ড. মঞ্জুরে খোদা
২৪ বছর আগে (১৯৯০-৯২) ভ্যাজাল প্যারাসিটামল খেয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি নষ্ট হয়ে ৭৬ টি শিশু মৃত্যুবরণ করে। যে সংখ্যাটি কেবল ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যাওয়া শিশুদের তথ্য এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। সারাদেশের চিত্র এখানে পাওয়া যায় নি। এমন কি এই ওষুধ খেয়ে যে সব শিশুরা পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হয়েছে তাদের বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায় নি। যাইহোক, সেই ঘটনায় ২১ বছর আগে বাংলাদেশ ওষুধ অভিদপ্তরের করা মামলায় আদালত- এটফ্লেম ফার্মসিটিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদন্ড ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। বাংলাদেশের ওষুধ বিধি সম্পর্কিত আইন অনুযায়ী এই ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তিও ১০ বছর! আদালত অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই দিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে অনৈতিকতার অভিযোগে কোন ওষুধ কোম্পানীর বিরু্দ্ধে করা মামলায়- এটাই প্রথম শাস্তির ঘটনা। তবে উচ্চ আদালত এই রায় বহাল রাখলেই কেবল এই দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। কারন আসামী পক্ষ ইতিমধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা ঘোষণা দিয়েছেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ এই রায়ে সন্তষ্ট প্রকাশ করেছে। এখন প্রশ্ন অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী- এই রায় কি যৌক্তিক? গ্রহনযোগ্য? যথেষ্ট?
নানাভাবে প্রমানিত ৭৬ জন শিশুহত্যা, যাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা যায়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারকও তার মন্তব্যে একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এবার একটু হিসেব করে দেখা যাক ৭৬ জন শিশুকে হত্যার দায়ে এই ৩ জন খুনী অপরাধীর শাস্তির পরিমান কেমন?
১ বছর = ৯ মাস মানে = ২৭০ দিন প্রায় (জেলখানায় ৯ মাসে বছর হয়)
১০ বছর = ৯০ মাস = ২৭০০ দিন
২৭০০ দিন ÷ ৭৬ শিশু = ৩৫.৫ দিন জেল
২০০০০০ টাকা ÷ ৭৬ শিশু = ২৬৩১ টাকা জরিমানা মাত্র।
একজন মানুষ খুন করলে হয় মৃত্যুদন্ড বা জাবজ্জীবন কারাদন্ড। সেখানে একটি ওষুধ কোম্পানীর অনৈতিক মুনাফালিপ্সার কারণে এতগুলো শিশুমৃত্যুর স্বীকার বা হত্যাকরা হলো তারজন্য শাস্তি মাত্র ১০ বছর!! একে প্রহসন ছাড়া আর কি বলা যায়? এই ধরণের অপরাধ হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, একে গণহত্যার শামিল বলা যায়। এই ধরণের গুরুতর অপরাধে ও লঘু শাস্তির বিধানের কারনেই খাদ্য ও ওষুধ শিল্পে এত নৈরাজ্য। তারপরেও একটি মামলায় নিস্পত্তির একটি পর্যায়ে আসতেই একুশ বছর লাগছে। উচ্চ আদালত আরও কতবছর লাগবে কে জানে? তাই অবিলম্বে জাতীয় সংসদে আইন করে এই ধরনের অপরাধের শাস্তি ও জরিমানার পরিমান বাড়ানো হোক। যাতে মানবতার বিরুদ্ধে এই ধরণের অপরাধের বিচার যেন মশকরা ও তামাশায় পরিণত না হয়।
লেখকঃ মঞ্জুরে খোদা টরিক, গবেষক, ইনস্টিটিউট অব পলিসি সাইন্স, জাপান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৫ রাত ১:০৬