somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"প্লে-বয় এর আত্বকথন এবং একজন দেবী"

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেম: ১
স্কুল জীবনের শেষদিক থেকে তার সাথে সম্পর্ক ছিল। স্কুল পালিয়ে দেখা করা, ঘুরে বেড়ানো, তার দেয়া একই চিঠি হাজারবার পড়া, ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নবোনা, সবই চলেছিল টানা ৩ বছর। তারপর HSC পরীক্ষার আগে হঠা‌‌‌ত মেয়েদের সেই পুরাতন ডায়লগ, "বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, ছেলে ইটালী থাকে..........."
: তুমি মেনে নিলে???????
"আমার কিছু করার ছিলনা.........ও.......তাছাড়া........"
অত:পর আমার এস.এস.সি'তে করা নজরকাড়া রেজাল্টের সাথে যোগ HSC লজ্জাকর রেজাল্ট।
তবে দেড় বছরের মধ্যে অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসতে পারলাম, বন্ধুদের সাহায্যে আর মা-বাবার করুন মুখের দিকে তাকিয়ে।
প্রেম: ২
ভার্সিটিতে প্রথম থেকেই লেগে থাকলাম ভালো রেজাল্ট করার জন্য।
বন্ধু, পড়াশোনা, নামায, সাহিত্য সব কিছু নিয়ে ভালোই চলছিল লাইফ। ৪র্থ ইয়ারে ঝড়ের বেগে জীবনে আসল 'দেবি'। হ্যা আমি ওকে দেবি বলেই ডাকতাম। এত সুন্দর এবং এত সহজ মেয়ে আমি আর কখনোই দেখি নাই। প্রেমে পড়লাম, শুধু পড়লাম না উথাল-পাথাল অবস্থা। পড়ালেখা টেবিলে রেখে সারাদিন শুধু ঘুরে বেড়াই। এভাবে মাস্টার্স শেষের দিকে, আবার সেই বহু-পুরাতন কথাটা শুনতে হয়, "বাবা-মা, আমার জন্য এক ফরেনার ছেলে ঠিক করে ফেলেছে, তুমি কিছু একটা কর প্লিজ...."
আমারতো আর ৪/৫ মাস পরেই মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে, তুমি যেমন করেই হোক আমাকে শুধু এইকয়টা মাস সময় দাও.... শুধু এ্টুকু বলেই বসে থাকিনি, আমি সাহস করে তার বাবার সাথে দেখা করলাম। তার শিক্ষিত বাবা চিরাচরিত একটা কথা বলেই আমাকে চরম অপমান করলেন।
"তুমি পড়ালেখা শেষ করে যতদিনে প্রতিষ্ঠিত হবে, ততদিনে আমার নাতনিই বিয়ের উপযুক্ত হবে" এবং আমার সাথে সেই ফরেনার ছেলের তুলনা করে তার সৌর্য-বীর্যর একটা ক্যারিশমা দেখিয়ে দিলেন।
অত:পর আমার ভালোবাসার দেবি'র রূপান্তর ঘটে খুব দ্রুত এবং আমার একসময় মনে হয় সে এখন দেবি 'কালিমূর্তি' ।
আসল মজাটা মনে হয় তারপর:
৭/৮ মাস পরেই আমার শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে বিদেশ যাওয়ার সব কনর্ফাম হয়ে গেল। এরপরই দেখতে লাগলাম, আমার চারপাশের অনেক পরিবর্তন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনানাকোন পাত্রীর সন্ধান নিয়ে আমার এলাকার সুহৃদ আন্টিরা আসতো। কারণ তাদের মতে আমার নাকি এখন ডিমান্ড ভালো !
প্রথমে অস্বস্তি লাগতো, পরে মাথায় বুদ্ধিটা আসে। আমিও একের পর এক পাত্রী দেখতে লাগলাম (অবশ্যই মর্ডাণ স্টাইলে রেস্টুরেন্ট বা পার্কে) এবং আমার ভালো মানুষী টাইপ চেহারা নিয়ে মেয়েগুলির সাথে আলাপ করতাম, ফোন নাম্বার রাখতাম।
এবং সবার সাথেই এমন ভাব করতাম যে, আমি তাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করবো না। ৪টা মেয়ের ফ্যামিলিই জানতো আমি তাদের মেয়েকেই পছন্দ করি এবং আগে হোক পরে হোক এমন সুপাত্র (!) হাতছাড়া হচ্ছে না।
অতএব, লে বাবা মজাটা করে নে। আমার অতীতের সব অপমান আমি একে একে তুলে নিতে লাগলাম। ৩/৪ বছর সম্পর্ক রেখেও, শুধু পবিত্র একটা সম্পর্কের জন্য প্রেমিকার হাতধরার বেশি কোনকিছু মনে স্থান দেই নি, সেই আমি ২ সপ্তাহের রিলেশানে ফরেন পাত্র হিসেবে তেমন কোন বাধাই পাই না। কেবল শুনি...... "তোমাকে দেখে মনেই হয় না, এত দুষ্ট তুমি !!!...."
মনে মনে হাসি আর ভাবি...এইকথাটা সে কয়জনকে বলেছে....
আবার অনেক সময় আশ্চর্য হই, সব মেয়ে একই ডায়লগ দেয়.....যেমন "এ..ই..ই গায়ে হাত দেবে না প্লিজ, লোকে দেখবে" আমি গায়ে অবধারিত ভাবে হাত দেই এবং হাসি এই ভেবে 'তারতো কোন আপত্তি নেই শুধু লোকে না দেখলেই হলো।' এবং যার বাসাতেই যাই হবু জামাই এর খুব খাতির,
"এই.......তামান্না দেখে যা কে এসেছে.....তোমরাকথা বল...আমি আসছি" এই ভাবে মেয়ের মা-খালারা আমি না চাইতেই নিরিবিলিতে একটু-আধটু ইয়ে মানে আদর করার সুযোগ করে দেয়।
শেষের দিকে ৪টা মেয়েই প্রায় একই ডায়ালগ দেয়, "তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর, আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে, আমি আত্মহত্যা করব" আর আমি কপট রাগ করে বলি -
"ছি! এমন কথা বলতে নেই" (আর মনে মনে বলে আমি বিয়ে না করলেও আরেকটা আরও ভালো ফরেনার পাত্র পেলে একই ভাবে তাকেও এই কথাই বলবে )।
আমার বিদেশ যাওয়ার ১ মাস বাকি, সব কমপ্লিট তাই শুধু খেয়ে দেয়ে ফাও ডেটিং করে বেড়াই। প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারো সাথে ডেট থাকতো। সবচেয়ে চরম মজা পেলাম আমার একসময়ের দেবির কাছ থেকে। একদিন হঠা্ত ফোন পেলাম- সেই চিরচেনা কন্ঠ,
"শুনলাম তুমি ক্যানাডা যাচ্ছ......
: হ্যা
"আমাকে একবারও বললে না....." (কান্না...কান্নার দমকে সে কথাও বলতে পারতেছিলনা, পারেও বটে দেবিরা)
: সময় হ্য়নি...
"তাই বলে আমাকে বল্লে না.....(কান্না...)"
আমি মনে মনে বলি, তখন ফরেনার সুপাত্র পেয়ে তুমি যেভাবে পাল্টে গেলে তাতে তোমাকে আমার আপন ভাবতেই ঘৃনা হয়।
শুধু মুখে বলি : ব্যস্ত ছিলাম ।
এভাবেই আবার প্রতিদিন ফোন করতো, পরে নিজেই বললো তার সেই বিয়েটা হয়নি..... কারণ বলতে চেয়েছিল আমি শুনিনি।
"তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসও না?"
: এখন আমি কোন মেয়েকেই ভালোবাসি না শুধু তাদের শরীর পাবার জন্য যতটুকু ভালোবাসার ভান করতে হয় ততটুকু করি, আই থিংক দ্যাটস এণাফ।
তাকে এই উত্তর দিতে পেরে আমি সত্যিকারের আনন্দ পেলাম। আমার বুক থেকে মনে হয় একটা পাথর সেদিন নেমে গেলো। তারপর আর ফোন করেনি, এবং আমি খুব প্রশান্ত মনে চলে এলাম ক্যানাডা ।


