somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি খবর, বল?

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কি খবর, বল?


রাত দুটোয় খুব ভাঙা-ভাঙা কণ্ঠস্বরে ওর ফোন, ‘তুই কই?’ তারপর কয়েকটা কথা। সেই কথা সব তো অার পাঠককে বলা চলে না, কারণ, কথাগুলো বন্ধুর। অামি থাকতাম কলাবাগান, ডলফিন গলিতে। বন্ধু ফোনে, সেই রাতে প্রায় অার্তনাদ করে উঠল, ‘তুই একবার অায়।;

‘কোথায়?’

‘ডিওএইচএস‘

‘কেন, কি হইছে?’

বন্ধুর গলা অস্থির, ‘তুই এক্ষণি অায়…’

‘কি হইছে বল না!’

বন্ধু বলল, ‘তুই অায়, তোর বুকের মধ্যে মাথা রেখে কানব‘

এই হচ্ছে মূল বার্তা। বন্ধুর বুকের মধ্যে বন্ধু মাথা রেখে কানতে চায়। কেন সেই কান্না, কী নিয়ে কান্না?’

ট্রয় ধ্বংস হয়ে গেল? সবকিছু হারিয়েছে সে? কে সেই ধ্বংসের কারণ? কারণ বলা বারণ। বন্ধুদের সব কথা পৃথিবী যেমন কোনোদিন জানতে পারেনি কখনও, অামিও বলব না। কিন্তু বন্ধুর কান্নার জন্যে, তার ভেঙে পড়াকে প্রশ্রয় দেবার জন্যে, নারীর ভালোবাসায় টক্কর খাওয়া বন্ধুর সমস্ত শূন্যতা ধরবার জন্যে অামার বুক তখন নিশ্চিত-নির্ভরতা। কারণ, অামরা বন্ধু। বহু বহুদিন দেখা না হলেও অামরা বন্ধু। অনেক দিন কথা না হলেও অামরা বন্ধু। তাই, অচেনা ফোনেও বন্ধুকে নাম বলতে হয় না বা অামিও অামার নাম না বলেও পরষ্পরকে অামরা চিনতে পারি। কথায়, অনুভবে কোনও গ্যাপ থাকে না। অনেকদিন পর দেখা হলেও, কথা শুরু হয় এমন ভাবে, যেন, গতকালও দেখা হয়েছে। গাতক বলেছেন, কতদিন দেখা হয়নি…কি খবর বল?

প্রাচ্যের মানুষ অামি, নিঃসঙ্গ পশ্চিমের এই নানারকম ‘দিবস‘ পালনে নীতিগতভাবে ঘোর বিরোধি। কিন্তু অামাদের দেশের গণমাধ্যম মূলত পশ্চিমের রেওয়াজেই গলা ভাজে। তাই পশ্চিমের দেধাদেখি বাবা-মা দিবস পালন হয় কিছুকাল দেখছি। বন্ধুত্ব দিবসও এইরকমই হচ্ছে অার কি। ঠেকাবে কে? এরপর, কে জানে কালে কালে অার কত কিছু দেখতে হয় পশ্চিমকে দেখে, কে জানে? এখন তো হাত ধোয়া দিবস, পা মোছা দিবসও হচ্ছে দেশে। ঠেকাবে কে?

হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয়ে যায় পুরোনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে। পুরেনো বন্ধু মানে পুরোনো সময়ের বন্ধু। যে সময় অামরা হারিয়ে ফেলেছি। সময় হারালেও, বন্ধুত্ব হারায় না। তবু পুরোনো হয়ে যায় বটে। তবু তা পুরোনো হয় না। বলা যায়, শেষ হয় না। কিন্তু সম্পর্ক কি কোনো অটুট পাথর? বন্ধুত্বও তো একটা সম্পর্ক। অামার বন্ধুদের কথা অামি কীভাবে বলি?

নানাঘাটে, নানান ঢেউয়ে ভেসে ভেসে গেছি। বন্দরে বন্দরে ঘুরে ঘুরে কত বন্ধু পেয়েছি। স্রেফ সম্পদ সেই বন্ধুত্ব। সোনালি সম্পদ পুরোনো হয় না। বন্ধুত্ব একটা অর্জন। বন্ধুত্ব বলে-কয়ে হয় না কারো সঙ্গে। হলে এটা এটা হয়েই যায়। গেলে, তখন তা বহে নিয়ে যাবার পালা। তাই, অামিও অর্জিত সম্পদের মতো বহু বহু বন্ধুত্ব বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যেই দেশে এলো বন্ধু দিবস। প্রাচ্যের মানুষ অামি, নিঃসঙ্গ পশ্চিমের এই নানারকম ‘দিবস‘ পালনে নীতিগতভাবে ঘোর বিরোধি। কিন্তু অামাদের দেশের গণমাধ্যম মূলত পশ্চিমের রেওয়াজেই গলা ভাজে। তাই পশ্চিমের দেধাদেখি বাবা-মা দিবস পালন হয় কিছুকাল দেখছি। বন্ধুত্ব দিবসও এইরকমই হচ্ছে অার কি। ঠেকাবে কে? এরপর, কে জানে কালে কালে অার কত কিছু দেখতে হয় পশ্চিমকে দেখে, কে জানে? এখন তো হাত ধোয়া দিবস, পা মোছা দিবসও হচ্ছে দেশে। ঠেকাবে কে?

