somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিকাশ ও তাদের জালিয়াতি; শুক্রবার এবং ওয়াক টু রিমেমবার

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোবাইলে রিচার্জ করা যায় বিকাশের মাধ্যমে, এয়ারটাইম কিনে। খুব সুন্দর একটি ব্যবস্থা সন্দেহ নেই। কিন্তু এর ভোগান্তি কম নয়। আমাকে এমন ভোগান্তির মধ্যে বেশ কয়েকবার পড়তে হয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় বিকাশ থেকে জিপিতে রিচার্জ করলাম **টাকা। সাধারণত ফ্লাক্সি'র দোকানে গিয়েই করি। আজ কী মনে করে করলাম।
মসিবতটা হলো, বিকাশ থেকে টাকা কাটল ঠিকই কিন্তু সিমে কোন টাকা আসলো না।
জিপি হেল্পলাইনে ফোন দিলাম। বলল, "এটা আমাদের কোন প্রবলেম নয়, আপনি বিকাশ হেল্পলাইনে জানান ব্যাপারটা। এর জন্য জিপি কোন ভাবেই রেস্পনসিবল নয়।"
তাই করলাম। ২/৩ টাকা প্রতি মিনিট রেটে যোগাযোগ করলাম বিকাশ হেল্পলাইনের সাথে।
"বলুন স্যার আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?"
মেজাজটা খিচড়ে গেল। তারা হেল্প করার জন্য মুখিয়ে আছে বটে, তবে এজন্য পকেটের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে আমার।
"আমি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। সেটা সলভ করে হেল্প করুন।"
"স্যার, আপনার সমস্যাটা বলুন।"
"আমি বিকাশ থেকে মোবাইলে রিচার্জ করলাম কিন্তু সিমে তো টাকাটা অ্যাড হলো না। ব্যাপারটা কী?"
"আমরা অন্তন্ত দুঃখিত, স্যার। তবে এটা আমাদের কোন প্রব্লেম নয়। আমরা আপনার টাকাটা দিয়েছি, টাকাটা কেটেও নেয়া হয়েছে তাই। আপনি বরং আপনার মোবাইল অপারেটরের সাথে যোগাযোগ করুন! তারাই এব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।"
*দনা হয়ে গেলাম।
ভাবছি, ব্যাপারটা তারানা হালিমকে কীকরে জানাই। তিনি তো এখন পর্ন সাইটে মগ্ন আছেন আই মিন পর্ন সাইট নিয়ন্ত্রন, সাইট ভিজিটরদের নাম প্রকাশ ইত্যাদিতে। এসব বিষয় তার প্রতক্ষ করার টাইম কোথায়?

শুক্রবারের দিনটা আমার জন্য প্রচন্ড অস্বস্তির। অন্তত একজন হলেও জিজ্ঞেস করে, নামাজে যাবো কিনা সে ব্যাপারে। আমি সাধারণত প্রশ্নটা এড়িয়ে যাই। যাবো না, কেন যাবো না- এসব বলাটা মোটেও সেইফ নয়, সুখকর তো নয়ই। বেশিরভাগ সময় তর্ক লেগে যায়, এমন অনেক বিষয় এসে যায়, যেসব নিয়ে মুখ খুলতে চাই না। এই যে ব্লগে ফেসবুকে নাস্তিকতা নিয়ে লিখছি বা লিখছি স্যাটায়ার- সবই তো ছদ্মনামে। মুক্তচিন্তার কথা বলে কোপ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকার ইচ্ছে নেই মোটেও।
নি* তাই খোটা দিতে ছাড়ে না। "তুমি অনলাইনে তো বিশাল বাঘ। আর বাস্তবে বিড়ালের মত লেজ গুটিয়ে থাকো। ব্লগের ফেসবুকের জ্বালাময়ী লেকচারগুলো মানুষকে শোনাতে পারো না?"
