বিডিআর বিদ্রোহের না জানা গোপন অধ্যায় এবং অন্তরালের খুনি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রথমেই বলে নেই, চুলকানী উঠলে এই পোস্ট হতে দূরে থাকবেন। আমার দেশের ৫৭জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে, এর বিচার আমরা এখনই দাবী করব। কবে বাংলা পরীক্ষা শেষ হবে, ৪২ বছর পর শাহবাগে দল বেঁধে রাজনৈতিক ভরণ পোষণে আন্দোলন করা হবে, সেই আশায় বসে এখন আঙ্গুল চুষবোনা।
অত্যন্ত পরিকল্পিত এই হত্যাযজ্ঞের পিছনে যেমন অনেক ইতিহাস ছিল, তেমনি পরেও তদন্ত,বিচার নিয়ে ঘটা অসংখ্য নাটক লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। সেগুলোই আপনাদের কাছে তুলে ধরবো। আপনারা পড়ুন, জানুন এবং শেয়ার করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সাবেক সচিব আনিস উজ জামান খানের নেতৃত্বে সরকারী তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত শেষে ৫০পৃষ্ঠার রিপোর্টের মাঝে মাত্র ৬পৃষ্ঠা সাংবাদিকদের মাঝে বিলি করা হয়, বাকিগুলো দীর্ঘসময় অপ্রকাশিত রয়ে যায়। ২০১০ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তখন দেখা যায়, উপরের মহলের নির্দেশে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্যন্ত তদন্ত কমিটিকে যথাযথ তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি এবং আরও অনেক না জানা তথ্যও জানা যায় রিপোর্টটির মাধ্যমে।
উল্লেখ্য তদন্তচলাকালীন তিন কমিটির প্রধান, সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী লেঃ কঃ ফারুক খান বিডিআর বিদ্রোহের সাথে আল কায়েদা, জঙ্গি, উলফা, জামাত শিবির ইত্যাদি একের পর এক ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে গিয়েছে; ফলে আসল ষড়যন্ত্রকারী ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই থেকে গেছে।
উক্ত তদন্ত কমিটিতে বেসামরিক, সামরিক বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি করা হয়। সরকার বারবার সুষ্ঠু তদন্তের কথা বললেও, রিপোর্টের সীমাবদ্ধতা অংশ থেকে যা পাওয়া যায়, তা হল-
- তদন্তের স্বার্থে কমিটি কতোগুলো গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ আবশ্যক মনে করেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে একাজগুলো করা সম্ভব হয়নি।ফলশ্রুতিতে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণসহ এ বিদ্রোহ এবং হত্যাকাণ্ডের মূল ষড়যন্ত্রকারীদের সনাক্ত করা এবং ঘটনার পিছনে মূল কারণ বা মোটিভ উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
- এনএসআই, ডিজিএফআই, র্যাব, সিআইডি, পুলিশের এসবি ইত্যাদি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও আশানুরূপ সহায়তা প্রদান করেনি।
- কমিটিকে জিজ্ঞাসাবাদের উপযুক্ত সরঞ্জাম, প্রযুক্তি, কৌশল কিছুই সরবরাহ করা হয়নি।
(রিপোর্টঃ পৃষ্ঠা নং ৮)
এতোগুলো বীর সেনা কর্মকর্তার হত্যার তদন্তে এরকম একটি ‘নিধিরাম সর্দার’ টাইপকমিটি গঠনের পিছনে তাহলে কার কি স্বার্থ কাজ করেছিল?
বিদ্রোহের পটভূমিঃ
রিপোর্ট হতে জানা যায়, নির্বাচনের পূর্বেই বিদ্রোহী গ্রুপটি শেখ মনির পুত্র এমপি ব্যারিস্টার তাপসের কাছে দাবী দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয়।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভের ৩/৪ দিনের মাথায় পুনরায় এই গ্রুপটি তাপসের বাসভবন ‘স্কাইস্টারে’ মিটিং করে।
বিদ্রোহের অল্প কিছুদিন পূর্বে গ্রুপটি শেখ সেলিমের সাথেও একটি বৈঠক করে।
(তদন্ত রিপোর্টঃ পৃষ্ঠা নং ৯-১০)
পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে পার্থক্যঃ
বিদ্রোহীদের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের ৩য়(গ) পয়েন্টটি থেকে জানা যায়,
- ডিজির মাধ্যমে অন্য অফিসারদের জিম্মি করা হবে। কোন বাঁধা আসলে গুলি করা হবে,কিন্তু কাউকে হত্যা করা হবে না। (তদন্ত রিপোর্টঃ পৃষ্ঠা নং ১১)
এই কথার সত্যতা পাওয়া যায় খোদ তদন্ত কমিটির বক্তব্য থেকে,
“তবে তদন্ত কমিটি মনে করে এজন্য এতো বিপুল সংখ্যক সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে হত্যা তাদের ক্ষোভের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। সার্বিকভাবে দেশের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্য কোন মহল বিডিআর বিদ্রোহীদের দাবী-দাওয়ার আড়ালে নিজেদের কায়েমী স্বার্থ উদ্ধারের প্রয়াস পেয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়”।
(তদন্ত রিপোর্টঃ পৃষ্ঠা নং ১২)
তাহলে??? সীমান্তে বিএসএফের সাথে জান বাজী রেখে লড়া এই বাহিনীকে পঙ্গু করে দিলে কার কায়েমী স্বার্থ উদ্ধার হবে বলে মনে করেন?
