somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাঈদী : চন্দ্রে দেখিনি কিন্তু মর্ত্যে দেখেছি

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরআনের তাফসীর মাহফিলে একদিন

তখন শীতকাল, মাগরিবের নামাজ পড়ে আব্বা বললেন চলো। আমি জিজ্ঞেস করিনি কোথায়। কারন আব্বার সাথে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যেতে আমি সবসময় প্রস্তুত। গায়ে সুয়েটার, গলায় মাফলার পেঁচিয়ে যত দ্রুত সম্ভব রেডি হয়েই বললাম চলো। মজুমদারী থেকে কিছু পথ রিক্সায় করে যেয়ে আমাদেরকে নেমে যেতে হলো। কারন রাস্তা জুড়ে শুধু মানুষ আর মানুষ। সবাই কেমন যেন একটা কাফেলার মতো করে ছুটে চলছে কোথাও। আমি আব্বার হাতটা শক্ত করে ধরে হাঁটছি। শৈশবের উত্তেজনায় আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেস্টা করছি আসলে কি হচ্ছে চারিদিকে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় আমরা একটা বড় মাঠের মধ্যে উপস্থিত হলাম। সেই মাঠের নাম আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ। সেই মাঠের একপাশে বিশাল মঞ্চ। চারপাশে হাজার হাজার মানুষ। আমার সেদিন মনে হয়েছিলো সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝি এখানে জড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমরা যতটা পারি মঞ্চের কাছাকাছি বসার চেস্টা করলাম। চারিদিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আবিষ্কার করতে চাইলাম কি হচ্ছে এখানে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছি ব্যানারের লেখা "তাফসীরুল কোরআন মাহফিল"





একজন বিশেষ অতিথি

একজন মঞ্চে উঠে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বলতে লাগলেন কোন এক বিশেষ ব্যাক্তি আমাদের মাঝে এসে পৌঁছেছেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে মুহুর্মুহু শ্লোগান হচ্ছে। নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার বলে সমস্ত মাঠ জুড়ে এক মহাকল্লোল উঠেছে। যার যত শক্তি আছে সেই শক্তি দিয়ে আল্লাহু আকবার বলছে। মিছিলের কোরাসে প্রকম্পিত মাঠে একজন অতিথি এসে পৌঁছলেন। বুঝতে পারলাম ইনিই আজকের এই সভার আসল ব্যক্তি। উনার কথা শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ এই মাঠে জড়ো হয়েছেন। আমার আব্বা আমাকে নিয়ে এসেছেন এই লোকটার কথা শোনাবেন বলে। আমি ভাবছি কি আছে এই লোকটার মধ্যে যার কথা শোনার জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে।

বৈচিত্রময় বক্তৃতার যাদুকর

মধুর মায়াবী সুরেলা কন্ঠে, তিনি কুরআনে পাক থেকে তেলাওয়াত করছেন। আশে পাশে অনেকে তার সুরে সুর মেলাচ্ছেন। কিছু অদ্ভুত সুন্দর দোআ দুরুদ পড়লেন। তারপর ধীরে ধীরে তার বক্তব্য শুরু করলেন। অসম্ভব সুন্দর গোছানো তার বক্তৃতা, অসাধারন ধারাবাহিকতা, শব্দের গাঁথুনি, বাক্যের যুতসই বন্ধন, কথার পিঠে কথা, অদ্ভুত বাগ্মীতা, জোড়ালো আওয়াজ। যেনো বিটোভেন কিংবা মোজার্টের সুরে কথা বলছেন। কখনো উঁচু কখনো নিচু। কখনো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উত্তাল আবার কখনো ঝরনার মতো শীতল ঠান্ডা। এ যেনো সুরের কারুকার্য। কোন মানুষের বক্তৃতার গলা এতো বৈচিত্রময় হতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা। তিনি যখন কথা বলেন সারা মাঠে পিন পতন নিস্তব্দতা, তিনি যখন কাঁদেন সারা মাঠে ফোঁপানোর শব্দ, তিনি যখন রাগান্বিত হন সারা মাঠ উত্তাল হয় ফেনিল সমুদ্র ঢেউয়ের মতো। আমি অসম্ভব অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিয়ে দেখছি একজন মানুষের অদ্ভুত ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ক্ষমতা। তন্ময় হয়ে হাজার হাজার মানুষ শুনছে তার কথা। সেই মানুষটি নিজের কথা বলছে না। কোন রাজনীতির কথা বলছে না। ক্ষমতার কথা বলছে না। শুধু কুরআনের কথা বলছে। কুরআন থেকে একটু একটু শুনিয়ে তার ব্যাখ্যা প্রদানের চেস্টা করছে আকর্ষনীয় করে। মাঝে মাঝে এই মহা গ্রন্থটিকে হাতে নিয়ে উঁচু করে তুলে ধরছে আর বলছে "ইন্নাদ্দিনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম।"

