এখন প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই এই বিশ্ব ব্যাপি বন্যার ঘটনা সত্যি কি না, হলে কতটুকু। ধর্ম-অন্ধ হলে অবশ্য সত্য-অসত্য ব্যাপার না, ধর্ম গ্রন্থে যেহেতু আছে এর ওপর আর কোন প্রশ্ন করা চলে না। যাহোক কাহিনী চমকপ্রদ হলেও বাস্তবভিত্তিক দুর্বলতাগুলো বেশ প্রকট, এগুলো বোঝার জন্য বিজ্ঞানী হবার দরকার নেই, স্রেফ সাধারণ বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই হয়ঃ
- পৃথিবীতে স্থলচর প্রানী প্রজাতির সংখ্যা মোটেই 8-10 হাজার নয়, অনেক বেশী। পোকা মাকড় সহ হিসাব করলে তো আরও বেশী।
- সমস্ত প্রানী মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে না, তারা কি সবাই হাজার হাজার মাইল (যেমন দক্ষিন আমেরিকা থেকে) হেটে এসেছে?
- পেঙ্গুইন টাইপের প্রানীদের পক্ষে আরবের মরুভুমি দিয়ে হেটে আসা সম্ভব নয়, ওরা কিভাবে আসল। একই ভাবে ক্যাঙ্গারু কি অস্ট্রেলিয়া থেকে সাঁতরে এসেছে, অসম্ভব হওয়ারই কথা।
- সে আমলে রেফ্রিজারেটর ছিল না, এত প্রানীর খাবার কিভাবে 6 মাস সংরক্ষন করা হলো?
- এক জোড়া সিংহের জন্য ছয়মাসে অন্তত 10 জোড়া গরু দরকার, সেক্ষেত্রে তো মাংসাশী প্রানীদের খাবার জন্য আরও অনেক জ্যান্ত প্রানী জাহাজে থাকা দরকার।
- প্রানীকুল কি এই 6 মাস বংশবিস্তার থেকে বিরত ছিল (এত সংযমি হওয়ার কথা না)? না হলে খরগোশ ইদুরের মত প্রানীরা তো জাহাজ ভরে ফেলার কথা।
- মাত্র 80 জন লোক কিভাবে 16000 প্রানীর মলমুত্র পরিষ্কার করল।
- বন্যায় যেহেতু সব কিছু ডুবে গিয়েছিল, ধরে নেয়া যায় পানি ছিল লবনাক্ত, সেক্ষেত্রে 6 মাসে সমস্ত স্বাদু পানির মাছের তো মরে যাওয়ার কথা।
- উদ্ভিদ জগতের ব্যাপারটাও পরিষ্কার নয়, 6 মাস গভীর পানিতে অধিকাংশ গাছ মরে যেতে বাধ্য, সমস্ত গাছ বীজ থেকে জন্মায় না, এমনকি বীজ থাকলেও বীজের পক্ষে জাহাজ পর্যন্ত হেটে আসা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে গল্পের নায়ক নিশ্চয়ই কয়েক যুগ ধরে পৃথিবী ভ্রমন করে বীজ সংগ্রহ করেছেন, এই গুরুত্বপুর্ণ অংশ গল্পে অনুপস্থিত।
- এছাড়া এরকম কোন বিশ্বব্যাপী বন্যার জিওলজিকাল রেকর্ড নেই।
- পৃথিবীর সমস্ত গ্লেসিয়ার গলালেও এভারেস্ট সহ সব পর্বতমালাকে ডুবাতে পারে এত পানি হবে না।
- আবার বন্যা শেষে সেই পানি সরানোর স্থানই বা কোথায়।
... ইত্যাদি, ইত্যাদি।
আসলে গল্পটা থেকে যা শিক্ষনীয় তা হলো কত সহজে আমরা বিচার বুদ্ধি হারিয়ে রুপকথাকে সত্য বলে মেনে নেই। তবে কাহিনী পুরোটাই মিথ্যে হয়ত নয়, প্রায় 7500 বছর আগে, এখন যেখানে ব্ল্যাক সী (তুরস্কের উত্তরে), ওখানে বড় আকারের বন্যা হয়েছিল (তাই বলে বিশ্ব ব্যাপি নয়), গত কয়েক বছরের প্রত্নতাত্তিক গবেষনা থেকে মনে হয় বেশ পরিমান জনবসতি পানিতে স্থায়ী ভাবে তলিয়ে গিয়েছিল, এই ঘটনাই সম্ভবত জনশ্রুতিতে কালক্রমে ফুলে ফেপে বন্যা কাহিনীর জন্ম দিয়েছে। আরও জানার জন্য এখানে দেখুন - http://www.pbs.org/saf/1207/features/noah.htm
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০