সাহায্যের আবেদন এবং ফিডব্যাকঃ
বিদ্রোহের সূত্রপাতের সাথে সাথে সকাল ৯.৩০ মিনিটে ডিজি মেজর জেঃ শাকিলপ্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান, র্যাব এবং ডিজিএফআই এর মহাসচিবের কাছে মোবাইল ফোনে সাহায্যের আবেদন জানান। আধা ঘণ্টার মাঝেই র্যাব এবং ১১টায় সেনাবাহিনীর অগ্রগামী দলটি সেখানে পৌঁছে যায়। (পৃষ্ঠা নং ১৮)
বেলা সাড়ে ১২টার মধ্যেই পিলখানার অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর উপযুক্ত ৭টি এপিসি(আরমার্ড পার্সোন্যাল ক্যারিয়ার) সহ প্রচুর সংখ্যক সেনাও উপস্থিত হয়। কিন্তু তাদের অভিযান চালানো হতে সম্পূর্ণ বিরত রাখা হয়। (পৃষ্ঠা নং ৩২)
বরং উল্টা বিডিআর বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, ইতিপূর্বে বিদ্রোহীদের সাথে বৈঠক করা ফজলে নূর তাপসসহ অন্যান্যদের প্রেরণ করা হয়।
মুন্নি শাহা'র নেতৃত্বে এটিএন বাংলাসহ আরও কয়েকটি মিডিয়া বিদ্রোহীদের মতামত জানার নামে তাদের পক্ষে জনগণের ‘ইমোশন গ্রো’ করার ঘৃণ্য কাজটিও এসময় সম্পন্ন করে। পিলাখানায় সেনাবাহিনীর অভিযান দেরী হওয়া এবং সরকারের টানা পোড়েনের পিছনে এই মিডিয়া প্রভাবিত জনগণের ইমোশনেরও একটা বিশাল ভূমিকা ছিল; যা ২৭তারিখ কর্মকর্তাদের লাশ উদ্ধারের আগ-পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
৪৪ ব্যাটেলিয়ান, মুখোশধারী হত্যাকারীঃ
রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট জানা যায় বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ৪৪নং ব্যাটেলিয়ান থেকে।
- অস্ত্রধারী বিদ্রোহীরা প্রথমে গুলি চালালেও তাদের লক্ষ ছিল মাটির দিকে বা উপরে ফাঁকা ফায়ার। (পৃষ্ঠা নং ১৮)
- তারা দরবারের হলের চারপাশে ঘিরে গুলি চালালেও সেখানে ঢুকে অফিসারদের করেনি, বরং আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল।
- অফিসাররা ডিজি শাকিলের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসতেই সাড়িবদ্ধ করিয়ে দাঁড় করিয়ে মুখোশপড়া জওয়ানেরা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। (পৃষ্ঠা নং ১৯)
তাহলে এখানে মোট দুই শ্রেণীর জওয়ান পাওয়া যাচ্ছে। এক শ্রেণী সাধারণ বিদ্রোহী,আরেক শ্রেণী মুখোশধারী কিলিং গ্রুপ।
প্রশ্নটা এখানেই,
-হাজার হাজার জওয়ানের মাঝে নির্দিষ্ট সংখ্যক মুখোশধারী কিলার হবার কারণ কি? এরা কারা?
-কি কারণে তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের অফিসারদের মারার দায়িত্বটুকু পালন করল?
-এরা কি প্রকৃতই বিডিআর এর সৈনিক?
ব্লগার দাসত্বের স্ট্যাটাসটি আবারও একটু দেখে আসেন তাহলে। এতে কি বিডিআর বিদ্রোহের প্রশ্ন নাকি উত্তর নিহিত?
উপরের পয়েন্টগুলো পড়ে বিবেচনা করুন, কমিটির বক্তব্য অনুযায়ী কার স্বার্থ আদায়ে আমাদের দেশের ৫৭জন বীর কর্মকর্তাকে বলি দেওয়া হল?
আর আপনারা অবশ্যই নিজে রিপোর্টটি পড়ুন এবং এই পোস্টটি শেয়ার করুন সবার মাঝে।
তদন্ত রিপোর্টঃ
এই পোষ্টের সুত্র এই পেইজ।
২৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...
ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।
মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হার জিত চ্যাপ্টার ৩০
তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবনাস্ত
ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে
প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন