পৃথিবীতে কত দিন ধরে মানুষের বাস তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা আছে। আবার বিভিন্ন ধর্মেও এ নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক আছে। কিন্তু আমরা মানুষেরা যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সামাজিক জীব এবং হাজার হাজার বছর ধরে এ পৃথিবীতেই বসবাস করছি তা নিয়ে কারোই বিতর্ক থাকবার কথা না। একই সাথে আমাদের সমাজে বসবাসের জন্য যে প্রয়োজনগুলো দেখা দেয়, কিংবা আমাদের সমস্যা ও বাধা-বিপত্তিগুলো মেটাতে যে জ্ঞানের প্রয়োজন সে জ্ঞানগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরবার জন্য পৃথিবীতে যে বহু জ্ঞানী মানুষ এসেছেন এ নিয়েও কারো বিতর্ক নেই। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু জ্ঞানী মানুষ তাদের নাম লিখিয়েছেন যারা সাধারণ মানুষদের চাইতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অধিকতর পারদর্শী ছিলেন। আমাদের বর্তমান সমাজে এমন জ্ঞানী পাওয়া যায় সেটা বলতে একটু দ্বিধাই হয়। প্রাচীনকালে, এমনকি ত্রিশ বছর আগেও যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করত সেই রকম মানুষ পাওয়া বড়ই কষ্টের ব্যপার। বর্তমান সময়গুলোতে যারা আমাদের কাছে জ্ঞানী বলে পরিচিত তারা আবার বিতর্কিত বলেও অনেকের কাছে সন্দেহের তালিকায় থাকে। যাই হউক, আমরা মানুষেরা শুধু জ্ঞানী হিসেবেই পাল্টাইনি, আমাদের সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলোর একটি হচ্ছে, আমরা মুখে খুব জ্ঞান দেই কিন্তু কাজের বেলায় করিনা একটুকুও। এদেরকে এক কথায় বলা যায় বে-আমল বক্তা।
এখনকার সমাজে মানুষের কাছে জ্ঞানী হওয়া বেশ সহজ। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে তকমা টিকিয়ে রাখা বড়ই দুঃসাধ্য কাজ। বলতে পারা যায় এর জন্য সবচেয়ে বড় কারণ সমাজের পরিবর্তন। এক সময়ের জ্ঞানী মানুষটা সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক পালটে যান বিভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে। আবার অনেকেই বে আমল বক্তা হয়ে যান শুধুই নিজের দোষের কারণে।
আমরা সচরাচর অনলাইন মাধ্যমে, প্রিন্ট মিডিয়াতে, টেলিভিশন কিংবা রেডিওতে অনেক জ্ঞানী জ্ঞানী কথা বলে থাকি কিংবা লিখে থাকি। সমাজের অনেক ভাল মানুষই আছেন যাদেরকে বিতর্কের বাইরে রাখাই ভাল। কারণ তারা যদি কিছু ভুল করেনও তা নিয়ে বেশি কথা বলা ভুল। মানুষ মাত্রই ভুল। যেহেতু তিনি বা তারা অন্য গ্রহ থেকে আসেন নি। তাই তাদের ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের স্বভাব হচ্ছে জ্ঞানীদের ভুল নিয়ে কচলা কচলি করা। আর নিজের ভুলগুলো ঢেকে রাখা। অথচ এটা কোন ভাল মানুষের কাজ নয়।
আমরা আজ যা বলছি বা লিখছি তার কতটুকু নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করছি। বলা খুব সহজ কাজ, কিন্তু করে দেখানো অনেক বেশি কঠিন। আমাদের সমস্যা এই খানেই। আমরা জ্ঞান দিতে পছন্দ করি, কিন্তু নিতে নয়। আবার নিজের বলা কথা কতটুকু করে দেখালাম তা নিয়ে ভাবিনা।
সর্বশেষে বলতে চাই নিজের অপরাগতার কথা। আমি নিজেও এই ব্যপারে সার্থক নই। তবে পাপ থেকে মুক্ত থাকবার জন্য এটুকুই বলতে চাই, আল্লাহ্ পাক যেন নালায়েক আমাকে বে-আমল বক্তার কাতারে না রাখেন।