somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপার সম্মান জুতা মারলেও বাড়ে (ছোট গল্প)

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।।

মিজারুল কায়েস অজানা এক কারনে খুব ঘামছেন। যেই সেই ঘাম নয় একদম গোসল জাতীয় ঘামে তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে ড্রাইভার জয়কে বললেন, এসিটা বাড়িয়ে দাও।

কিন্তু এসি বাড়িয়ে দিলেও কাজ হবে কিনা সন্দেহ আছে। কারন উনার মনে হচ্ছে উনি ইবলিশ শয়তানের কাছে ইন্টারভিউ দিতে বসেছেন। অথচ তিনি বসে আছেন একজন মহিলার পাশের সিটে। মহিলাটির মুখে ক্রুর হাসি। এই ক্রুর হাসিটা দেখলে শয়তানও আঁতকে উঠে বলে মিজারুল কায়েসের ধারনা। মিজারুল কায়েস পকেট থেকে সাদা কাফনের মতো একটুকরো রুমাল বের করে ঘাম মুছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলছেন শয়তান হোক আর ইবলিশ হোক আমার কার্য উদ্ধারের জন্য আমি তাকে পুজা করতে রাজি।

- আ্যাই মিজারেবল। সইরা বস। বাঁজখাই কন্ঠে মহিলা বললেন।
- আপা আমি মিজারেবল না মিজারুল। আপনার ইচ্ছা হলে কায়েস ডাকতে পারেন।
- না আমি মিজারেবলই ডাকুম। তোর যে হাতির মতো শরীর তা দেইখা তোরে খুব মিজারেবল মনে হয়। যাহ, সইরা বস।
মিজারুল একটু সরার চেস্টা করেন। কিন্তু প্রায় দেড়শ কেজির শরীর নিয়ে সরতে পারেন না।
- ঘুষ খাইতে খাইতে শরীর বানাইছোস হাতির মতো। মুচকি হাসেন আপা।
- আপা লন্ডনে ঘুষের বাজার ভালোনা। তাছাড়া সবইতো আপনার কৃপা।

মিজারুল ভাবেন এক্ষুনি তৈল মর্দন করতে করতে পররাস্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কথাটা বলে ফেলতে হবে। তখনি-

- আ্যাই মিজারেবল। বাইরে তাকাইয়া দেখ লোকজন আমারে ফুল ছিটাচ্ছে। দাঁড়া কালো গ্লাসের বাইরে মুখটা একটু বের করে হাত নাড়াই।

পররাস্ট্র মন্ত্রনালয় কিভাবে চালাবেন মিজারুল সাহেবের সে স্বপ্ন ভেঙে গেলো। বাইরে তাকিয়ে দেখলেন ভিন্ন দৃশ্য। হাতির মতো শরীরটা নিয়ে আপার হাতটা ধরলেন।
- করেন কি করেন কি? আপনি হাত, পা, মুখ কিছুই বাইরে বের করবেন না। সিকিউরিটি রিজন আছে।
- মিজারেবল মানুষজন হর্ষ ধ্বনি করছে। আর আমি জননেত্রী হয়ে একটু হাত বের করে দেখাবো না! ক্যামন হয়ে গেলো না বিষয়টা??

মিজারুল সাহেব বাইরে তাকিয়ে দেখেন শত শত মানুষ জুতা ও ডিম নিয়ে তাদের গাড়ীর দিকে ছুড়ে মারছে। আর গনহত্যাকারী, আলেম হত্যাকারী, কিলার, মার্ডারার, লেডী হিটলার বলে শ্লোগান দিচ্ছে।

- আ্যা মিজারেবল। লন্ডনতো বদলে গেছেরে। লোকজন গাঁদাফুল নিয়ে আমার গাড়ীতে ছুড়ে দিচ্ছে। লন্ডনের লোকজন খুব ভালো হয়ে গেছেরে।

২।।

এ মুহুর্তে আপা খুব হাসি খুশি। আপা খুব আবেগে উদ্বেলিত একটা ভাব নিয়ে কথা বলছেন। মিজারুল ভাবছেন এইটো মোক্ষম সুযোগ। সত্যটা আপাকে বলার দরকার নাই। মেজাজ খোশ থাকতে থাকতে মনের ইচ্ছাটা বলে ফেলি।

- আপা, ইনুর মতো একটা রাম ছাগলরে মন্ত্রী বানালেন, হাছান মাহমুদের মতো একটা বদ্ধ উম্মাদরে মন্ত্রী বানালেন। মহসীন আলীর মতো একটা পাগলরে মন্ত্রী বানালেন এছাড়া আরো কত হাম্বা-ছাগলরেও মন্ত্রী বানালেন। আমারে যদি একবার বানাতেন। পররাস্ট্রমন্ত্রী হতে আমার খুব শখ।

- মিজারেবল কায়েস!!! বড় বড় রক্তিম চোখে আপা তাকান মিজারুলের দিকে। শোন, আমি বান্দর, পাগল, হাম্বা, ছাগল-রামছাগল অনেকরেই মন্ত্রী বানাইছি সত্য। কিন্তু হাতিকে মন্ত্রী বানাবো না।

মিজারুল কায়েসের মুখটা ফুটো হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেলো। আশাহত হয়ে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। ইনুর মতো ছাগলের কাছে তার যোগ্যতা, দক্ষতা, শিক্ষা মুহুর্তেই পরাজিত হয়ে গেলো। মিজারুল সাহেবের চোখের কোন অশ্রু জমছে। চোখের পানি ঘামের সাথে মিশে যাচ্ছে। পকেট থেকে সাদা কাফনের মতো রুমাল বের করে ঘাম মোছার অভিনয় করে অশ্রু মুছেন তিনি।

৩।।

লন্ডনের ওয়েস্টএন্ডে বিলাস বহুল পাঁচ তারা হোটেলের রিসেপশনের বাইরে আপার গাড়ী থামলো। মিজারুল সাহেব নিজে গাড়ী থেকে নেমে আপার জন্য দরজা খুলে দিলেন। আপা গাড়ী থেকে বের হয়ে হাঁটছেন। মিজারুল সাহেব তার নাদুস নুদুস হাতির শরীর নিয়ে পাশপাশি হাঁটতে হাঁটতে আপার কানে কানে বললে,

- আপা আপনি গাড়িতে বসে যে বলছিলেন, লোকজন আপনাকে ফুল ছুড়ছে। আসলে তা ফুল ছিলোনা। লোকজন আপনার গাড়ীতে জুতা ও ডিম ছুঁড়ে মেরেছে।

আপার মুখটা ফুটো হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেলো এবার। কিন্তু মুহুর্তেই স্বভাবসুলভ অভিনয় দিয়ে সামলে নিয়ে বললেন। মিজারেবল তুই কি মনে করিস আমি এসব বুঝিনি। ওরা যে আমাকে জুতা ছুড়ে মেরেছে, তা আমি ভালো করেই বুঝেছি। কিন্তু একটা শুনে রাখ,

ওরা জুতা মেরেছে তা ঠিক কিন্তু অপমান করতে পারেনি।


[ ডিসক্লেইমার : এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোন চরিত্রের মিল নেই। যদি কারো চরিত্রের সাথে মিলে যায় তা কাকতালীয় মাত্র। ]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:১১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×