somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা ইস্যুঃ পরাশক্তি হওয়ার লড়াই!

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূপৃষ্ঠে জীবন প্রবাহের ওপর সমুদ্রের প্রভাব হচ্ছে অপরিসীম, এমনকি বিশ্বরাজনীতিও এর প্রভাবমুক্ত নয়। এটা অনস্বীকার্য যে, সামুদ্রিক আধিপত্যের ভিত্তিতেই প্রাচীন ভারতীয়, ফণিসীয়, গ্রীক, রোমান, ভাইকিং এবং আধুনিক পশ্চিম ইওরোপীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আজও পর্যন্ত যে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে তা প্রমাণিত। বাস্তবিকপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিপত্তি অর্জনের নিয়ামক হিসেবে সামুদ্রিক আধিপত্যের অপরিহার্যতা সম্পর্কে দ্বিমতের কোন সুযোগই নেই।


বাঘা বাঘা ভূরাজনীতিবিদ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, সমুদ্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকরণই হচ্ছে বিশ্বশক্তি হিসেবে মর্যাদা অর্জনের পূর্বশর্ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সর্বশ্রেষ্ঠ সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে বৃটেনের আবির্ভাবের পেছনে রয়েছে তার সুরক্ষিত দ্বীপীয় অবস্থান এবং বিশ্বের তাবৎ ভূ-রণকৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথের উপর বৃটেনের কর্তৃত্ব। যুক্তরাষ্ট্রও তাই।


সমুদ্রের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার তিনটি পূর্বশর্ত হচ্ছেঃ

(১) রণকৌশলের অবস্থানিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত স্থলঘাঁটির ওপর নিয়ন্ত্রণ;

(২) সমুদ্রতীরের আকৃতি; এবং

(৩) স্থলঘাটি সন্নিহিত পশ্চাৎ ভূমির প্রতিরক্ষা গভীরতা।


ভূরাজনীতিবিদ ফেয়ারগ্রীভের মতে, "চীনের মুক্তসমুদ্র সম্মুখীন অবস্থান সত্বেও, একটি ‘ভূমধ্যসাগর’ –এর অনুপস্থিতির অতি নীরব ঋণাত্মক নিয়ন্ত্রণ-প্রভাব, চীনকে সামুদ্রিক শক্তিতে পরিণত না করে, বরং স্থলশক্তিতে পরিণত করেছে"। বর্তমান সময়ে ঠিক এই ধারণা থেকেই বের হয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চীন।


চীনের বর্তমান নেতা সি চিন পিংয়ের শাসনকাল দেশটির জনগণকে পরাক্রমশালী একটি জাতি হিসেবে চীনকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অন্যদিকে ভারত আঞ্চলিক শক্তি থেকে পরাশক্তি হতে চায়। এই দ্বৈরথের বহু সার্কাস অলরেডি আমরা দেখে ফেলেছি। ৫৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পাকিস্তানে গদর নৌবন্দর, শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে সিআইসিটি সমুদ্রবন্দর এবং নেপালের লারচা শহরে এক কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে স্থল বন্দর নির্মাণের পর চীনের নজর এবার মায়ানমারের দিকে।


পরাশক্তি হওয়ার দৌড়ে আরও এগোতে শ্রীলঙ্কার মত মায়ানমারেও সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করতে চায় চীন। সম্প্রতি মায়ানমারের সাথে তেল গ্যাস পাইপলাইন ও অন্যান্য কানেকটিভিটি প্রজেক্টের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার পেতে যাচ্ছে চীন। মানে দাঁড়াচ্ছে, চীনের সাথে মায়ানমারের সম্পর্ক এখন গ-ভী-র! এই সম্পর্কের গভীরতা মাপতেই মোদী সম্প্রতি ঘুরে আসল মায়ানমার থেকে। কিন্তু...এই চীন তো অপ্রতিরোধ্য!


আগেই বলেছি, সমুদ্রের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রথম পূর্বশর্ত হচ্ছে “রণকৌশলের অবস্থানিক সুযোগসুবিধা সম্বলিত স্থলঘাঁটির ওপর নিয়ন্ত্রণ”। আর বঙ্গোপসাগরে প্রভাব বিস্তার করা মানে ভারতকে চাপে রাখা। অবস্থানগত দিক দিয়ে আরাকান হলো সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। (সংযুক্তি) কেননা ঠিক বিপরীত দিকে শ্রীলঙ্কাতে তো তাদের নিয়ন্ত্রণ আছেই। তো জায়গাটা ফাঁকা করার জন্য শেষ পর্যন্ত যে চীন সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে আমি মনে করি। আরাকান ব্যতীত অন্য জায়গাও হতে পারে; কিন্তু সেখান থেকে কি ভারতকে ভয় দেখানো যাবে? যাবে না।


সুতরাং এহেন বিশ্বরাজনীতিতে আমরা নেহাৎই শিশু। চীন যদি আরাকান খালি করার প্রচেষ্টায় সফল হয় তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ভারত। ভারত কখোনোই চাইবে না যে চীন মায়ানমারে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারুক। কেননা পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর নির্মাণ করায় অলরেডি ভারত প্রেশারে। আর এই প্রেশার “হাই প্রেশার” –এ উন্নীত হবে তখনই যখন মায়ানমারকে পুরোপুরি গ্রীপ করে ফেলবে চীন।


ভারত আমাদের আদি বন্ধু। আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে লোকদেখানো চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি আমাদেরকে দিনশেষে ভারতের মুখের দিকেই চেয়ে থাকতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে না থাকলেও আমার বিশ্বাস –“থাকবে...আসবে”। কেননা ভারতের দরকার চীনের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ঠেকানো; আর বাংলাদেশের দরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। খেলাটা সেই আরাকানকেন্দ্রিকই।


কিন্তু...চীন কি এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র? যেখানে মায়ানমারের মত একখানা ভালো বন্ধু তার রয়েছে! আমার তো মনে হয় না।


এই সমস্যা সুদূরপ্রসারী...

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×