মেজমারাইজিং

তখন যৌতুকের কুপ্রভাবে সারাদেশ আক্রান্ত, নিউজ পেপারে ছাপা হতো যৌতুকের বলি রাহিমা, জড়িনা, সুরমাদের কথা। যৌতুকের অভিশাপে কত শত মানুষের সংসারে আগুন লেগেছে তা সচেতন মহলের সবাই জানেন। মাহফিলের বিশেষ লোকটি উপস্থিত সকল তরুন যুবকদের উদ্দেশ্যে হুংকার ছাড়লেন। জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি বিয়ের সময় যৌতুক নেবে? বললেন তোমাদের কি লজ্জা লাগবেনা শশুরবাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের খাটে ঘুমাতে? কারো করুনায় পাওয়া মোটরসাইকেলে চড়তে কি তোমাদের পুরুষত্বে আঘাত লাগবে না? তুমি কি ফকির মিসকিন নাকি?? আর তোমার যদি সামর্থ্য না থাকে যে খাট-পালংক কিনে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করার তাহলে বিয়ে করতে চাও কোন সাহসে? বিয়ে করবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, অন্যের করুনার উপর ভরসা করে বিয়ে করা কাপুরুষের লক্ষন। মেজমারাইসিং। আমিতো সম্মোহিত হয়ে যাচ্ছি। কি সুন্দর কথা। আসলেইতো আমি কেনো আমার শশুরবাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের আসবাব পত্র ব্যবহার করবো। আমি কি মিসকিন নাকি? তারপর তিনি বললেন আজকের এই মাহফিলে যেসব অবিবাহিত তরুন যুবকেরা উপস্থিত তোমরা এখনি এ মুহুর্তে হাত তুলে আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে ওয়াদা করো যে তোমরা যৌতুক নেবে না। হাজার হাজার তরুন সেদিন হাত উঠালো। লোকটা সবাইকে ওয়াদা করালেন। সেদিনের হাজার তরুন তার স্বাগত কন্ঠের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ঘোষনা করেছিলো " আমি আল্লাহকে স্বাক্ষী রেখে ওয়াদা করছি যে.." অদ্ভুত যাদুকরী শক্তির অধীকারী সেই লোকটার নাম মাওলানা দেলওয়ার হোসেইন সাঈদী।

আমিও সম্মোহিত হয়েছিলাম

আমিও সেদিন হাত তুলে হাজারো তরুনদের সাথে ওয়াদা করেছিলাম। মোহিত আমি বাকপটু লোকটার কথায় মুগ্ধ হয়ে সেদিন যে ওয়াদা করেছিলাম তা আমার জিবনের একটি অনেক বড় সিদ্ধান্ত ছিলো। যেহেতু ওয়াদা আমি করেছি সেহেতু একজন মুসলমান হিসেবে আমাকে সেই ওয়াদা রাখতেই হবে। আমি আমার ওয়াদা রেখেছি। এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি একজন অসাধারন জিবন সংগী পেয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাঈদী সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ এই কারনে যে যৌতুকের মতো একটা অভিশপ্ত বিষয়ের জ্ঞান আমি সর্বপ্রথম পেয়েছিলাম তার কাছ থেকে। যাইহোক পরবর্তী সময়ে তিনি জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। মাহফিলে নাকি রাজনৈতিক কথাবার্থা বা জামায়তের পক্ষে যায় এমনসব কথা বার্তা ইংগিতে বলার চেস্টা করেছেন।

তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে

কিন্তু আজ যখন শুনছি আপিল বিভাগেও তাঁকে ফাঁসীর রায় দেয়া হবে। তখন মনটা অজানা কারনে ব্যাথিত হয়। কারন আমি বিশ্বাস করি সাঈদি পাকি বাহিনীর মতো, রক্ষীবাহিনির মতো, গোপালী পুলিশের মতো, গুম বাহিনী র‌্যাবের মতো, ভারতীয় খুনী গোয়েন্দা "র" এর মতো, এমনকি আমাদের লেডি হিটলার হাসিনার মতো কাউকে হত্যা করেননি। মানুষের ব্যাক্তিগত দোষ ত্রুটি দূর্বলতা থাকতে পারে। রাজনীতিতে অনেক মত, পথ ও আদর্শ পার্থক্য থাকতে পারে। কাউকে আমি পছন্দ করতে পারি আবার অপছন্দও করতে পারি। তাই বলে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দি হওয়ার কারনে কাউকে অন্যায়ভাবে ফাঁসীি দিতে পারিনা। অন্যায়ভাবে হত্যা করতে পারিনা। কারন অন্যায় মেনে নেয়া জাতির আকাশে মনুষত্বের সূর্য উঠেনা, মেঘের ঘন কালো পঙ্কিল রংয়ে ঢেকে থাকে মানবিকতার আবরন।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৫
২৯টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×