somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ এর চিঠি (পৃষ্ঠা ৯৭ এবং ৯৮)

২৫ শে মে, ২০০৯ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৬/১১/১৯৭১
বাইখোরা, ত্রিপুরা
বেইস ক্যাম্প

Abdul Quayum Mukul
Patan, Gangarampur
West Dinajpur

প্রিয় মুকুল,

একটা বিরাট ট্র্যাজেডি ঘটে গেছে। যন্ত্রণায়, ক্লান্তিতে কাতর হয়ে আছি। আমাদের প্রিয় আজাদ শহীদ হয়েছে, সাতজন কমরেডের সাথে । অ্যামবুশে পড়ে, হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সামনাসামনি যুদ্ধ করতে করতে তারা শহীদ হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার বেতিয়ার গ্রামের কাছে এই যুদ্ধ হয়েছে। আমাদের গেরিলারা ফায়ার করতে করতে ব্যাক করে আসার চেষ্টা করে। ৪০ জনের মতো যোদ্ধা গেরিলা দলে ছিল। একজন সিভিলিয়ান গাইড আর আজাদসহ মোট ছয়জন গেরিলা যোদ্ধা ‌- এই মোট সাতজন শহীদ হয়েছে। ১০-১২ জন কিছুটা বেশী আর অন্যরা সামান্য আহত হয়েছে। সকলের জন্য, বিশেষত: আজাদের জন্য আমার মত কেমন করছে, তা অনুমান করতে পারছ নিশ্চয়ই। তোমার মনের অবস্হা এই খবর জেনে কেমন হবে, সেটাও আমি বুঝতে পারছি। আজাদ সম্পর্কে কত কথা তো মাত্র সাত দিন আগেই হয়েছিল কলকাতায়। ছয়-সাত মাস পরে তোমার সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা উপলক্ষে কলকাতায় দেখা হলো । আমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করছি। রণাঙ্গন থেকে দুই দিনের জন্য কলকাতায়। ফিরে গিয়ে আজাদকে তোমার কোন গল্প শোনাতে হবে, তা দুজনে মিলে ঠিক করছিলাম। মনে আছে নিশ্চয়ই। আর আগরতলা ফিরেই রাত শেষে ভোরের সংবাদ - আজাদ এবং আরও কয়েকজন কমরেড আর নেই। বড় বিপর্যয় হয়ে গেছে। এসব ঘটনা ১১ নভেম্বরের।
অ্যামবুশের পরে আমাদের গেরিলারা ফিরে এসে সীমান্তের এপারে ইনডাকশন ক্যাম্পে রিগ্রুপ করেছে। আমি ১২ তারিখেই সেখানে চলে যাই। সব খবর বিস্তারিত শুনলাম। এই ব্যাচের কমান্ডার মনজুর ভাই আগেই পৌছে গেছে। ইয়াফেজ, হেলাল - ওরা জীবিত ফিরতে পেরেছে। আমার মনটা আরও বেশী খারাপ এ জন্য যে, গেরিলা দলের ইনডাকশনের সবগুলো অপারেশন আমার তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে ।কিন্তু একবার দুইদিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছি, যাতায়াত মিলে মাত্র চার দিনের জন্য বেইস ক্যাম্পের বাইরে আছি। আমাকে বাদ দিয়েই ইনডাকশনের ব্যবস্হা করে ফেলল! সামনের কয়েকজনের হাতে loaded arms ছিল। অথচ পেছনে বেশীর ভাগের arms-amunaition-ই প্যাক করা। আধা গেরিলা কায়দা আধা ফ্রন্টাল combat-এর কায়দা। সমস্যা হয়েছে তাতেই। তার পরেও যুদ্ধ করে, fire back করতে করতে প্রায় গোটা দলই সফলভাবে retreat করতে সফল হয়েছে। পাক আর্মি সিঅ্যান্ডবি রোডে ভারী সমরযান নিয়ে এসে অ্যামবুশ করছিল। হেভি মেশিনগান দিয়ে ফায়ার করে নির্বিচারে । এর মধ্যেও বেশীর ভাগ জীবিত ফিরে আসতে পেরেছে।
গেরিলা কমরেডরা এক-দুই দিন বিমর্ষ ছিল। তৃতীয় দিনে খুবই high moral ফিরে এসেছে। মনজুর ভাই বক্তৃতা করেছে। খুব সাহায্য হয়েছে তাতে। আমি কথা বলছি। পাশে কমান্ডারদের পেয়ে ওদের মনেবল চাঙা হয়েছে। নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ড্রিল করা শুরু হয়েছে। এবার যেন বিপর্যয় না হয়।
একটা enquiry committee করা হয়েছে। আমি তার সদস্য। পরশু আবার যাব এলাকায়। ভৈরব টিলা নামক পোষ্ট থেকে এলাকাটা দেখা যায়। দুজনকে ছদ্মবেশে দেশের বাইরে, বেতিয়ারা ও আশে পাশের গ্রামে সরেজমিনে খবর সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়েছে।
অনেক খবর লিখলাম। লিখে শান্তি পেলাম কিছুটা। চিঠিটা গোপন রাখবে।
আমি শিগগিরই ভেতরে যাব হয়তো । দেশ স্বাধীন হবেই। আমাদের সাধনা, জনতার জীবনপণ প্রচেষ্টা সফল হবেই। লাল সালাম।

ইতি
সেলিম।

চিঠির প্রেরক: মু্ক্তিযোদ্ধা সেলিম, পুরো নাম মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ১৯৭১ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে গঠিত বিশেষ গেরিলাবাহিনীর একজন কমান্ডার এবং অপারেশন প্লানিং কমিটির (OPC) সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

চিঠির প্রাপক: মুকুল, তাঁর পুরো নাম আব্দুল কাইয়ুম মুকুল। ১৯৭১ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের পাটনে ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের জন্য যে ইয়ুথ ক্যাম্প স্হাপন করা হয়, সেই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক।
চিঠিটি পাঠিয়েছেন: আব্দুল কাইয়ুম।

==========================================
একাত্তরের চিঠি সংকলনের টেক্স্ট কন্টেন্ট প্রকল্পের অংশ হিসাবে প্রকাশিত
বইটি স্ক্যানের জন্য ব্লগার পথিক!!!!! এবং পাতলা খানের কাছে কৃতজ্ঞ।
একাত্তরের চিঠির অন্যান্য পৃষ্ঠার লিংক পাবেন লাইভ আপডেটের পাতায়
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×