্থার মঞ্চ হয়, তখন লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।
শহীদ জিয়ার যে নিস্কলুষ এবং দেশপ্রেমিক প্রজ্ঞাবান ভাবমুর্তি রয়েছে, সেটিকে ফরমাইসি আইন আদালত কিংবা ভাড়াটে বুদ্ধিজীবি অথবা প্রকাশ্যেই দেশদ্রোহি একটি রাজনৈতিক দলের মিথ্যা অপপ্রচারে কোনদিন মলিন হবে না।
বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একটি দেশে পরিণত করতে গিয়ে ভারতের চক্ষুশুল হয়ে, দেশের জন্য প্রাণ দেয়া, এই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাস্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রয়াণ দিবসে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আল্লাহ এই বীর শহীদকে জান্নাতবাসি করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:২০