somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিঙ্গুলারিটি

০১ লা এপ্রিল, ২০০৭ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা লেখায় আগে মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলাম, বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বানী, অথবা আশার কথা ছিল, কিন্তু কিসের ভিত্তিতে লিখলাম সেটা পরিষ্কার ছিল না। আসলে পুরোটা সময় নিয়ে লেখা দরকার, ভালভাবে লেখার আগে আশে পাশের আরো কয়েকটা ব্যপার আলোচনা না করলে অসম্পুর্ন থেকে যাবে। আপাত দৃষ্টিতে সম্পর্কহীন কয়েকটা বিষয়ের মধ্যে সংযোগটা দেখানো দরকার, তাহলে হয়তো পরবর্তি কয়েক দশকে আমাদের সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে যেগুলো তুলে ধরব সেটা যুক্তিসঙ্গত মনে হবে।

সায়েন্সের বেশ কিছু আলাদা ধারা অনেক সময় অভিন্ন লক্ষে গিয়ে পৌছায়, যদিও প্রাথমিক ঊদ্দ্যেশ্য ভিন্ন ছিল। ঠিক আজকে 2007 এ যদি বিশ্নেষন করি তাহলে জেনেটিক্স, ন্যানো এঞ্জিনিয়ারিং আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে যথেষ্ট আলাদা মনে হবে। সত্যিকার অর্থে খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক্স বিষয়টি এঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অধীনে। আবার ন্যানোটেকনোলজি যেমন সচরাচর সরাসরি কম্পিউটার সায়েন্সের বিষয় হিসেবে ধরা হয় না। রোবোটিক্স সে তুলনায় কম্পিউটার সায়েন্সের পুরোনো বিষয়গুলোর একটা, একসময় বিশেষ করে 70 এর দশকে যতটা প্রমিজিং ফিল্ড ছিল হয়তো এখন পাবলিক পারসেপশনে এর জৌলুশ কিছুটা কমে গিয়েছে বলেই মনে হয়। পাবলিকের কথা যখন চলেই আসল আরও কিছু কথা না বললেই নয়। যেমন স্পেস (মহাশুন্য) এক্সপ্লোরেশন, ষাট আর সত্তুর দশকে আমেরিকা, রাশিয়ার মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা যখন তুঙ্গে তখন সাধারন ধারনা ছিল কয়েক দশকেই মানুষ গ্রহে গ্রহে বসতি স্থাপন করবে। আজকে 30 বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখনও মঙ্গল গ্রহেই যাওয়া হয়নি। আবার 70 দশকে ইনফরমেশন টেকনোলজি যে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুত হচ্ছিল পরের 20 বছর গোটা পৃথিবী দখলে নেয়ার জন্য সেটা কিন্তু পরিস্কার ছিল না।

আবার যেমন ইন্টারনেট, 30 বছরের বেশী সময় ধরেই আছে, মুলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, কিন্তু ইন্টারনেট যে এমন বিপ্লব ঘটাবে গোটা দুনিয়া জুড়ে বেশীরভাগের ধারনায় ছিল না। 70 বা 80র দশকে তৈরী তেমন কোন সায়েন্স ফিকশনেই ইন্টারনেটের উল্লেখ নেই। প্রথমে বিপ্লবটা ছিল গবেষকদের জন্য, তারপর 90 এর দশকে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোর জন্য আর এখন ইন্টারনেট স্মরনকালের সবচেয়ে বড় সামাজিক বিপ্লব ঘটাচ্ছে। তবে দুএকজন লোক আছেন যারা তাদের ভবিষ্যদ্বানী মিলাতে পেরেছেন। অবশ্য এরা কোন ওরাকল নন (ম্যাট্রিক্সে ছিল), যেমন রে কুর্যওয়াইল। অবশ্য সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য সবসময় ফুলটাইম গবেষক হওয়ার দরকার নেই। রে'র স্পেকুলেশন পুরোটা হয়তো মিলবে না, প্রয়োজনও নেই, কিন্তু যেটা পরিস্কার তা হচ্ছে সিঙ্গুলারিটি আসছে, আমাদের বেশীর ভাগের জীবদ্দশাতেই ঘটবে, হয়তো 2030 এ, হয়তো এর আগেই, নাহলে এর অল্প পরে।

90এর দশকে ঠিক যেমন বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য হঠাত্ করেই কয়েকদশকের পুরোনো ইন্টারনেট দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল, সিঙ্গুলারিটিও ঠিক এরকম সায়েন্সের আলাদা কয়েকটা শাখার অগ্রগতির ওপর নিভর্র করছে। তার মধ্যে প্রধান তিনটি হচ্ছে Genetics, Nanotechnology, আর Robotics (GNR)। আমার ধারনা শেষমেশ GNR এর R মুলধারায় পরিনত হবে।

