আমাকে পড়াশুনা শিখাইতে যাইয়া মাতা কম বিড়ম্বনার শিকার হন নাই।
বড় ভাইয়ের পড়াশুনা দেখিয়া নিজে নিজে কিছু ক খ গ লিখিতে শিখিয়াছিলাম। কিন্তু সমস্যা হইয়াছিল এই যে, বড় ভাই ডান হাতে লিখিত আর আমি বাম হাতে। তাই এই সব ক খ গ ঘ অক্ষরগুলি আমার নিকট উলটা রুপে আবির্ভূত হইলো। মাতা পড়াইতে যাইয়া বলিতেন মাত্রা উপরে হইবে, নিচে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মাত্রা নিচে দিয়াই উলটা করিয়াই বর্ণমালা লিখিতাম। ফলে হাতের লেখা উলটাইয়া গেল এবং অদ্যোবধি হাতের লেখা উল্টাই রইয়া গেছে।
মাতা বলিতেন পড়াশুনা ব্যতিত বড় হইতে পারিবা না। তখন উদাহরণ টানিতাম, "মা, অমুকে তো পড়াশুনা করে নাই। তাইলে এত বড় আর লম্বা হইলো কিভাবে?" মাতা বকঝকা করিয়া প্রশ্নসমুহ এড়াইয়া যাইতেন। তাও মাথায় ঘুর ঘুর করিত পড়াশুনা না করিয়া কিভাবে বড় হওয়া যায়। যাহাই হউক বুদ্ধি একখানা বাহির হইল। যাহার ফলে প্রায়ই মাতা দেখিতেন যে ফ্রিজ পুরোপুরি ধু ধু মরুপ্রান্তর। মাতা বহুত হুঁশিয়ারি করার পরও কোন লাভ হয় নাই। পরে মাতা খাবার-দাবার হিসাব করিয়া রাখিতেন।
ইরেজার নিয়া মাতা খুবই ভয়ে ভয়ে থাকিতেন। এবং উহাকে এক মুহূর্তের জন্যে হলেও নিজের চোখের আড়াল হইতে দিতেন না। কেননা সেই হতভাগ্য ইরেজার সুযোগ পাইলেই আমি মুখে পুরিয়া লইতাম। ফলে তাহা টুকরা টুকরা হইয়া বাহির হইতো এনবং কিছু অংশ পেটেও চলিয়া যাইতো। মাতা ইরেজার রক্ষার্থে আমাকে বলিতেন, "ইরেজার ভক্ষণ করিলে পরে কিন্তু পেটে বৃক্ষ হইবে, পেট কাটিয়া সেই বৃক্ষ বাইর করিতে হইবে।" ইহা শুনিয়া আমার
ইরেজার ভক্ষণের বাসনা আরো বাড়িয়া গিয়াছিল। আমি দ্বিগুণ উৎসাহে ইরেহার ভক্ষণ করিতাম। মাতা নিষেধ করিলে বলিতাম, "বৃক্ষ হইলে তো তোমার ইরেজার ক্রয়ের খরচ বাঁচিবে। উলটা তুমি কিছু বিক্রয়ও করিতে পারিবে।"
অতঃপর মাতা আর না পাড়িয়া নার্সারিতেই আমাকে একজন গৃহশিক্ষকের নিকট সোপর্দ করিয়াছিলেন। এই গৃহশিক্ষক আমাকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াইয়াছিলেন। গৃহশিক্ষক না রাখিয়াও কোন উপায় ছিল না। কারণ। গৃহশিক্ষক যতক্ষণ পড়াইতেন আমিও ততক্ষণ পড়িতাম। এছাড়া কখনও কেউ বাসায় আমাকে পড়াইতে বসাইতে পারে নাই। কখনও একা একা এক সেকেন্ডের জন্যেও পড়িতে বসশিয়াছি বলিয়া আমার মনে পড়ে না।
এইভাবেই মাতা আমার পড়াশুনার বিড়ম্বনা হইতে হাফ ছাড়িয়া বাঁচিয়াছিলেন।