বাবা বেঁচে নেই একথাটি এখোনো যেন ভাবতে পারি না। ভাবা আর না ভাবার দোলাচলে কথাটি সত্য যে বাবাকে আর কখনোই পৃথিবীতে দেখতে পাব না। গত বছরের ৫ মে বাবা বরিশাল এর গৌরনদীর চন্দ্রহারের নিজ বাড়িতে মারা যান। পৃথিবীর সব বাবার মত আমার বাবাও ছিলেন আমার কাছে আপন। মারা যাওয়ার ঠিক এক মাস পূর্বে বাড়িতে গিয়ে বাবার সাথে এক সঙ্গে খেয়েছি। আমার এক অসুস্থ কাকাকে রাতে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি সামনে হাঁটছি আর বাবা পেছনে। বাবার হাতে চার্জার লাইট। বাবার সাথে বাড়ি, জমি, গাছপালা, পুকুরসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছি। কাকাকে দেখে ফেরার পথে আমাদের বাড়ির আঙিনায় আসার পর কথা প্রসঙ্গে বাবা বললেন- ''তোরা এখন গুছিয়ে নে। আমি আর ক'দিনই আর বাঁচবো?'' দুদিন পর সিলেট চলে আসি। কে জানত ওই দেখাই হবে বাবার সাথে আমার শেষ দেখা। সিলেট চলে আসার পর ব্যস্ততা বাড়ল। বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদ প্রাপ্তির জন্য মন্ত্রণালয় এ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ আমিই রাখতাম। বাবার সাথে ফোনে কথা হলেই বাবা জিজ্ঞেস করতেন--``রিয়াজ সনদ এর বিষয়ে নতুন কোনো খবর আছে?'' আমি বাবাকে আশ্বস্ত করতাম সনদ খুব শীঘ্রই পেয়ে যাব। বাবা মারা যাবার কয়েক মাস পরই সনদ হাতে পেলাম। কিন্তু বাবার দেখে যেতে না পারার কষ্টটা আমার বুকের ভেতর চাপা থাকল। মনের ভেতর জমতে থাকে কান্নার পাহাড়। সনদ পাবার পেছনে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি তাদেরকে বাবার পক্ষ থেকে আমি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালেয়র সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার সাংসদ তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, জাতীয় সংসদ এর বর্তমান চিফহুহইপ আ স ম ফিরোজ, সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন মিয়া, জি এম বাবর আলী, হাসান সোহেলসহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকার আরও অনেক সাংবাদিক এর নিকট। প্রতিটি দিনই নামাজ শেষে মহান প্রভুর দরবারে বলি-- রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি ছাগিরা।