এখন বলা যাক সিঙ্গুলারিটি আসলে কি। সিঙ্গুলারিটি আসলে আসলে টেকনোলজির এমন একটা পর্যায় যখন মানুষের তৈরী যন্ত্রের বুদ্ধি মানুষের চেয়ে বেশী হবে। একটু অস্বাভাবিক শোনায় বটে, তবে ভয়ের কিছু নেই। অবশ্য যন্ত্র এর মধ্যেই অনেক বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আমাদের চেয়ে ভালোভাবে করে। যেকোন ক্যালকুলেটর আমাদের যে কারও চেয়ে নির্ভুলভাবে এবং দ্রুতগতিতে হিসাব করতে পারে। একটা সময় ছিল দাবার মতো বুদ্ধির খেলা শুধু মানুষ করতে পারে বলে কল্পনা করা হতো। IBM এই উপলক্ষে একটা বড় প্রজেক্ট হাতে নেয় (!@!17081), 1997 এ তখনকার চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভ ডীপ ব্লুর কাছে হেরে যান। পরিস্থিতি এখন এমন যে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে দাবাতে কম্পিউটারকে (ডীপ ব্লু) হারাতে পারে। কাসপারভ ম্যাচের পরে বলেছিলেন যে মেশিন এমন সব ক্রিয়েটিভ চাল দিচ্ছিল যে কাসপারভ বুঝতে পারছিলেন না। এর পর অবশ্য আরও 10 বছর পার হয়েছে, মুরের সুত্র অনুযায়ী মেশিন জ্যামিতিক গতিতে তার বুদ্ধি বাড়িয়েছে। মেশিন নিয়মিত এমন সব সার্কিট ডিজাইন করে যা মানুষের পক্ষে ঊদ্ভাবন করা দুঃসাধ্য। তবে সব ব্যাপারে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে আরও সময় লাগবে, হয়তো আরো 25 বছর, ওই সময়টাই আমাদের সভ্যতা সিঙ্গুলারিটিতে পৌছবে। মানুষের 10 হাজার বছরের সভ্যতার সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে সিঙ্গুলারিটি। মানব সভ্যতার একটা বস্তুগত পরিবর্তন হবে, হয়তো পরবর্তি অংশ বায়োলজিকাল মানুষের চেয়ে যন্ত্রের সভ্যতা হিসেবে অভাবনীয় গতিতে সামনে যেতে থাকবে। তবে পরিবর্তনটা হঠাত করে হবে না, আস্তে আস্তে হতে হতে আমাদের গা সহা হয়ে যাবে, যে যেদিন হবে তার আগেই বুঝে যাব যে এটা অবধারিত ছিল।

পরের লেখা গুলোয় আমি বিস্তৃত করব সিঙ্গুলারিটিতে কিভাবে পৌছানো যায়, আমাদের কি লাভ। তার আগ পর্যন্ত অবশ্য বেচে থাকা খুবই জরুরী, 25 বছর এমন দুরে নয়, সুতরাং জীবনের যত্ন নেয়া দরকার। আর প্রস্তুতিও নেয়া দরকার। হিমু আর আমি একটা প্রজেক্ট হাতে নিলাম এবার, মেশিনকে দিয়ে বাংলা ছড়া লেখাব, 4/5 লাইনের, সৃজনশীল ছড়া, পুরোপুরি মেশিনের লেখা। অবশ্য এখন মনে হচ্ছে 4/5 লাইন বের করতে আমার ডুয়াল কোর আড়াই গিগা হাজের্র মেশিনের কয়েকদিন লাগবে। তাতে অসুবিধা নেই, আমার হাতে সময় আছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য: টিপ

লিখেছেন গিয়াস উদ্দিন লিটন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৫




ক্লাস থ্রীয়ে পড়ার সময় জীবনের প্রথম ক্লাস টু'এর এক রমনিকে টিপ দিয়েছিলাম। সলজ্জ হেসে সেই রমনি আমার টিপ গ্রহণ করলেও পরে তার সখীগণের প্ররোচনায় টিপ দেওয়ার কথা হেড স্যারকে জানিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বৈশাখে ইলিশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৪০



এবার বেশ আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে । বৈশাখ কে সামনে রেখে ইলিশের কথা মনে রাখিনি । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছে যে ইলিশকে কিঞ্চিত হলেও ভুলতে পেরেছি । ইলিশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×