আমি যে আসলেই বিড়াল, ভীতু- সেটাই আরেকবার প্রমাণ করে তার অভিযোগে চুপচাপ থাকি।
আমার এক বড় ভাই ছিলেন। রিলেশনশিপ নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান। যদিও তিনি নিজে সেসব বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারেননি, দুর্ভাগ্যবশত। প্রেমিকা জোটানোর আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তবে, আমরা, তার প্রাণপ্রিয় ছোট ভাইয়েরা, যাতে কোন সমস্যায় না পড়ি, এনিমিত্তে তিনি ছিলেন প্রচন্ড তৎপর। একদিন চা হাতে সিগারেট টানতে টানতে বলেছিলেন, "গফের সামনে সবসময় সিনা টান করে থাকবি। ভাবটা এমন যে তুই সুপারম্যান। নাহলে গফ তোকে দিয়ে হ্যান্ডব্যাগ বইয়ে নেবে।"
তার উপদেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। গফ যখন বলে, "ঐ ছেলেটা না আমার পিছু নিছে"; আমি তখন বুকের ছাতি ফুলিয়ে বলি, "পারলে ওর একটা ছবি তুলে নাও ফোনে, আমাকে পাঠাও- দেখ ওর কি হাল করি। পুরা **** শহরে ওকে বাঁচাবে এমন কেউ পয়দা হয় নাই।" বলাবাহুল্য, গফ ছেলেটার পিক আমাকে পাঠায় না। আর আমিও আমার সুপারহিউম্যানিটি দেখানোর সুযোগ পাই না। তবে যখনই ও বাস্তব জীবনে ভার্চুয়াল লাইফের মতো আস্তিক নাস্তিক, ধর্ম নিয়ে কথা বলতে বলে, তখন আমি নিজের স্বরুপে প্রত্যাবর্তন করি।
বিড়াল হয়ে যদি বেঁচে থাকা যায় তবে বিড়ালই ভালো!
আজও শুক্রবারের দিন। মেসের সবাই নামাজে যাচ্ছে- আমি গোসলের আগে রোদে ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে পেপার পড়ছি। শীতের রোদ- প্রেমিকার ঠোটের চাইতেও আদুরে। দেখলাম- আসিফ নজরুল প্রথম আলোতে লিখেছেন আজ। জিয়াকে নিয়ে। যে লোকটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব অবদানকে একে একে মুছে ফেলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল, তাকে আসিফ সাহেব মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক ইত্যাদি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করেছেন। সার্কাস্টিক। ভাবছিলাম, একজন বুদ্ধিজীবি কতটা নষ্ট হলে, আজ বিজয়ের দিনে, এমন লেখা লিখতে পারে।
কিছুক্ষণ পর পাশে এক মেসমেট এলো। নামাজে যাবে-ওজু করে এসেছে। জিজ্ঞেস করলো, "কীরে নামাজে যাবি না আজও?
জবাব না দিয়ে পত্রিকায় চোখ রাখলাম। চোখ বুলিয়ে নিলাম আবারও পুরো পত্রিকাটায়। দুতিন মিনিট পর চোখ তুলে দেখি সে যায়নি। তার চোখ পাশের ফ্লাটের ছাদে। কয়েকজন বিবাহিত মহিলা কাপড় শুকাতে এসেছেন।
বললাম, "ওজু করার পরও এভাবে দেখছিস? অকারণে কী আর বলে, শকুন যতই উপরে উঠুক চোখ থাকে মরা গরুর দিকে?"
হাসল একটু। বলল, "আরে, আমি তো বোনের দৃষ্টিতে দেখছিলাম। সে আমার বড় বোন। বড় শ্রদ্ধার বড় বোন!"
