somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীন-২

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বোলপুরের শান্তিনিকেতন। নামে-গুণে-মানে এই স্থানটির বেশ সুনাম থাকলেও জরাজীর্ণতার আবেশে দারিদ্রতার ছোঁয়া লেগেই আছে এখানকার সবখানে। রবি ঠাকুরের বিশ্ব ভারতী এখানে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য শিক্ষানবিসের আগমণে মুখরিত শান্তিনিকেতনের আনাচ-কানাচ প্রায় সবসময়ই।


বোলপুরে প্রান্তিক রেলওয়ে স্টেশন ছাড়িয়ে নেতাজী রোডের অনেকগুলো রেস্টুরেন্টের মধ্যে গীতাঞ্জলী হোটেলটা আমার বেশ প্রিয়। খাবার-দাবারের আয়োজনে পুরদস্তুর বাঙালীয়ানা একটা ভাব। আলো-ঝিকিমিকি মোহিত পরিবেশের সাথে আছে সুস্বাদু সব বাংলা খাবারের আইটেম।


-আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি দেশ ছেড়েছেন কবে?

-তা মামণি প্রায় ২২ বছর হলো।

-কেন ছেড়েছেন?

-উমমম। জানি না তো মা। আমি নিজেই এই কেন’র উত্তর খুজিনি কখনো। খুজে অবশ্য লাভও হত না খুব একটা। বাদ দাও। মিলি কেমন আছে?

-ও আম্মু। আছে ভালোই। ও হ্যা, এই যে আপনার জন্য এই চিঠিটা। আম্মু পাঠিয়েছে।


কোনোরকম ভাবগাম্ভীর্য ছাড়া চিঠিতে যে বাক্যটি লেখা সেটি হলো এরকম-

“মেয়েটাকে পাঠালাম, দেখে রেখো’’।


-আম্মু তো আপনার সাথে মোবাইলে কন্টাক্ট করলেও পারত। তাই না!

-হুম পারতো।

-তাহলে কেন করেননি?

-জানি না। চিঠি লেখা তোমার আম্মুর ফেভারিট, তাই হয়তবা। বাই দ্য ওয়ে, কোন সাবজেক্টে এডমিট হইছ?

-মিউজিক।

-কার পছন্দে?

-আম্মুর। আচ্ছা আঙ্কেল, আম্মু আপনার সাথে মে বি কথা বলে না। কিন্তু আপনার উপর এত রিলাই করে কেন বলতে পারেন?

-কই না তো এমন কিছু না।

-আসার আগে আমাকে বারবার বলেছে, আপনার ডিরেকশন ছাড়া যেন আমি এক পাও এদিক-ওদিক না যাই।

-হুম। তোমার আব্বু কেমন আছেন? উনি কিছু বলেননি?

-আব্বু! জানি না। আব্বুর সাথে আম্মুর কোনো যোগাযোগ নেয়। আম্মু আমাকে নিয়ে আলাদা থাকেন প্রায় ১৫ বছর। অথচ জানেন আঙ্কেল, আমি আব্বুর ভিতরে কখনোই দোষের কিছু দেখিনি। আম্মুর ভিতরেও না। কিন্তু......

-সরি। চলো উঠতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তোমার একমডিশনের একটা ভালো ব্যবস্থা করতে হবে।


এই মেয়ে মিলির মত। একেবারে ফটোকপি। শুধু প্রশ্ন করে। একের পর এক প্রশ্ন। কথা বাড়ানো যাবে না। গলাটা ধরে আসছে। উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আর এই মুখের দিকে তাকানোর সাহস দুইই হারিয়েছি আমি। অসম্ভব নিষ্পাপ মুখ। কিন্তু অনেকগুলো ভুল ডিসিশনের অহেতুক ভুক্তভোগী। মায়া হচ্ছে খুব।


অতীত মনে করতে ইচ্ছা করছে না আর। চিঠির লাইনগুলোই চোখে ভাসছে-‘দেখে রেখো’। জীবন দিয়ে আগলে রাখতে হবে এই মেয়েকে। একটাই যে দায়িত্ব এখন আমার। রিফিউজি বেশে থাকা এই দেশে যে আমার জীবনে আরো একবার বাংলাদেশ নেমে আসবে কখনোই ভাবিনি আমি। কখনোই না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×