somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌন নির্যাতনের ভিকটিম ও সাধারণের নৈতিকতা।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পয়লা বৈশাখের ঘটনায় অফিসিয়াল লোকসহ অনেককেই বলতে শুনলাম, যাদের উপর নির্যাতন হয়েছে, তারা তো অভিযোগ করেনি? অথবা লিটন নন্দীকেও দেখলাম বলা হয়েছে, উনি যাদেরকে উদ্ধার করেছেন তারা এখন কোথায় আছে, তাদের কি অবস্থা কিংবা তারা কি আসলেই দাবী করেছে যে তারা নির্যাতিত হয়েছে?

বিশ্বাস করুন, আপনার সাথে যদি সেই ভিকটিমদের দেখা হয়, প্রত্যেকটা ভিকটিম এই ঘটনাটিকে প্রথমেই অস্বীকার করবার চেষ্টা করবেন। এবং এই অস্বীকারই কিন্তু তাদের বাকী জীবনে ঠিকভাবে বেচে থাকবার একমাত্র উপায়। যৌন নির্যাতনে ভিকটিম যতটা অত্যাচারিত হয়, তার থেকে কয়েক হাজার গুণ অত্যাচারিত হয় পরবর্তীতে সেই ঘটনা স্বীকার করবার সময়, প্রমাণ করবার সময়। সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা সে যতই ভুলে যাবার চেস্টা করুক না কেন, বারবার মনে করিয়ে দেয়ার সময় সেই একই রকম অত্যাচারিত হবার কষ্ট তাকে তারিয়ে বেড়াবে। যে মেয়েটি বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে সেদিন পয়লা বৈশাখ করতে এসে সেদিন টিএসসিতে হামলার শিকার হয়েছে, সে কি বাসায় গিয়ে বাবা মা কে বলতে পারবে যে সে এই হামলার শিকার হয়েছে? যে মেয়েটি তাদের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসে হামলার শিকার হয়েছে, সে কি আর সেই সাথে আসা বন্ধুদের সাথে আগের মতো কথা বলতে? সাথে থাকা বন্ধুদের দৃষ্টিই তাকে মনে করিয়ে দেবে সেদিনের সেই ঘটনা, আর বারবার সেই কষ্টের পুনরাবৃত্তি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিম নিজেই চেষ্টা করে যত অল্পের মধ্য দিয়ে ওই জায়গাটা ছেড়ে চলে যেতে। এবং এটা এমন একটা স্পর্শকাতর অভিযোগ, যে ভিকটিম গলা উচু করে অভিযোগও করতে ভয় পান, এমনকি আপনি যদি তার সাপোর্টে চিৎকারও করেন, ভিকটিম ও কিন্তু চেষ্টা করবে এরকম কিছু হয়নি এরকমটা বলবার, কেননা, দিন শেষে ওনাকেও বাড়ি যেতে হবে, বাড়ির লোকের সামনে সে কীভাবে এগুলো খুলে বলবে? তাতে করে হিতে হবে বিপরীত। সেখানেও তাকেই দোষারোপ করে তাকেই সাইজ করার সম্ভাবণাই বেশী।

এরকম একটা ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো মগবাজার ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে কোন এক সন্ধ্যা বেলায়। এটিএম মেশিনের সামনে বিশাল লাইনে আমরা দশবারোজন লোক। আর এটিএম মেশিনের পাশে ব্র্যাক ব্যাংকের কাচের দরজা টি আধখোলা, শাটারও অর্ধেক নামানো। একটা মেয়ে ব্যাংকে ঢোকার জন্য কাচের দরজার ঠিক সামনে দাড়ালে দারোয়ান হঠাত করে দৌড়ে আসে এবং দরজাটি ধাক্কা দিয়ে বলে ঢোকা যাবে না। পরিস্থিতিটা এমন, যে কাচের দরজাটি আর শাটারের মাঝে মেয়েটি চাপা খেয়ে দাড়িয়ে পড়ে, এবং সামনের দিকটা কাচের দরজার চাপায় পড়ায় মেয়েটিকে অত্যন্ত বিব্রতকর একটা অবস্থায় পড়ে যেতে হয়, দারোয়ান মনে হলো এরকম একটা দৃশ্যে একটা বিকৃত উল্লাস পায়, এবং সে সেই অবস্থায় দরজাটি রেখেই কথা বলতে থাকে, না ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঢোকা যাবে না। লাইনে দাড়ানো থেকে আমি চিৎকার করে বলি, ঢুকতে দিবানা ভালো কথা এভাবে চাপা দিচ্ছ কেন? চিৎকার শুনে দরজা আলগা করবার সাথে সাথে মেয়েটি বের হয়ে আসে এবং কাদতে শুরু করে। আমি দারোয়ান কে যখন আবারও চার্জ করতে যাই, তখন সে উল্টা বলে ওঠে, আমি তো বলেছি গেট বন্ধ, উনি তো জোর করে ঢুকতে গেছে। এবার আমি বলি এভাবে একজন মহিলাকে চাপা দিয়ে রাখবার সাহস তোমার হলো কিভাবে? ময়লা দাত বের করে দারোয়ান এবার বললো, আমি চাপা দিয়েছি এটা কে বললো? এই মহিলাকে জিজ্ঞেস করেন আমি চাপা দিয়েছি নাকি? এই রকম একটি প্রশ্ন শুনে মেয়েটি মুখে কাপড় দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়, এটাই স্বাভাবিক, বাংলাদেশের কোন মেয়ে এই অবস্থায় প্রকাশ্যে স্বীকার করবে যে সে এভাবে নিগৃহীত হয়েছে? সবচেয়ে অবাক ব্যপার হলো, এটিএম এর লাইনে দাড়ানো একটি লোকও এগিয়ে আসলোনা, পাছে লাইন মিস হয়ে যায়, উপরন্তু দুই একজন এই সময়ে মুখ ফুটে বলেই ফেলে, "ওই মেয়ে নিজেই অভিযোগ করলো না, আবার আরেকজন হিরো হইতে আসে!"


সেদিনের সেই মেয়েটিকে আর দেখিনি, কিংবা চেহারাও মনে রাখতে চাই নি। কারণ সেদিন তার পক্ষে শুধুমাত্র আমি এগিয়ে এসেছি, সেটা মনে করে সে যতটা না কৃতজ্ঞ হবে, তার চেয়ে বেশী করে তাকে অত্যাচার করবেতা। তার ওপর ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটা তার মনে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটবে, সেটা তার স্বাভাবিক জীবনের উপর কী পরিমাণ আঘাত হানবে, সেটা আমরা অনুমান করতে পারবো, কিন্তু বুঝতে পারবোনা নিশ্চয়ই।

কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকরা বা আইনরক্ষাকারীরা কি সেটা বোঝার চেষ্টা করবেন, নাকি, সেই দারোয়ানের মতো দাত বের করে বলবেন, কই, কেউ তো অভিযোগ জানায়নি, ভিকটিম নিজেতো কিছু বলেনি, আপনারা কেন বলেন?? আমাদের সাধারণদেরই নৈতিকতার সংস্কার আগে জরুরী নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×