৫ বছর পর আত্ম-উপলব্ধি:
ঐগুলা ছিল আমার সাময়িক উত্তপ্ত মস্তিষ্কের চিন্তা-ভাবনা। জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে এখন বুঝি........প্রতিশোধ নেয়া বা নেয়ার চিন্তা করাটাই কত বোকামী। এখন অবিরত উত্তম হইবার চেষ্টা করিতেছি...কিন্তুক আমাদের বস শয়তান তো বসিয়া নাই !
.

.

.
এটা একদম নিছক গল্প নয় । পরিচিত একজনের পুরোনো বইয়ের দোকানে একটা ডাইরি পেয়েছিলাম । ডাইরী পড়েই এ গল্প টি লিখতে বসেছিলাম । শুধু তার নামটা জানি । ঠিকানা কোথাও লেখা নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৭:৩৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রোএক্টিভিটি এবং কম্পাউন্ড ইফেক্ট: আমার গুরুত্বপূর্ণ দুইটি শিক্ষা

লিখেছেন মাহদী হাসান শিহাব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১১



আমার গুরুত্বপূর্ন দুইটা লার্নিং শেয়ার করি। এই দুইটা টুল মাথায় রাখলে দৈনন্দিন কাজ করা অনেক সহজ হয়। টুল দুইটা কাজ করতে ও কাজ শেষ করতে ম্যাজিক হিসাবে কাজ করে।

এক.

স্টিফেন কোভের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

লিখেছেন সায়েমার ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৩

প্রসঙ্গ রূপান্তরঃ
ট্রান্সজেন্ডার, সমকামিতা এবং যৌনতা বিষয়ক কিছু আবশ্যিক আলাপ

১।
যৌন প্রাকৃতিক, জেন্ডার নয়।জেন্ডার মানুষের সৃষ্টি (social, cultural construction)। যৌনকে বিভিন্ন সমাজ বিভিন্ন সময়ে যেভাবে ডিল করে, তাঁকে ঘিরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্মৃতির ঝলক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুভূতি এবং মনের শান্তির খোঁজে

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০১



সরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সংমিশ্রণে একটি ঘূর্ণায়মান পথ জুড়ে ঘুরে বেড়ানোর অবস্থানে আমি খুব শান্তি অনুভব করি। নদীর জল ছুঁয়ে পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে এক আন্তরিক সংযোগ অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×