somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরাহ্নের অশ্রু!!!

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরৎশুভ্র আকাশ আর মায়ার জ্যোৎস্না। শুভ্রতা আর মায়া মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। সাথে মাদকতা আর বুঁদ হয়ে থাকা আবেগের মিশ্রণে অন্যরকম এক রাত ওই দূর পবনের সাথে। কাশবনের উপর ঘেঁষে ঢেউ হয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের স্রোতের মতই আকাশের কোলে মেঘেদের দুষ্টুমি; আর ছোটাছুটি। তারাদের খুনসুটি অবিরত। অবারিত মোহতা আর অবিষ্টচিত্তে ভাবিয়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ আজ ধরিত্রী বুকে ছড়ানো।


খুলনা হতে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস। আঁধার কেটে আলোর পানে ছুটে চলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সহযাত্রী তূর্য। জানালায় ঈষৎ হেলান দিয়ে প্রকৃতির মুগ্ধতায় কখন যে নিখোঁজ হয়েছে সে তা নিজেই জানে না। ভয় আর সাহসের মিশ্রণে অভূতপূর্ব অনুভূতি গ্রাস করেছে তাকে। কিশোর বয়সের সাহসিকতা দূর্বার হলেও মনস্তাত্বিক ব্যাপারে তা নিতান্তই অপরিপক্ক। অনভিজ্ঞতা আর আবেগের এক মিশ্রণ মাঝে মাঝে অবিসংবাদিত ভুলের জন্মদাতা হিসেবেও পরিচিত হয়।


বছরখানেক আগের কথা। এক বান্ধবীর মাধ্যমে পূর্বার সাথে পরিচয় হয় তূর্যের। সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের ছাত্রী সে। দিন যায় আর সমানুপাতিক হারে পূর্বার মুগ্ধতা গ্রাস করে তাকে। একসময় গ্রহণ লাগে আবার হারিয়ে যায় মুগ্ধতায়। অথচ যাকে কিনা কখনো দ্যাখেইনি সে। বিচিত্র মন মানুষের। বিচিত্র তাঁর লীলা আর বিচিত্র ভালোবাসা। দূরত্ব কমার সাথে সাথে প্রভাত উন্মোচিত হয় আর অজানা শঙ্কা ভর করে তূর্যের মনে। আপন গতিতে চলতে থাকে ট্রেন, সাথে নেশাতুর ট্রেনের অবিরত শব্দ।


জালালাবাদ ক্যান্ট পাবলিকের এইচএসসি পরিক্ষার্থী তূর্য। টেস্ট পরিক্ষার সময় প্রাইভেটের টাকা বাচিয়ে বাসার কাউকে না জানিয়ে প্রথমবারের মত দর্শন করতে যাচ্ছে কল্পরাজ্যের রাজকন্যার সাথে। অজানা শঙ্কা হলো কখনোই যদি এই অযাচিত কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে না আসতে পারে সে। যদি মিথ্যে হয় রাজ্যের ইতিহাস আর ইতিহাসের চরিত্রগুলো। তূর্য ঠিক করেছে তাহলে সে আর কখনোই ফিরে আসবে না তার স্বপ্নমাখা বাস্তবতায়।


বিকাল ৩টা। টিকাটুলি ওভারব্রিজের নিচে ঠাই এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে তূর্য। এতটা গরম না থাকলেও দরদর করে ঘামছে। শঙ্কাগুলো কঠিন সত্যের মুখোমুখি। বাস্তবতার কষাঘাতে কল্পরাজ্য আজ পরাজিতের অন্তরালে কটাক্ষের হাসি হাসছে। অস্তমিত সূর্যের মতই নিষ্প্রভ সময়। অজস্র চিন্তায় মাথা নষ্ট হবার উপক্রম। ফোনের পর ফোন দিতে দিতে ক্লান্ত তূর্য। সবই তো ঠিকঠাক ছিল। মূহুর্তেই সব যেন পাল্টে যেতে আরম্ভ করেছে। যে কন্ঠ এতদিন তাকে মুগ্ধই করেছে শুধু, তা আজ মোবাইলের বিপ টোনে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আটকে গেছে সময়।


কোনোদিন কাঁদতে জানে না যে সে বোধহয় আজ মহাসমুদ্র তৈরি করতে উদ্যত হচ্ছে। ৪ টার মত বাজে। কপালের ঘাম মুছে এক উদ্ভ্রান্তের মত মতিঝিলের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করে তূর্য। জীবন আর ইতিহাসের মিলনমেলা আজ অর্থহীন হয়ে ধরা দেয়। অভিসার সিনেমা হলের সামনে এসে সংবিত ফিরে পায় তূর্য। মোবাইলের রিং হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠে আছে পূর্বার। চোখ ঝাপসা থাকায় মুছে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল তূর্য। বিশ্বাস হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে। হাত কাঁপছে। ভয়ে ভয়ে রিসিভ বাটন চাপার পর......

-হ্যালো, তূর্য। আমি সরি। (কান্নাজড়িত কন্ঠে)

-(তূর্য নিশ্চুপ)

-ম্যাডামের ওখানে যেয়ে আটকে গেছিলাম। ছুটি দেয়নি। তাই ফোন রিসিভ করতে পারিনি। তুমি চলে গেছ, তাই না। আমাকে অনেক খারাপ ভাবছ, তাই না। বিশ্বাস করো আমি এখনও ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে ভুল বুইঝো না। প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করো। (কান্নাজড়িত কন্ঠে)


তূর্য দৌড়ে মিনিটখানেকের মধ্যে ওভারব্রিজের নিচে চলে গেছে ফোন না কেটেই। খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও, কাউকে। হন্য হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথায় তার সেই স্বপ্নরাজ্যের স্বপ্নচারিণী। তার কাশফুল, তার অর্ধাঙ্গিনী। কোথায়!!! ওভারব্রিজ পার হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দ্যাখে রাজকন্যা কেঁদে কেঁদে চোখ-মুখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছে।


রাজকন্যা যে স্বপ্নের থেকেও সুন্দর। পূর্ণিমা নয়, কেননা চাঁদের উত্তপ্ত করার ক্ষমতা সীমিত। অপরাহ্নের লাল আভাময় সূর্য যেন। আবেশিত করার ক্ষমতাও আছে আবার ঈষৎ উষ্ণতাও প্রদানে সদা-ভাস্বর। অশ্রুগুলো ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়ছে আমার বালুকাবেলায়। চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি তার। যেন জন্ম-জন্মান্তরের পরিচিত। একই রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে দুটি দেহে। একই সত্বা যেন দুজনার। দুজন যেন একই সুতোয় বাঁধা।


তূর্য কি করবে বুঝেই উঠতে পারছে না। একদম না। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। সে কোথায় যেন শুনেছে ছেলেদের কাঁদতে নেই। এটা মেয়েদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এই সম্পত্তি তার রাজকন্যার একার। সে কখনোই সেটাতে ভাগ বসাবে না। কখনোই না।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×