সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে লেখা এই সমাজে অনেকটা বাড়া ভাতে ছাই দেওয়া টাইপ। তাই কখনোই লিখতে মন চাইনি। লিখিওনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একটা বিষয় নিয়ে না লিখে পারলাম না।
শুরু করা যাক প্যাসকেলের একটা মন্তব্য দিয়ে যে “অনিষ্টকর কর্ম মানুষ কখনোই অতোটা অন্তপ্রাণভাবে ও সানন্দে করে না, যতোটা সে করে ধর্মীয় বিশ্বাসে উদ্বুগ্ধ হয়ে করার সময়”। আধুনিক সভ্য সমাজে মধ্যযুগীয় বর্বরতা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলেই আমাদের জানা। হওয়া উচিতও নয়।
সম্প্রতি এক মালোয়ানের বাচ্চা একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢালাওভাবে পশু হত্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় চুশীল সমাজ উন্মাদপ্রায়। “আর তাদেরকে হত্যা করো যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে...” এই নীতি অবলম্বনপূর্বক তাদের পুরো পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না বাড়ির পুরুষ-মহিলারা। মন্তব্যকারীকে রেখে আসা হয়েছে দুর-অজানায়।
ঘটনাটা ফরিদপুর জেলার আড়কান্দি উপজেলায়। নাহ, কোনো পত্র-পত্রিকায় কিছু ছাপানো হয়নি। পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের নিকট শরণাপন্ন হলে তিনি বেশ ভালো অঙ্কের একটা টাকা দাবী করেন পুরো সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। যে টাকাটা ম্যানেজ করা অসম্ভবপ্রায়। বাহ, এ তো প্রায় গোঁদের উপর বিষফোঁড়া টাইপ।
আমি যতটুকু জানি ধর্মগ্রন্থ বলে কোরবানি ভোগের নয়; ত্যাগের। আর আমি যতটুকু দেখি কোরবানি ত্যাগের নয়; ভোগের। মাইকিং করে জানান দেওয়া হয় কার গরুর কত দাম। মানুষজন মহাসমারহে ফ্রিজ কিনে নিয়ে আসছে। কোরবানি উপলক্ষে ফ্রিজ কোম্পানিগুলো বিশেষ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এইরকম ভোগের নীতি যেখানে চলে সেখানে এইরকম সামান্য একটা মন্তব্যের জন্য তো লঘু পাপে গুরু দন্ড দেওয়া হয়ে গেল বৈকি !!!
সাম্যের সমাজকাঠামোর ভিত উপড়ে ফেলে প্রতিষ্ঠিত করা ছচ্ছে অসাম্য, শ্রেণিবিভক্ত সমাজের। তাহলে কি বিশ্বাস করব !!! এর জন্য দায়ী কারা??? আমরা না ধর্ম??? যদি আমরাই সমস্যাটির সমাধা করতে পারি তাহলে ধরে নেব দায়ভার ধর্মের নয়, আর যদি না পারি তাহলে অবশ্যই ধর্মের।
বিঃদ্রঃ উক্ত সমস্যাটি এখনও পর্যন্ত বিরাজমান। কোনো ব্যক্তি অথবা সংগঠন যদি স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছুক থাকেন তাহলে যোগাযোগ করুন অতিসত্বর।