somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরীআ’তের দৃষ্টিতে কনে দেখা

০২ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিয়ে-শাদির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পাত্র-পাত্রী নির্বাচন। দাম্পত্য জীবনের পরিধি যেমন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত এর সমস্যাও তেমন খুবই বিস্তৃত, জটিল ও স্পর্শকাতর। এজন্য বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রী দেখে সকল দিক গভীরভাবে তলিয়ে দেখা জরুরি। যেন পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ না করে তোলে। এজন্য ইসলামের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে যথেষ্ট। সাহাবী আবু হোরায়রা (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.) নিকট এসে বলল, আমি একজন আনসারী রমনীকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। একথা শুনে মহানবী (সা.) বললেন, মেয়েটিকে দেখে নাও। কেননা আনসারীদের চোখে আবার সমস্যা থাকে। (মুসলিম : ১/৪৫৬) অন্য এক হাদীসে সাহাবী হযরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যদি কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার জন্য যদি বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী অঙ্গগুলো দেখার সুযোগ হয়, তাহলে সে যেন সে অঙ্গগুলো দেখে নেয়। (আবু দাউদ : ১/২৮৪) অন্য বর্ণনায় হযরত মুগিরা বিন শো’বা (রা.) বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। এটা শুনে রাসূলূল্লাহ্ (সা.) আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না দেখিনি। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যে, তুমি তাকে দেখে নাও। তোমার এই দর্শন তোমাদের মাঝে দাম্পত্য জীবনের প্রণয়-ভালোবাসা গভীর হবার বড় সহায়ক হবে। (তিরমিযী : ১/২০৭) উপরোক্ত হাদীসগুলোর ভাষ্য এক ও অভিন্ন। তা হচ্ছে বিয়ের পূর্বে বরের কনেকে দেখে নেয়া। তো মেয়ে দেখার শরীআ’ত সম্মত নিয়ম হলো দীনদারীকে প্রাধান্য দিয়ে আনুষঙ্গিক সকল বিষয় প্রথমে দেখে নিবে। মনঃপুত হলে বিয়ের ইরাদা নিয়ে যথাসম্ভব গোপনীয়তা রক্ষা করে মেয়ের মুখ ও উভয় হাত দেখে নিবে। বর ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের কনে দেখা শরীআ’তে নিষিদ্ধ। চাই সে বরের পিতা বা অন্য কোনো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হোক না কেন। তাদের কেউ বরের পক্ষ হয়ে কনে দেখলে কবীরা গুনাহ হবে। সুতরাং আমাদের দেশে বাবা, ভাই, বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘটা করে মেয়ে দেখার যে প্রচলন চালু আছে তা শরীআ’তের দৃষ্টিতে নাজায়িজ ও হারাম। পুরুষ সদস্য বাদ দিয়ে শুধু নারী সদস্য নিয়েও ঘটা করে মেয়ে দেখা শরীআ’ত সম্মত নয়। কেননা এভাবে ঘটা করে কনে দেখার পর যদি কোন কারণবশত বিয়ে না হয়, তাহলে এটা ঐ মেয়ে পক্ষের জন্য রীতিমতো বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে অন্যরা মেয়ের ব্যাপারে নানা রকম সন্দেহের মধ্যে পড়ে। ফলে এই মেয়ে বিয়ে দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলা ইসলাম সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে। (মুসলিম : ১/৪৫৬; আবু দাউদ : ১/২৮৪; তিরমিযী : ১/২০৭; ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ৩/২১২) -
এজন্যই কোনো অঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে নির্ভরযোগ্য কোনো নারীর মাধ্যমে তা যাচাই করে নিতে পারবে। পাত্রী দেখার জন্য পাত্রীর অভিভাবকগণের পূর্ব অনুমতি জরুরি নয়। কোনোরূপ ঘোষণা ছাড়া কনে কিংবা কনের অভিভাবকদের অলক্ষ্যে যদি দেখে নেয় তাতেও অসুবিধে নেই। বরং বিভিন্ন রেওয়ায়েত ও নীতিমালার আলোকে মনে হয় অঘোষিত ও গোপনীয়ভাবে দেখাটাই অধিক সঙ্গত। যেমন, সাহাবী হযরত জাবের (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে: ‘আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নেই।’ এই হলো কনে দেখার ইসলামের সোনালি দর্শন। যা অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। এতে না আছে বাড়াবাড়ি, না আছে ছাড়াছাড়ি। এই দর্শন ও নীতিগুলো মেনে কনে দেখলে মেয়ে পক্ষও আপদমুক্ত থাকল। আবার ছেলে পক্ষেরও কনে দেখার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হলো না। পক্ষান্তরে পশ্চিমা সভ্যতা এ ক্ষেত্রে করেছে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। তুলেছে এক নষ্ট স্লোগান। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো: বিয়ের পূর্বেই ছেলে-মেয়ে এক ছাদের নিচে এক সাথে দীর্ঘ সময় কাটাতে হবে। একে অপরের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এভাবে সহাবস্থান ও ঘনিষ্ঠতার ভিতর দিয়ে একে অপরকে জানবে, বুঝবে। এরপর নেবে বিয়ের সিদ্ধান্ত। এতে ফল যা হবার তাই হয়েছে। এক ছাদের নিচে পার করল দীর্ঘদিন। মধু বিতরণকারী নারী মধু বিতরণ করল আর চুষে চুষে খেল মধুলোভী পুরুষ। এভাবে চলল বেশ কিছুদিন। এরপর কোনো একজন বলে উঠলো তোমাকে আমার ভালো লাগেনি। ব্যাস! ল্যাঠা চুকে গেল। তখন পাড়ি জমালো আরেক পুরুষের বাহুতলে। এভাবে একদিন তার যৌবনের মধুর হাড়ি খালি হয়ে গেল। মধু সন্ধানীরাও তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখল। এখন কি করবে এই নারী? এই জীবন সায়াহ্নে তার তো আশ্রয়দানের কেউ নেই। কে তাকে আশ্রয় দেবে। আদর-সোহাগের হাত আলতো করে বুলিয়ে দেবে তার গায়ে। পাঠক! একবার ভেবে দেখুন অবস্থার ভয়াবহতার গভীরে গিয়ে। আর চিন্তা করুন নিজেকে দিয়ে যদি আপনার এই করুণ দশা হয়, তাহলে কেমন হবে?

সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব। ( http://goo.gl/KVpgui )
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×