somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নূহ নবীর কেচ্ছা, অন্যান্য কাহিনী এবং কিছু মন্তব্য

২৩ শে মার্চ, ২০০৬ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বদরুল ভাইয়ের লেখা পড়ে উৎসাহ পেলাম নূহ নবীর বন্যা নিয়ে আরও দু-চার কথা লেখার জন্য। কয়েক বছর আগে ডিসকভারি চ্যানেলে একটা প্রোগ্রামও দেখে ছিলাম এই বিষয়ের ওপর। কোরানের সাথে সাথে বাইবেলেও এই বন্যার বিশদ বিবরণ আছে। তবে কেবল কোরান বাইবেল নয় আরও কমপক্ষে শ'খানেক সংস্কৃতিতে কাছাকাছি কাহিনী প্রচলিত। বিবরণে পার্থক্য থাকলেও গল্পের মোটামুটি প্যটার্ণ একই, বিশ্বব্যাপি বন্যা, কাঠের জাহাজ, জাহাজ নির্মাতা তার সঙ্গি-সাথী ও অনেক জোড়া প্রানীর বেচে যাওয়া ইত্যাদি। কিছু কিছু কাহিনী কোরান বা বাইবেলের চেয়েও প্রাচীন। যেমন, ব্যবিলনের গিলগামেশ মহাকাব্যে যে কাহিনী আছে, এই কাহিনী অনুসারে গিলগামেশের সাথে উৎনাপিশতিম নামে এক বৃদ্ধের দেখা হয়, বৃদ্ধ তাকে এই কাহিনীটি বলে। "বহুকাল আগে দেবতারা উৎনাপশতিম কে জানায় যে ভয়াবহ বন্যা আসছে, এবং সে যেন নিজের বাড়ীটি ভেঙ্গে একটি বড় জাহাজ তৈরী করে, তারপর সমস্ত প্রানীর এক জোড়া করে এবং নিজের পরিবারকে জাহাজে ওঠার জন্য প্রস্তুত থাকে। জাহাজ তৈরী শেষ হওয়া মাত্র বৃষ্টি শুরু হয়, ছয় দিন-রাত ধরে বৃষ্টিতে সব কিছু ডুবে যায়, ... , বৃষ্টি শেষ হলে একসময় উৎনাপশতিম একটি ঘুঘু ছেড়ে দিয়ে দেখে পরীক্ষা করে কোন স্থলভাগ আছে কিনা, কিন্তু শুকনো জায়গা না পেয়ে ঘুঘু ফেরত আসে, এর কিছুদিন পর চড়ুই দিয়ে চেষ্টা করে উৎনাপশতিম তাও ব্যার্থ হয়, শেষমেশ র্যাভেন (কাক?) ছাড়ার পর যখন র্যাভেন আর ফেরত এলো না সে বুঝতে পারল, পানি শুকিয়ে গিয়েছে এবং দলবল সহ সে ডাঙ্গায় ফিরে এলো"। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত কাহিনীর নায়ক হচ্ছে "মানু" (মানু থেকে মানুষ, মানব শব্দের উৎপত্তি), মানুর গল্পও মোটামুটি একইরকম। চীনে একই গল্পের নায়ক "ফুহি" , এবং এ গল্প অনুসারে ফুহি থেকেই বর্তমান পৃথিবীর সব মানুষ এসেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই এই বিশ্ব ব্যাপি বন্যার ঘটনা সত্যি কি না, হলে কতটুকু। ধর্ম-অন্ধ হলে অবশ্য সত্য-অসত্য ব্যাপার না, ধর্ম গ্রন্থে যেহেতু আছে এর ওপর আর কোন প্রশ্ন করা চলে না। যাহোক কাহিনী চমকপ্রদ হলেও বাস্তবভিত্তিক দুর্বলতাগুলো বেশ প্রকট, এগুলো বোঝার জন্য বিজ্ঞানী হবার দরকার নেই, স্রেফ সাধারণ বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই হয়ঃ
- পৃথিবীতে স্থলচর প্রানী প্রজাতির সংখ্যা মোটেই 8-10 হাজার নয়, অনেক বেশী। পোকা মাকড় সহ হিসাব করলে তো আরও বেশী।
- সমস্ত প্রানী মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে না, তারা কি সবাই হাজার হাজার মাইল (যেমন দক্ষিন আমেরিকা থেকে) হেটে এসেছে?
