somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালাঃ ফেয়ারব্যাংকসে সোনার খনি (৫)

০৫ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের মোটেলে প্রথম যে রুম দিয়েছিল তার অবস্থা দেখলাম খুবই খারাপ৷ রুম ধরে প্রস্রাবের গন্ধ৷ কিভাবে হলো কে জানে৷ সিগারেটের গন্ধ তো আছেই৷ গাড়ি থেকে ব্যাগ নামাতে গিয়ে দেখলাম পাশের রুমে পুলিশ দরজা লকড করে রেখেছে, হয়তো কোন গন্ডগোল হয়েছিল আগে৷ মিনিট বিশেক থাকার পর বুঝলাম এখানে রাত কাটানো সম্ভব নয়৷ খান্ডারনি মোটেলওয়ালীকে ঘুম থেকে তুলে বললাম, অন্য রুম দাও ওখানে থাকতে পারব না৷ বেশ দরদাম করে আরেকটা রুম পাওয়া গেল, সামান্য ভালো৷

সকালে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম৷ এরকম আটোসাটো জার্নিতে এক ঘন্টা দেরীতে ওঠা মানে অনেক লোকসান৷ তারওপর মেয়েদের রেডী হতে অনেক সময় লাগে৷ তবে দিনটা ছিল চমত্কার, আকাশে কোন মেঘ নেই৷ আগের দুদিন এংকরেজ আর ডেনালীতে বৃষ্টি দেখতে দেখতে হয়রান লাগছিল, আবার ফেয়ারব্যংকসে একটা বড় টার্গেট রাতে অরোরা দেখা৷ মনে মনে খুব চাচ্ছিলাম রাত পর্যন্ত যেমন এরকম আকাশ থাকে৷ ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কার সাথে ওদের মিউজিয়াম ওখানে গেলাম৷ এ্যংকরেজের মিউজিয়ামটার চেয়ে আলাদা৷ কয়েক হাজার বছর আগেকার ফ্রোজেন বাইসন দেখলাম, এছাড়া ম্যামথ, জায়ান্ট স্লথের ফসিল ছিল৷ প্রচুর জাপানি ট্যুরিস্ট মিউজিয়ামে, বয়স্ক, একজন বললো মাত্র পাচশ ডলারে নাকি টোকিও থেকে আলাস্কা এসে ঘুরে যাওয়া যায়৷ সত্যি না মিথ্যা বুঝলাম না৷

হুড়োহুড়ি করে মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে রওনা দিলাম ফেয়ারব্যাংকসের গোল্ড মাইনের উদ্দ্যেশ্যে৷ এক সময় লোকজন আলাস্কা আসতই সোনার খনির উদ্দ্যেশ্যে৷ উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দির শুরুতে গোল্ড রাশের সময় অসংখ্য গোল্ড মাইন তৈরী হয়েছে এখানে৷ তবে গোল্ড মাইনিং এখন আর কোন লাভ জনক ব্যবসা নয়, বেশীর ভাগ গোল্ড মাইনই লাটে উঠেছে৷ কয়েকটা আছে ট্যুরিস্টদের জন্য৷ ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে বুঝলাম মাইনিং এর খরচ এখানে এত বেশী এর চেয়ে রিসাইকেল করে বা অন্যান্য উত্স থেকে সস্তায় সোনা জোগাড় করা যায়৷

বিশ ডলার টিকেট কেটে ঢুকলাম ভিতরে৷ পুরোনো ভাঙ্গা গোল্ডমাইন৷ পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা পার্ট টাইম গাইডের কাজ করে৷ একটা ট্যুর দিল কিভাবে মাটি থেকে সোনা আলাদা করা হয়৷ সোনা দেখলাম খুব ছোট ছোট দানা আকারে থাকে৷ কাদা মাটি আর পাথরে থেকে বেশ কষ্ট করে আলাদা করতে হয়৷ ট্যুর শেষ হলে আমাদেরকে এক ব্যাগ করে খনি থেকে তোলা বালি-পাথর দিলো, সোনা সংগ্রহের জন্য৷ গাইড মেয়েটা প্রথমে একটা ডেমো দিলো কিভাবে সোনা আলাদা করতে হবে৷ অনেকটা আমাদের দেশে গ্রামের দিকে চাল থেকে যেভাবে পাথর আলাদা করে৷ বেশ কৌশলে পানিতে আস্তে আস্তে ধুয়ে কাদা থেকে সোনা বেছে ফেলতে হয় (ছবি)৷ গোটা বিশেক দানা পেলাম আমি, মোটামুটি ৪ ডলার দামের৷

