somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শরীর প্রবাসে হৃদয় দেশে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শরীর প্রবাসে হৃদয় দেশে।

প্রবাসে আসিযাছি আজ হইতে চব্বিশ বছর আগে জাপানে। টোকিওতে আসিয়া জৌলুষ চাকচিক্য দেখিয়া মোহিত হইয়া পড়িলাম। মাঝে মাঝে মনে হইতো ঘোরের মধ্যে পড়িয়া আছি নাতো! সম্বিত ফিরিয়া পাইয়া দেখিতাম না সত্যিই প্রবাসে আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান কর্মকান্ডে নিজের পরিচিতি দিতে হইতো, অবাক বিস্বয়ে হতবাক হইয়া আবিষ্কার করিলাম জাপানিদের আমার দেশের প্রতি তাচ্ছিল্যের স্বরূপ। বাংলাদেশ কোথায় তাহারা তাহা জানেনা বা বাংলাদেশের নামই আদৌ শুনেনি। আমার কাছে মনে হইতো আসলেই কি তাহারা জানেনা, না ইচ্ছে করিয়াই না জানার ভান করিত! যাই হউক আমি খেয়াল করিলাম তাহাতে আমার বুকে কাঁটার মত কি বিধিতে লাগিলো। একদিন টিভিতে দেখিলাম বাংলাদেশকে নিয়া প্রামাণ্য চিত্র দেখাইতেছে। মুহুর্তে শরীরে বিদ্যুত খেলিয়া গ্যালো। সমস্ত কিছু ফেলিয়া দেশের নোংরা বস্তি, পুষ্টিহীন শিশু, অজ্ঞানতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, ভঙ্গুর অবকাঠামো গোগ্রাসে গিলিলাম, দেখিলাম বলিলে ভুল বলা হইবে। খেয়াল করিলাম চোখের কোন ভিজিয়া গিযাছে। ঐদিনইবুঝিলাম ইহার নামই হইতেছে দেশপ্রেম। দেশে আমার জন্ম হইয়াছে মাছের আশটে গন্ধে, ধুলো কাদা মাটিতে লেপটিয়া থাকিয়া। দেশে থাকিতে তাহার(জন্মভূমির) দিকে কোনদিন ভালো করিয়া ফিরিয়াও তাকাইনাই, আর আজ চাকচিক্যময় প্রবাসে থাকিয়াও তাহার জন্য আমার চোখে অঝোর ধারায় পানি চলিয়া আসিলো। তখন হইতেই শুরু, সময় সুযোগ অবকাশ হইলেই নিজের দেশকে নিয়া ভাবনায় মাতিয়া উঠি। হউকনা কল্পনায়, দেখি আমার গরবিনী জন্মভূমি উন্নত দেশের চেয়েও পিছাইয়া নয়।

২০০৪ সালে জুন মাসে কানাডায় চলিয়া আসি।আসিবার পথে হংকং লন্ডনের ট্রানজিটে ইমিগ্রেসনের লোক মনে হইলো দুরবীন দিয়া আমার সবুজ পাসপোর্ট পরখ করিলো, আর কাহারো নয়। লজ্জায় অপমানে মুহ্যমান হইয়া পড়িলাম। কানাডায় আসিয়া দেশের প্রতি আমার প্রেম পরিপূর্ণ আবেগে ফুলিয়া ফাঁপিযা উঠিলো। অবসর পাইলেই দেশকে নিয়া স্বপ্ন বুনি, একটু ফুসরত পাইলেই দেশের মায়ায়, প্রেমে বুদ হইয়া মাতৃভূমিকে কিভাবে দেখিতে চাই তাহার স্বপ্ন বুনিযা যাই। বুদ হইয়া স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের কোনো এক মহাথির বীর তাহার নেতৃত্বের গুনে দেশকে উন্নতির চরম শিখরে লইয়া গিয়াছে। দেড় দুই দশক আগে হইতেও আমাদের দেশ প্রভূত উন্নতি লাভ করিয়াছে উহাতে কোন সন্দেহ নাই, তবে হতাশাজনক হইলো সেই উন্নতির সুষম বন্টন হয় নাই। চাটুকারের দল, চোরের দল, ঘুষখোরের দল, চোরাকারবারির দল, চোর উজির নাজিরের দল উন্নতির সুফল লুটিয়া নিয়াছে। ফলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি জীবন যাত্রার মানদন্ডে সেই তলানিতেই পড়িয়া রহিয়াছে। আমাদের একজন শিরদাঁড়া বিশিষ্ট মেরুদন্ড শক্ত কাঠামোর নেতা প্রয়োজন। অজ্ঞ, বাগাড়ম্বর বিশিষ্ট শীর্ষদের ক্রমান্বয়তা থাকিলে দেশটির সার্বজনীন উন্নতি সুদূর পরাহত। তবে দুঃখ:জনক হইলো আমাদের জনগোষ্ঠী এখনো তাহার জন্য প্রস্তুত হইয়া উঠি নাই। নয়তো একজন বিজ্ঞ, সুশীল, উচ্চশিক্ষিত, জ্ঞানীজন প্রচলিত ধারার বাহিরে গিয়া কিছু করিতে চাহিলে পর্বতের মূষিক প্রসব সমতুল্য রূপান্তরিত হইবে।যাহার লক্ষণ আমাদের মাতৃভূমিতে ইতিমধ্যে শুরু হইয়াছে। দেশের সকল উচ্চ শিক্ষিতের সমস্যা হইলো তাহারা যে পর্যায়ের জ্ঞান রাখেন, জনগণকেই মনে করেন সেই পর্যায়ের, কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সকলেই এই পর্যন্ত্য চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়াছে। তাই প্রচলিত ধারার মধ্যেই থাকিয়াই অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়া জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, সুশাসনের নিশ্চয়তা, কঠোর ভাবে দুর্নীতি দমন এই সকলের নিশ্চয়তা বিধান করিতে হইবে। তাহা হইলেই খুব দ্রুত আমাদের মাতৃভূমির সার্বজনীন উন্নতি সাধিত হইবে, যাহার সুফল সুষম ভাবে দেশের আপামর জনসাধারণ ভোগ করিতে পারিবে। সেই দিন কি সুদূর পরাহত!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৬:৪৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×