- পেঙ্গুইন টাইপের প্রানীদের পক্ষে আরবের মরুভুমি দিয়ে হেটে আসা সম্ভব নয়, ওরা কিভাবে আসল। একই ভাবে ক্যাঙ্গারু কি অস্ট্রেলিয়া থেকে সাঁতরে এসেছে, অসম্ভব হওয়ারই কথা।
- সে আমলে রেফ্রিজারেটর ছিল না, এত প্রানীর খাবার কিভাবে 6 মাস সংরক্ষন করা হলো?
- এক জোড়া সিংহের জন্য ছয়মাসে অন্তত 10 জোড়া গরু দরকার, সেক্ষেত্রে তো মাংসাশী প্রানীদের খাবার জন্য আরও অনেক জ্যান্ত প্রানী জাহাজে থাকা দরকার।
- প্রানীকুল কি এই 6 মাস বংশবিস্তার থেকে বিরত ছিল (এত সংযমি হওয়ার কথা না)? না হলে খরগোশ ইদুরের মত প্রানীরা তো জাহাজ ভরে ফেলার কথা।
- মাত্র 80 জন লোক কিভাবে 16000 প্রানীর মলমুত্র পরিষ্কার করল।
- বন্যায় যেহেতু সব কিছু ডুবে গিয়েছিল, ধরে নেয়া যায় পানি ছিল লবনাক্ত, সেক্ষেত্রে 6 মাসে সমস্ত স্বাদু পানির মাছের তো মরে যাওয়ার কথা।
- উদ্ভিদ জগতের ব্যাপারটাও পরিষ্কার নয়, 6 মাস গভীর পানিতে অধিকাংশ গাছ মরে যেতে বাধ্য, সমস্ত গাছ বীজ থেকে জন্মায় না, এমনকি বীজ থাকলেও বীজের পক্ষে জাহাজ পর্যন্ত হেটে আসা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে গল্পের নায়ক নিশ্চয়ই কয়েক যুগ ধরে পৃথিবী ভ্রমন করে বীজ সংগ্রহ করেছেন, এই গুরুত্বপুর্ণ অংশ গল্পে অনুপস্থিত।
- এছাড়া এরকম কোন বিশ্বব্যাপী বন্যার জিওলজিকাল রেকর্ড নেই।
- পৃথিবীর সমস্ত গ্লেসিয়ার গলালেও এভারেস্ট সহ সব পর্বতমালাকে ডুবাতে পারে এত পানি হবে না।
- আবার বন্যা শেষে সেই পানি সরানোর স্থানই বা কোথায়।
... ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আসলে গল্পটা থেকে যা শিক্ষনীয় তা হলো কত সহজে আমরা বিচার বুদ্ধি হারিয়ে রুপকথাকে সত্য বলে মেনে নেই। তবে কাহিনী পুরোটাই মিথ্যে হয়ত নয়, প্রায় 7500 বছর আগে, এখন যেখানে ব্ল্যাক সী (তুরস্কের উত্তরে), ওখানে বড় আকারের বন্যা হয়েছিল (তাই বলে বিশ্ব ব্যাপি নয়), গত কয়েক বছরের প্রত্নতাত্তিক গবেষনা থেকে মনে হয় বেশ পরিমান জনবসতি পানিতে স্থায়ী ভাবে তলিয়ে গিয়েছিল, এই ঘটনাই সম্ভবত জনশ্রুতিতে কালক্রমে ফুলে ফেপে বন্যা কাহিনীর জন্ম দিয়েছে। আরও জানার জন্য এখানে দেখুন - http://www.pbs.org/saf/1207/features/noah.htm
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×