আস-সালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
রমজান আমার জন্য সবচেয়ে আনন্দের মাস হয়। পরিবার ছাড়া হতভাগার ছাত্র হোস্টেলে অন্যপরিবারের সাথে, মসজিদের অন্য পরিবারের সাথে আমার রমজানটা আল্লাহর রহমত ও বরকতে সুন্দর ভাবেই অতিবাহিত হয়। এখানের মসজিদে দেখছি তারাবির সময় কোরআন সুপার সনিক গতিতে না পড়েও, মধুর কন্ঠে সঠিক ভাবে সঠিক সময় পুরো কোরআন সুন্দর ভাবে শেষ করা যায়। গত কাল ২৮ রোযা ছিল, আমাদের এখানে পুরো কোরআন শেষ করলো। আল্লাহ সকল নেক মুসলিম বান্দা বান্দীদের মাফ করে দিক (আমিন)। আলোচ্য বিষয়, আমি যখন বাংলাদেশে তারাবি পড়তাম ঘটানচক্রে, তখন তারাবিতে মনোযোগ কম দিয়ে, মনোযোগ দিতাম দুনিয়ার আজে বাজে সব ধরনের কাজে।কারণটা কি? এখানে তারাবিতে দাড়ালে কোরআন না বুঝেলেও, শুনার উপর এতটা ধ্যান চলে আসে যে সব ভুলে যাই। কারণটা বলছি।
আমাদের হাফেজ সমাজের কাছে প্রশ্ন, আমরা যারা কোরআন তেমন বুঝি না (এটা আমাদেরই অন্যায় এটা মানছি), তারা যখন তারাবি পড়ে আপনাদের পিছনে, আপনিকি বলতে পারবেন তাদের মনোযোগ থাকে আপনার তিলোয়াতের উপর? আপনারা কেন কোরআন এভাবে পড়েন, কোথায় আছে এভাবে সুপার সনিক গতিতে কোরআন পড়তে হবে। আমরা যারা খারাপ, দুর্বল ইমানের বান্দা , ইসলামের ছাত্র না, তারা যখন কোরআন এভাবে পড়া শুনি তখন কিন্তু আমাদের মনে আপনাদের প্রতি ভালবাসা তো আসে না বরং অনেকসময় কোরআন বিমুখ হয়ে যাই। আমি জানি না, তবে কোরআন আল্লাহ বানী এর প্রতি ভালবাসা আল্লাহ সকল মানুষের কলবে দিয়ে দিয়েছি, এই কোরআনকে এভাবে পড়ার যুক্তি কি? কোরআন না বুঝে অনেক সময় গোনাগার বান্দারা কোরাআন তিলয়াত শুনার পর চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। আমি সঠিক না , শুনেছি কোন এক হাদিসে আছে, জাহান্নাম যখন ক্ষিপ্ত হয়ে ঠকবগ করতে থাকবে, তখন নাকি মহান রব্বুল আলামিন, কিছু পানির ছিটে দিয়ে জাহান্নামকে ঠান্ডা করবে, তখন ফেরেশতারা/সবাই জানতে চাইবে কি এই পানি যে এই জাহান্নাম কে স্থির করলো। তখন আল্লাহ বলবে এই পানি হচ্ছে আমার সেইসব গোনাগার বান্দার চোখের পানি যারা গোনা করার পর আমার ভয়ে কেদেঁছিল। ( এটা আমি কোন এক ইউটিউব বক্তার ভিডিও থেকে শুনেছিলাম, আল্লাহ ভুল হলে মাফ করে দিক, আমাকে। আর যদি সঠিক হয় দয়াকরে কোন ভাই/বোন এই হাদিসটার রেফারেন্স দিবেন কি?)
দেখেন আপনি যদি একটু মধুর করে কোরআন পরেন কত গোনাগার বান্দা আছে যারা আপনার পিছনে নামায পড়ে, তাদের চোখে বৃষ্টি জড়তে পারে আল্লাহ চাইলে, আর আল্লাহর ভান্ডার অসীম, আপনি কত হাসানা অর্জন করতে পারবেন, আপনি ভাল জানেন আমার থেকে?
