somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঁশি

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার সেজ চাচা সিজোফ্রেনিয়াক ছিলেন।
বড় হবার পর থেকে কখনোই তাকে পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় দেখিনি...সারাক্ষণ দেখেছি,উনি হাত নেড়ে নেড়ে অদৃশ্য কারো সাথে অনর্গল গল্প করে যাচ্ছেন...
সেজো চাচা একসময় আর্মি তে ছিলেন...তখন অবশ্য আমার জন্ম-ও হয়নি...তবে ছোট বেলার অল্প কিছু স্মৃতি টুকটাক মনে আছে.....
........উনি হঠাৎ করেই মাঝে মধ্যে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যেতেন! আর্মিদের সাথে থাকাকালীন সময়ে কি যেন একটা মজার গান শিখেছিলেন,,,ওইটা গাইতে গাইতে আমাদেরকে নেচে নেচে দেখাতেন!
........মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় একটানা অনেক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে যেতেন...একটা সময় আম্মু কিংবা বড় চাচী,,বিরক্ত হয়ে একগাদা বকা-ঝকা শুনিয়ে দিত,,,
আর বাঁশির সুর থেমে যেত.....
সেজো কাকু ভাল বাঁশি বাজাতেন.....আশেপাশের সব এলাকায় সবাই তখন বলাবলি করতো,ওইযে একটা ছেলে আছে-না,,,লম্বা,ফর্সা,ছিপছিপে শরীর,,খুব চমৎকার বাঁশি বাজায়.....ছেলেটা না পাগল হয়ে গেছে.....
,,,,,,,
বড় হবার পর আর কখনোই বাঁশি বাজাতে শুনিনি....ওনাকে শুধু শুনতাম,উনি প্রতিনিয়তই অদৃশ্য কাদের সাথে যেনো_অনর্গল কথা বলে যাচ্ছেন..........অনর্গল........
কেবল তিনবেলায় খাবার সময় আমাদের ঘরে আসতেন।
আম্মু মেঝেতে পাটি বিছিয়ে দিয়ে ওনাকে খেতে দিতেন,,উনি সেই পাটিতে বসে_কোলের উপর ওনার পোষা বিড়ালটাকে নিয়ে একপ্লেটে ভাত খেতেন....
,,,,,উনি যেদিন মারা গেলেন_সেদিন ছিল প্রচন্ড শীতের সকাল.....প্রচন্ড.......
খবর শুনে কেমন যেন রোবট রোবট হয়ে গিয়েছিলাম.......এই প্রথম কোনো মৃত মানুষের শরীরে হাত রাখলাম.....বুকের উপর সমস্ত কিছু শূণ্য...কোনো স্পন্দন নেই......হাতটা বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছিলাম......শান্ত......ঠান্ডা.......প্রাণহীন....কোমল একটা হাত..........
,,,,,,,
ছোট কাকুকে এখন দেখি,,,আফিস থেকে ফিরে বাঁশি নিয়ে বসেছেন !
মোটামুটি মন্দ বাজান-না তিনি! তাও যেটুকু বাজান,সেটুকু খুব আগ্রহ নিয়ে সবাইকে ডেকে ডেকে শোনান!!! আমার ভাইটা বরাবর-ই বিরক্ত হয়! বুড়ো বয়সে এসব হচ্ছে হাস্যকর ছেলেমানুষী!
আমার কিন্তু মোটেও কখনো বিরক্ত লাগেনি! কিছু কিছু ছেলেমানুষী,,,না থাকলেই বরং বেশী হাহাকার থেকে যেত.....কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভাললাগার!
কিছু কিছু ছেলেমানুষী ভালবাসার!!
,,,,,,,
একটা সময় হঠাৎ করে এই একই রকম ছেলেমানুষী আমার আব্বুকেও পেয়ে বসলো! বাশিঁতে শুধুমাত্র সারগাম টুকু তুলতে পারেন তিনি......,,,
একদিন দেখলাম নানান সাইজের একগাদা বাঁশি কিনে এনে দিনরাত কেবল সারগাম বাজিয়ে যাচ্ছেন!
দিন-রাত...............!
অবশ্য এর থেকে বেশী আব্বুকে দিয়ে আর হল না...
একটা সময় উনি ওনার শখের বাঁশিগুলো_ওনার এক একজন প্রিয় মানুষকে একটা করে উপহার দেয়া শুরু করলেন!
মজার ব্যাপার হল,,,
এই যে এখানে আজকে যেটুকু বাঁশি নিয়ে গুছিয়ে লিখেছি,,
আমি নিজেও কখনো এমন করে গুছিয়ে কখনো ভাবিনি.........অথচ আজকে যখন এখানে এটুকু গুছিয়ে লিখছি,,,তখন পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন বিষন্ন একটা গল্প হয়ে যাচ্ছে.........
,,,,,,
টুকটাক তো গান করা হয়.......গিটার নিয়ে টুকটাক যেটুকু এক্সপেরিমেন্ট চলছিল,,,সেটুকুকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে_এখন নিয়ম করে প্রতিদিন গীটার নিয়ে বসা হয়........,,,ভাবছিলাম গীটারটা যখন পুরোপুরি হাতে চলে আসবে,,,এরপর কোনটা শুরু করবো???
ছোট ভাইয়ের মাউথঅর্গানের শখ........ওর সাজেশন-"মাউথঅর্গান" !
পুরনো প্রেমিক গীটার বাজাতো,,,আর আমাকে সবসময় বলতো-"ভায়োলিনটা" শিখে ফেলো,,,আমার খুব পছন্দের !!
যাদের সাথে গান করি,,ওরা রাবাব বাজায়,সেঁতার বাজায়,তবলা বাজায়....
তারপরেও কেন যেন নিজেই নিজে ঠিক কররাম-"বাঁশি" শিখবো......!
অথচ তখনো_এমন করে ভাবা হয়নি ঠিক..............
আজকে একটা মুভি দেখলাম-"দ্যা ইন্টারপ্রিটার",,,
মুভির মাঝের একটা দৃশ্যে_একটা মেয়ে রাতের বেলায় নিজের ঘরে বসে_একা একা বাঁশি বাজিয়ে যাচ্ছে........
হঠাৎ করে দেখে এত্ত ভাল লাগলো...........!
একা থাকা মেয়েগুলোর গল্পগুলো এমনিতেই আমার বরাবরের পছন্দের !!
আর সেই মেয়েটা গভীর রাতে_সরল কোনো সুরে_যখন মগ্ন হয়ে বাঁশি বাজিয়ে যায়.........,,,
তখন_এই আমিকে সেই জায়গায় সাথে সাথে রিপ্লেসড্ করে দিই!!!
বাঁশির সাথের যোগাযোগটা সম্ভবত জেনেটিক......
তবে যেটাই কিংবা যাই হোক না কেনো,,,
একা থাকার রাতগুলোতে কোনো একদিন নিশ্চিত বাঁশির সঙ্গ যুক্ত হচ্ছে!
সময় লাগবে অনেক..............অনেক সাধনার ব্যাপার...............,,,
তবে,,,
সময় আছে!
অনেক আছে!!
বুড়ো হবার এখনোতো_আরো অনেক বছর বাকি!!!




সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×