আমি আবার বেকুব বনে গেলাম।

A walk to remember নামের একটা ৪০০ পৃষ্ঠার novel পড়লাম নিকোলাস স্পার্কসের। লুতুপুতু প্রেমের গল্প। একজন প্রেমে পড়ল, দুরুদুরু বুকে বলল, প্রেম করলো কিছুদিন, তারপর চুমু, ঘোরাঘুরি, ডিনার। আচমকা একদিন নায়িকা বললো, সে আর বাঁচবে না, তার লিউকোমিয়া আছে, অতঃপর নায়িকা মরে গেল, নায়ক বিধবা হলো আই মিন একা হয়ে গেল। গল্প শেষ!
গুগোল করে দেখলাম, এটা নাকি new York times এর বেস্টসেলার লিস্টে ছিল কয়েকবছর। গুডরিডসেও করেছে সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। বুঝলাম না, আমেরিকানরা এই গল্প গিলল কীকরে! গোটা বইটায় শুধু একটা জিনিসই চোখে পড়ার মতো। সেটা হলো, নায়িকাকে মেরে ফেলতে লেখকের অদম্য প্রচেষ্টা! এই যুগে অন্তত আমেরিকার মত জায়গায় লিউকোমিয়ায় মরার প্রব্যাবলিটি খুব কম। "তাই সে রোগে ভুগে মৃত্যু"- ব্যাপারটাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য লেখক পঞ্চাশের দশককে করেছেন পটভূমি। সোজা কথা, নায়িকাকে মরতেই হবে যেভাবেই হোক!
অবশ্য বইটার পজিটিভ দিক যে নেই, তা নয়। নিষ্পাপ হিউমর আছে মাঝেমাঝে। লতাপাতা টাইপের। এটুকু না থাকলে বইটাকে স্রেফ জঞ্জালের কাতারে ফেলা যেত অনায়াসে। যেমন, ক্রিসমাসের জন্য একটা নাটকের আয়োজন করা হয়েছে। সে নাটকে কথককে(নায়ক) দেয়া হয়েছে প্রধান চরিত্র। কিন্তু দুইতিন হপ্তা রিয়ারসেলের পরও সে তার পাট মুখস্ত করতে পারেনি। সে-নাটকে একটা বোবার চরিত্রও ছিল। একসময় ল্যানডন(প্রধান চরিত্র) বলেই ফেলে, "The only lines I knew were the mute bum's"
এদিকে ভারতের ন্যাশনাল বেস্টসেলার একটা হাতে আছে। I too had a love story, Ravindar Singh। সেটার গল্পও সেইম। প্রেম করবে, নায়িকা মরে যাবে আর নায়ক দেবদাস হয়ে স্মৃতিচারণ করবে!
কী ট্রাজিক!
আর দেখুন পাঠকেরাও কত কোমলমতী! তারা লেখকদের মৃত প্রেমিকাদের জন্য হাপুস নয়নে কাঁদার জন্য উদ্বাহু হয়ে আছে। তারা 'I've cried for about an hour after finishing this book' টাইপ প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিল। আর বইগুলো হয়ে গেল রীতিমতো বেস্টসেলার।
সামারসেট মম একবার বলেছিলেন, "একটা ভালো উপন্যাস লেখার তিনটা কৌশল আছে। দুর্ভাগ্য যে, কেউই সে কৌশলগুলো আবিষ্কার করতে পারেনি।" তবে কীকরে পাঠকপ্রিয় নন্দিত লেখক হওয়া যায়, এ কৌশল আবিষ্কার করেছেন অনেকেই। নিকোলাপ স্পার্কস হয়তো তাদের মধ্যেই কেউ একজন। তার কাছ থেকে তাই কীকরে বেস্টসেলার হওয়া যায় সেটা শিখে নেয়া যেতেই পারে। আমার শিক্ষা হলো- "যদি কোনদিন ভুল করেও উপন্যাসটুপন্যাস লিখি, আর যদি তা হয় প্রেমের, তবে সেখানকার নায়িকার মৃত্যু সুনিশ্চিৎ। দরকার হলে, নায়িকাকে এইডসের রোগী বানাবো! বেস্টসেলার হতেই হবে যেকোন উপায়ে।"
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৫
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×