আরেকটি যুক্তি হল ২৬/২৭ এর ভিতর খতম করতেই হবে। এটা কি কোন দলিলে আছে যে তারাবি ২০ রাকাতই করে পরে ২৬/২৭ এর মধ্যে শেষ করতে হবে। দেখেন আপনারা যারা হাফেজ আছেন তারা দীর্ঘ সময় নিয়ে তারাবি পড়ান, এতে মানুষের মনোযোগ নষ্ট হয় এটা বিজ্ঞান সম্মত কথা, যে মানুষ এর মনোযোগ এক বিষয়ে বেশী সময় থাকে না । ২০ রাকাত, ১২ রাকাত, ৮ রাকাত তারাবি নিয়ে আবার অনেক মতানৈক্য আছে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক। তারাবি কোন ফরয নামায না, কিন্তু আমরা মুসলিমরা এটা ফরযের মত ২০ রাকাত করে ফেলেছি। হয়ত অনেকে দলীল দিবেন যে ২০ রাকাতই। যেহেতু আমি ইসলামের ছাত্র না আমি বেশি দলিল নিয়ে কথা বলতে পারবো না। তবে আমাদের রহমানুর রাহিম রাব্বুল আলামিন দয়ার সাগর আমি ২০ রাকাতের কম পড়লে আমাকে পাকড়াও করবে আমাকে শাস্তি দিবে কি?না আমি নবী(সা: ) এর কোন সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ করছি ২০ রাকাতের কম পরে, বরং আমি এক বক্তার মুখে শুনেছিলাম আমাদের প্রিয় নবী (সা: ) নাকী ৮ রাকাত পড়তেন ২ রাকাত ২ রাকাত করে পরে ৩ রাকাত পরতেন বিতর সহ,, আয়েশা (রা: ) বলেছেন ( আমি আবারো কোন রেফারেন্স দিতে পারছিনা বলে দু:খিত, ভুল হলে আল্লাহ মাপ করে দিক, এবং কোন ভাই/বোন যদি সঠিক করে দেয় আমাকে চির কৃতজ্ঞ থাকবো, হাদীস রেফারেন্সটাও দিয়েন দয়াকরে) ।
আমি একটি ছোট হিসাব দিচ্ছি, দেখেন এভাবে আপনি কোরআন সঠিক সময়ে সুন্দর তিলায়েতের মাধ্যমে শেষ করতে পারবেন। কোরআনের আয়াত সংখ্যা নাকি ৬৬৬৬। যদি প্রথম ২০ দিন ১২ রাকাত করে পড়ান তারাবি তাহলে সংখ্যা দাড়াচ্ছে ২০ গুন ১২ = ২৪০ রাকাত। এবং প্রত্যেক রাকাতে যদি সর্বনিম্ন ১৫টি করে আয়াত পড়েন। তাহলে সংখ্যা হবে ২৪০ গুন ১৫ = ৩৬০০। বাকি থাকে ৩০৬৬। বাকি ৭ বা ৮ দিন , ৭ ধরলে ২৬ রমজান হয় আর ৮ ধরলে ২৭ রমজান হয়, ধরুন ৮, এই শেষ ৮ দিন যেহেতু কদরের সময় রাকাত একটু বাড়িয়ে দিন, সাথে আয়াত সংখ্যা। যেমন ৮ দিন ১৬ রাকাত করে পড়ালে রাকাত হয় ১৬ গুন ৮ = ১২৮ রাকাত । এই ১২৮ রাকাতে সর্বনিম্ন ২৪ টা করে্ও আয়াত যদি পড়ান তাহলে্ও হয় ১২৮ গুন ২৪ = ৩০৭২ , কিন্তু আমাদের দরকার ৩০৬৬, প্রথম ২০ দিন ৩৬০০ এবং পরের ৮ দিন ৩০৬৬ টি আয়ত পড়লে পুরো কোরআন সঠিক সময়েই শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। এটাকে কোন ফতুয়া ভাববেন না, আমি বলছি এভাবে কি তারাবি পড়া যায় কি? কারণ আমি যেখানে তারাবি পড়লাম তারা এভাবেই তারাবি পড়েছে। এভাবে তারাবি পড়লে কি কোন দোষ বা গোনাহ হবে?
সবাইকে অনুরোধ করছি এটা আমার নিজস্ব মতামত, কেউ দয়াকরে ফতুয়া দিয়ে না। আমার কাছে মনে হল যে এত সুন্দর জীবন বিধান কে খুব কঠিন করে ফেলছে বাংলাদেশে। আপনারা যারা কোরআনের তারা আপনাদের উপর অনেক দায়িত্ব, আমাদের মত দুর্বল ঈমানের লোকদের আলোর পথে চলার সহজ পন্থা দেখানো। আশাকরি আমার পোষ্টটি কারো ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত আনবে না। যদি আনে দয়াকরে ক্ষমা করে দিবেন। ইসলাম সহজ একে কঠিন করবেন না। আর দয়াকরে আমার ভুলগুলো লিখবেন তাহলে আমি শিখতে পারবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:১৫