somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেনীর আবার রকম কি? লাশের সাপ্লাই আসলেই হইলোঃসাভার, মতিঝিল, জলদস্যু আর ঢাকাই জিডিপি দস্যু

০৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হালের ফেইসবুক বাজারে দুই কিসিমের এক্টিভিস্ট আছেন। একপক্ষ শুধুই সংবাদ খোজেন। যদিও সংবাদের চেয়ে গুজবের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি। আরেক কিসিমের ঝানু এক্টিভিস্ট আছেন, যারা তত্ত্ব দেন। এই তাত্ত্বিকদের একটা অংশের পছন্দের বিশ্লেষণ পদ্ধতি কয়েকটি ঘটনার মাঝে যোগসূত্র বের করে কোন নির্দিষ্ট শ্রেনীর প্রতি অত্যাচার অবিচার হচ্ছে তা খুজে বের করা। এতে সমাজে 'কেয়ারিং', 'সমাজসচেতন' ইত্যাদি দূর্লভ ট্যাগ লাভ করা যায়। এই কিসিমের তাত্ত্বিকরা ভুল নন পুরোপুরি। সাভারের থ্যাতলানো গার্মেন্টসকর্মী আর মতিঝিলের গুলিবিদ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রদের একই শ্রেণী আবিস্কার করতে বেগ পেতে হয় না। ফলে তাদের হাজার লাশের সারি আর সামাজিক নিষ্পেষণ দেখায়ে সহজেই মুগ্ধতা জাগায়ে বয়ান করা যায়--সমাজের এই বিশাল অংশকে দাবায়া রাখতে পারবা না, জঙ্গি হবে, সুইসাইড বোম্বার হবে, গৃহযুদ্ধ হবে, সব শেষ করে দিবে।

মুগ্ধ হতে বেশ লাগে। কিন্তু আশাবাদী হয়ে উঠি। মনে হয় এই শ্রেণী আমাদের শহুরে সমাজকে খতম করতে পারবে না। এই নিম্নবিত্ত সর্বহারা শ্রেণী আপনার পছন্দের লাশের থ্রেশোল্ডের উপরেই লাশ সাপ্লাই দিতে থাকবে, শত চাইলে শত, হাজারে চাইলে হাজার। কারণ তারা একতাবদ্ধ নন। দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা যেই উপরতলার আমলা-ব্যবসায়ী-সাবেক সেনাকর্মকর্তা-সাবেক ছাত্রনেতারা একচেটিয়া দখলে রেখেছে তারা নিজেদের প্রয়োজনেই ভাড়াটে মিছিল আর আন্দোলনের জন্য এই শ্রেনীর মাঝে ফাটল জাগায়ে রাখে। কেউ সাভারের ফাটল দেখায়া ফাকায়। কেউ আস্তিক নাস্তিকের ফাটল দেখায়া ফাকায়। এরা কখনও বলবে না নিম্নবিত্তদের রাজনৈতিক অধিকারের কথা, দেশের সম্পদে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। রক্ত দেয়ার বেলায় সবার সামনে সস্তা লাশগুলান, আর ক্ষমতার নেয়ার বেলায় পিছন থেকে দৌড়ে মন্ত্রীত্ব লুফে নিবেন আবুলরা। সাভারের হাজার লাশের উপরে দাড়ায়ে অনেক মায়াকান্না দেখলাম- দুই জোটের কেউ গেল না বিজিএমইএ র কান ধরতে। যেন লাশ পড়লে কিছু অর্থভিক্ষাই রীতি। একই কথা চলে মতিঝিলের কওমী মাদ্রাসার ছেলেদের জন্য। লাশ গুনে কেউ কম হলে মজা পায়, অনেকে আবার লাশ উঠে কথা বলে উঠলে দুঃক্ষ পায়। এদের আর শ্রেনীচেতনার লড়াইয়ের খোয়াবে বলিয়ান করিয়েন না। এদের যদি কেউ জঙ্গি বানায় সেইটা আপনারই শ্রেণীস্বার্থরক্ষায় বানানো হবে। কেউ যদি সুইসাইড বম্বিং করতে পাঠায় সেটা আপনার শত্রু মারতে আপনিই পাঠাবেন। এক্ষনে আমার মনে হয় না এই নিম্নবিত্ত শ্রেণী কি বুঝতেছে যে তারাই সবার পছন্দের লাশ।


মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তশ্রেণী রাজপথ ছাড়সে অনেক আগেই। মাঝে তারা একবার যে গনজাগরন বা ঢাকাজাগরন করলো তা ১ হপ্তা পর সরকারের কাছে বন্ধক দিয়ে মাসব্যাপী কার্নিভাল করে ঘোষিত সময়সূচী মোতাবেক ঘরে ফিরে গেলেন। বাংলা পরীক্ষার বাইরে আর কোন পুস্তকে তারা যাওয়ার সাহস পাইলেন না।

এহন যে মারখাওয়া শ্রেণীর জন্য আপনাদের আহা উহু দেখেন তা লাশের রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে জড়িত। লাশের স্বপ্নের ১৩দফার কামিয়াবির জন্য না। গার্মেন্টস কর্মীর নিরাপদ উন্নত জীবনের জন্য না। সাগরের জেলেরা ৩০-৪০জন মারা গেলেও ঝুটিওয়ালা ও গোফওয়ালা মানবাধিকারকর্মীরা পাচতারা হোটেলে সেমিনার করেন না। কারণ তারা অরাজনৈতিক। হত্যাকারীও অরাজনৈতিক জলদস্যু। জলদস্যু লীগ বা জলদস্যু জাতীয়তাবাদী দল থাকলে তাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে গনহত্যা বলার ফুসরত মিলতো। জাস্ট ইগনর দোস পুওড় পিপল। একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা ঘনঘন ঢাকা থেকে অনেক দূরে ঘটে। ওখানে কারওয়ান বাজারের ক্যামেরা গিয়ে জিজ্ঞাসা করে না 'আপনার অনুভূতি কি?' কি দরকার ওসব ঘেটে? বিডিয়ারের ৬হাজার জনকে জেল জুলুম আর অর্ধ শতাধিক জওয়ান সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মারা গেলেও আমরা সেটা ইগ্নোর করবো। কারণ পেয়ারা উচ্চবিত্ত সেনাবাহিনীর বিকৃত লাশের চেয়ে নিম্নবিত্ত বিডিয়ারের লাশ নিতান্তই সস্তা। আর সেনাবাহিনী চটিয়ে কে যাবে ক্ষমতায়? অরাজনৈতিক লাশের জন্য আখের-মার্কা শ্রেণীচেতনা আর মানবাধিকার না ফলানোই শ্রেয়।

গার্মেন্টস হোক আর মাদ্রাসার হোক- লাশগুলো ততক্ষন শ্রেণী সংগ্রামী তত্ত্বের জন্য ভালো যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের শ্রেনীর কোন দাবি না করে যে যার মসনদে যাওয়ার ও থাকার আন্দোলন করে। যাহাতক এরা পদাতিক সৈন্যের মতো রক্ত দিয়া যাবে উপরতলার নানান স্বার্থউদ্ধারে ততদিন এদের দয়া করে বেওকুফ শ্রেণী বা নরম করে ঘুমন্ত শ্রেণীই বলেন, শ্রেণীসংগ্রামের মিথ্যা খোয়াব দেখাইয়েন না। যেদিন এরা শ্রেণীচেতনা নিয়ে ঢাকায় আইসা বলবে তোদের বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন, হাজার কোটির ব্যাংক লুটপাট, হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার, সীসা লাউঞ্জের ফুটানি, ঢাকার কোটি টাকার ফ্ল্যাটে আমাদের ভাগ কই- সেদিন এই সরকারী-বিরোধীদলী সব এক হয়ে বলে উঠবে---

শালা জঙ্গি।

তখন ওদের শ্রেণীচেতনার পতাকা বইবার লোক ফেইসবুকে পাওয়া যাবে না।
---------------------------------------
লেখাটি ফেইসবুকের বাঙ্গাল পেইজে প্রকাশিত

অন্যান্যঃ
১৩দফার কি হাল জনাব? কোন পথে দেশ?

ফাটল দেখাইয়া আর কতকাল ফাকাইবেন কর্তা?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×