সেই যে জোড়াদহ, ভায়না, সেখানে অামার মামাবাড়ি। জন্মেছিলাম সেখানেই। সেখানকারই ইশকুলই অামার প্রথম ইশকুল। সেই ইশকুলের বন্ধুদের অামি স্মরণে রাখতে পারিনি। তারপর, মধুপুরের পাশে গাড়াগন্জ ইশকুল। তারপর শ্রীপুর ইশকুল। তারপর শৈলকুপা ইশকুল। তারপর ঝিনেদা কেসি কলেজ। খুলনা অার্ট কলেজ। রাজশাহী অার্ট কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত অামার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার মধ্যে কত বন্ধু যে পেয়েছি, হিসাব নেই। বন্ধুত্ব পেয়েছি বাংলা কবিতার ভেতর দিয়ে, বন্ধুত্ব পেয়েছি চিত্রকলার ভেতর দিয়ে। বন্ধুত্ব পেয়েছি জীবন অপচয় করেও, তাও বলা যাবে। বন্ধুত্ব একটা নেশার মতো। জীবনে, সেই নেশা নেশা দিন অাসে। নেশায় চুর হয়ে যাই। অারও দূরে যাব বলে বন্ধুত্ব-প্রাপ্তির নেশা যেন অার কাটেই না। এখন সিনেমা বানাচ্ছি। সিনেমাতেও অামার বন্ধুত্ব মিলছে। ভালো লাগছে। বন্ধু ছাড়া অচল লাগে প্রচ্যের জীবন, এ রায় ঠিক।


অামার বন্ধুত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে নিশ্চয়ই একটা বড় লেখা তৈরি হতে পারে, হয়তো একদিন সে সময় মিলবে কখনও। বন্ধুত্বের সেকাল একাল নিয়েও তাতে সম্পর্কের সামাজিকায়ন উঠে অাসতে পারে। বন্ধুত্ব একটা সমবয়সি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করলেও এখন টের পাই, অামার বন্ধু জুটেছে নানান বয়সের। ‘অাপনি‘ ‘তুমি‘র বন্ধুত্ও অামার কম নয়। অামার বন্ধুত্বের পাটাতনে নারী-পুরুষ অালাদা কিছু নেই। পরষ্পরকে বুঝতে পারি, এইটুকুই। এইটুকুই যে কতটুকু, মাপা যাবে না।

বন্ধুদের মধ্যে অামি সর্বদাই মুখর, কহে অন্যরা। সময় এমন থাকে, যে, তখন বন্ধুত্বের জন্যে কী ই না করা যায়? বন্ধুর কাছে অবিশ্বাস থাকে না। অাস্থা থাকে। বন্ধুর কাঁধে হাত দিয়ে, হাতে হাত দিয়ে বিচরণের রাস্তা থাকে। সেই রাস্তা কতদূর যায়, নিয়ে যায় অামাদের! চলতে থাকি সময়ের সঙ্গে। মনে মিল হলেই হয়। অার কিছু লাগে না।

হালে তো অাসছে ফেসবুক। এখানে তো দেখি অচেনা মানুষ অচেনা মানুষকে বন্ধুত্বের জন্যে রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে। যোগাযোগ হচ্ছে। তারপর হয়তো বন্ধুত্বও হচ্ছে। অামিও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি সেই বনভূমিকে, যে থাকে দূরে, একসেপ্ট করলেই অামরা বন্ধু। উড়নচণ্ডি পাখিগুলোও অামার বন্ধু। বন্ধুত্ব একটা নেশা। জীবনে, নেশা নেশা দিনই অামার কাম্য। ফলে, নেশা চাই। নেশার জন্যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি বয়সের ট্যাবু ভেঙে, তোমার কাছেও। তুমি গ্রহণ করলেই, অামরা বন্ধু। নেবে?

নিলে, একদিন তোমার বুকের মধ্যে মাথা লুকিয়ে কানব। খুব। তুমি অারেকটু টেনে নেবে না?

০৩. ০৮. ২০১৪

বাংলা ট্রিবিউন
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×