somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দামানে ভিনাস (Venus)

১৫ ই মে, ২০০৭ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার যূথচারীর আর্কিওলজি নিয়ে পোস্টগুলো পড়ছিলাম সকালে৷ আমি নিজেও অনেক সময় ভেবেছি আমাদের দেশে প্রস্তরযুগের আর্কিওলজিকাল ফাইন্ডিংস তুলনামুলক কম কেন? কম বলতে সেরকম স্পেক্টাকুলার আবিস্কার চোখে পড়ে না৷ হয়তো যথেষ্ট খোজা হয় নি? না থাকাটা অস্বাভাবিক মনে হয়৷ কারন ৭০/৮০ হাজার বছর আগে মানুষ আফ্রিকা থেকে বের হয়ে উপকুল বরাবর ছড়িয়ে পড়েছে৷ একসময় অস্ট্রেলিয়াতে পৌছেছে, অন্তত ৬০/৭০ হাজার বছর আগে৷ ঘটনা হচ্ছে সোমালিয়া-ইয়েমেন থেকে বের হয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে অবশ্যই আজকের যুগের বাংলাদেশ হয়ে যেতে হবে৷ তাহলে মানুষের এই আদিতম মাইগ্রেশনের কিছু প্রমান তো থাকা উচিত আমাদের দেশের কোথাও না কোথাও৷ একটা ব্যপার হতে পারে এগুলো সমুদ্রের নীচে, কারন মাত্র কয়েক হাজার বছর আগেও যখন বরফ যুগ ছিল তখন আমাদের উপকুল এখনকার চেয়ে অনেকখানি দুরে ছিল, মানে আমাদের দেশের আকারটা আরো বড় ছিল৷

এর কারন বরফ যুগে ঠান্ডার জন্য মেরুগুলোতে আইসক্যাপ তৈরী হয়েছিল৷ আইসক্যাপ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা জুড়েই ছিল৷ আর এই আইসক্যাপে প্রচুর পানি আটকে ছিল, যে কারনে সমুদ্রে পানি ছিল কম, মানে দাড়াচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অনেকখানি কম ছিল৷ সুতরাং তখনকার উপকুল আর এখনকার উপকুল আলাদা, তখনকার উপকুল বরফযুগের শেষে আস্তে আস্তে সমুদ্রের নীচে তলিয়ে গিয়েছে, সেই সাথে যেসব আর্টিফ্যাক্ট ছিল ৭০ হাজার বছর আগের মানুষের সেগুলো ডুবে গেছে বলে মনে হয়৷

এজন্য কৌতুহল হয় বাংলাদেশের সেইসব আদি অধিবাসী কারা? তারা কোথায়? তারা দেখতে কেমন ছিল৷ আসলে ৭০ হাজার বছর আগে যারা আফ্রিকা থেকে বের হয়েছিল তারা দেখতে কেমন ছিল এটা একটা বড় কৌতুহল পৃথিবী জুড়ে অনেকেরই৷ সবচেয়ে পুরোনো মানুষের বানানো মুর্তিগুলোর অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেছে৷ যেমন এখানে যে ছবি দিয়েছি (Venus figurine of Willendorf), এটা ২৫,০০০ বছর আগের৷ এরকম আরো অনেকগুলো নারীমুর্তি আছে যেগুলো ১০ হাজার বা তার চেয়ে বেশী পুরোনো৷ কেন শুধু ওই সব সময়ে মানুষ নারীমুর্তি বানিয়েছে (পুরুষের পরিবর্তে বা সংখ্যায় কম বানিয়েছে) তার পেছনে অনেকগুলো কারন অনুমান করা যায়৷

তবে আজকের বিষয় অন্য৷ এসব মুর্তির অনেকগুলোই ইউরোপে পাওয়া গেলেও সবগুলোর চেহারায় একটা মিল আছে৷ এই নারীদের চেহারা/ফিগার ঠিক আধুনিক ইউরোপয়ান নারীদের মতো নয়৷ এমনকি পৃথিবীর বর্তমান যুগের বেশীরভাগ নারীদের মতো নয়৷ কথা হচ্ছে ২৫ হাজার বছর আগে ইউরোপীয়ানরা এরকম বেঢপ চেহারার নারীমুর্তি কেন বানিয়েছিল৷ অথবা এই বিশেষ চেহারাটা ঠিক কোন জায়গা থেকে নকল করলো৷

পৃথিবীতে অল্প কিছু জায়গা আছে যেখানে মেয়েদের ফিগার আসলেই এই মুর্তিগুলোর মতো৷ যেমন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন ট্রাইবের মেয়েদের ফিগার বেশ মিলে যায় এই ভিনাস ফিগারিন গুলোর সাথে৷ ২৫০০০ বছর আগে যারা ইউরোপে থাকতো তারা বঙ্গোপসাগরের আন্দামানের মেয়েদেরকে রোলমডেল হিসেবে নেয়ার একটাই কারন হতে পারে – ফ্রান্সের/অস্ট্রিয়ার তখনকার অধিবাসীরা আন্দামানের লোকের মতো দেখতে ছিল৷

এটাই খুব সম্ভব৷ ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আমরা যখন বের হয়েছিলাম তখন আমাদের চেহারা ছিল আফ্রিকার Khoisan বা আন্দামানের Pygmy Negrito দের মতো৷ আমাদের কেউ কেউ আন্দামানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল বলে বিবর্তিত হয়েছে কম৷ বাকীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে, ন্যাচারাল সিলেকশনের চাপে আজকের চেহারা পেয়েছে৷ আর বাংলাদেশে আজকে আমরা আসলে তাদেরই বংশধর, আন্দামানিজদের অনেক বৈশিষ্ট্যই আমাদের আছে, কালো চামড়া থেকে শুরু করে, মেয়েদের মোটা নিতম্ব কোনটাই ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্লভ নয়৷ ইউরোপে ক্রোম্যানিয়নরা শুরুতে আন্দামানের লোকের মতই দেখতে ছিল বলে ধারনা করা হয়, অন্তত ২৫/৩০ হাজার বছর আগে৷ তারপর পরিবেশের চাপে বিবর্তিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে৷ কিন্তু মুর্তিগুলো আর বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পায় নি, এজনই উইলেনডর্ফের ভিনাসের চেহারা আন্দামানের মেয়েদের মতো

ছবিঃ ইন্টারনেট
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×