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল সোনার খনি থেকে বের হতে হতে৷ একটা প্ল্যান ছিল Manley Hot Springs দেখতে যাবো৷ এখন মনে হচ্ছে স্রেফ ডাল্টন হাইওয়ের মুখ পর্যন্ত যেতে পারলেই হয়৷ ডাল্টন হাইওয়ে ফেয়ারব্যাংকস থেকে প্রাডোহ বে তে চলে গেছে৷ ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা৷ এলিয়ট হাইওয়ে হয়ে জাংশন পর্যন্ত এর মধ্যে ১৩০ কিলোমিটারের মতো৷ আমাদের টার্গেট সন্ধ্যার আগে এই ১৩০ কিলোমিটার গিয়ে আবার ফিরে আসা (টোটাল ২৬০ কিমি)৷ একটানা চালালে ৩ ঘন্টা লাগার কথা৷ কিন্তু রাস্তায় প্রচুর ট্রাক৷ প্রাডো বে তে আলাস্কার তেলের খনি, আর্কটিক অয়েল ফিল্ড৷ পুরো রাস্তা জুড়ে রাস্তার সমান্তরালে ট্রান্স আলাস্কা অয়েল পাইপ লাইন৷ গল্পে গল্পে রওনা হয়ে গেলাম৷

এখানকার ল্যান্ডস্কেপ ডেনালীর চেয়ে আলাদা৷ পাহাড় একটু কম, রঙও কম৷ ফার গাছের সারি অনেকটা ক্যানেডিয়ান রকির মতো৷ Fall এর জন্য হলদেটে ভাব এসেছে৷ কোথাও কোন লোকালয়ের চিহ্ন নেই৷ মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু তৈগা বনভুমি, ভীষন নির্জন৷ জাংশনে পৌছলাম যখন, তখনও সুর্যের আলো আছে৷ ডাল্টন হাইওয়ের এর পরের অংশ আনপেভড, একদম মাটির রাস্তা না, নুড়ি পাথর ঢেলে রাখা৷ রেন্টাল কারের মালিক আগেই বলে রেখেছিল ডাল্টনের এই অংশে গাড়ি নেয়া যাবে না৷ রাস্তা দেখে বুঝলাম কথা ভুল বলেনি ৬৫০ কিলোমিটার যদি এভাবে চালাতে হয় তাহলে গাড়ির যে কয় জোড়া এক্সট্রা টায়ার লাগবে কে জানে৷

টুকটাক কয়েকটা ছবি তুললাম৷ হট স্প্রিং এ আর যাবো না৷ গাড়িতে খুব পরচর্চা হচ্ছিল৷ প্রাডো বে কিংবা আর্কটিক সার্কেলের চেয়ে লোকের দেখি গল্পেই উত্সাহ বেশী৷ তা ঠিক আছে, সহযাত্রীদের আপবিট থাকা খুব জরুরী৷ সূর্য ডুবতে ডুবতে ফেয়ারব্যংকসের কিনারায় ফিরে এলাম৷ একটা চায়নিজ বাফে তে পেটপুরে খেয়ে রওনা দিলাম আরেকটা উষ্ঞ প্রস্রবনের দিকে Chena Hot Springs৷ এটা তুলনামুলক ভাবে কাছে, ঘন্টা দেড়েক লাগা উচিত৷ রাতে যাচ্ছি কারন ওখানে একটা হোটেল আছে, আর অরোরা দেখার টার্গেট তো আছেই৷ সন্ধ্যায় (রাত দশটায়) রওনা দিয়ে বারোটার দিকে পৌছলাম চেনা-তে৷


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৭ রাত ১১:০৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×